ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

অস্বাস্থ্যকর ইফতারিতে ঐতিহ্য হারানোর আশঙ্কা

নাসির উদ্দিন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২১ জুন ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অস্বাস্থ্যকর ইফতারিতে ঐতিহ্য হারানোর আশঙ্কা

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : রমজান মাসে রকমারি সামগ্রী দিয়ে ইফতার না করতে পারলে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। কিন্তু ইফতার-সামগ্রীর নামে কী খাচ্ছি বা এই ইফতারি তৈরি হচ্ছে  কীভাবে, তা আমরা কখনো চিন্তা করছি না।

 

রাজধানীর চকবাজারের ইফতারির সুনাম রয়েছে পুরো দেশ জুড়ে। চকবাজারের ইফতারির কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অনেক লোভনীয় ও আকর্ষণীয় খাবার। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও ভেজাল দ্রব্যাদি দিয়ে তৈরির ফলে পুরান ঢাকার ইফতারি তার শত শত বছরের ঐতিহ্য হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার ইফতারি তৈরি করা হচ্ছে খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। চকবাজারের অধিকাংশ ইফতার-সামগ্রীর দোকান গড়ে উঠেছে ময়লার ড্রেনের ওপরে এবং যারা এ ইফতারি তৈরি করছেন, তারা সম্পূর্ণ অপরিষ্কার ও খালি হাতে এগুলো তৈরি করছেন।

 

‘বড় বাপের পোলায় খায়’ পুরান ঢাকার ইফতারির মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। প্রায় ৩৬ ধরনের সামগ্রী ও ১৬-১৮ ধরনের মশলা দিয়ে তৈরি হয় এই মুখরোচক ইফতারিটি। কিন্তু এটি তৈরি করার সময় বিক্রেতারা ক্রেতার স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় না রেখে খালি হাতেই একসঙ্গে সব সামগ্রী মিশ্রিত করেন। সেটিও আবার খোলা স্থানে। খোলা স্থানে রাখায় অবাধে উড়ে এসে পড়ছে ধুলোবালি।

 

এ ছাড়া জিলাপিও তৈরি করে রাখা হচ্ছে খোলা স্থানে। জিলাপি ভাজার পরে যে পাত্রে শিরা মিশ্রিত করা হয়, সে পাত্রও রাখা হয় রাস্তার কাছাকাছি খোলা অবস্থায়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চকবাজারের ইফতারি বিক্রির এক কর্মচারী বলেন, ‘জিলাপি ভাজার পরে আমরা যে মিষ্টির পাত্রে জিলাপি ভিজিয়ে ওঠাই, তা কয়েক দিন আগে থেকেই তৈরি করা। কারণ প্রতিদিন তো শিরা তৈরি করা যায় না। আর যা তৈরির পর থেকে যায়, তা ফেলে দেওয়া যায় না। তাতে দোকান-মালিকের অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই বাসি শিরা গরম করে আবার তার মধ্যে জিলাপি ভেজানো হয়।’

 

তবে কয়েকটি দোকান ইফতার-সামগ্রী পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করছে বলে জানান তিনি।

 

এ ছাড়া গুলিস্তানের ইফতারির বাজারও বেশ জমজমাট। এখানেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সবকিছু। প্রতিবছর রোজার শুরুতে গুলিস্তানে নানা রকম ইফতারির পসরা সাজিয়ে ফুটপাতে অনেক দোকান বসে। ভাজাপোড়া বিভিন্ন আইটেমের পাশাপাশি বিভিন্ন বনজ গাছের শরবতের ভিন্ন আয়োজন থাকে এখানে। বিক্রি হয় কাটা ফল ও ফলের জুস। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হলেও ক্লান্ত রোজাদাররা এক গ্লাস শরবতের জন্য লাইন দেন দোকানগুলোতে। গুলিস্তানের ইফতারির বাজারের প্রধান ক্রেতা বিভিন্ন গন্তব্যমুখী বাসযাত্রী ও সাধারণ পথচারী।

 

গুলিস্তানের মাজার রোড, আওয়ামী লীগ অফিসের আশপাশ, হলবাজার, বঙ্গবাজার, জিপিও থেকে শুরু করে স্টেডিয়াম রোডে শত শত মৌসুমি ইফতারির দোকান। এসব দোকানে দুপুরের পর থেকেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নানা রং ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হয় ইফতারির নিয়মিত আইটেম।

 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, খেজুরেই মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। পচনের হাত থেকে রক্ষা করতেই নাকি এই ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইফতারির আরেকটি প্রধান উপকরণ হচ্ছে মুড়ি। আর এই মুড়িকে বেশি সাদা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড। আর মুড়ির দানাগুলো বড় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইউরিয়া সার।

 

ভাজাপোড়া, যেমন- পেঁয়াজু, বেগুনি ও আলুর চপে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন বিষাক্ত রং, যা ব্যবহার করা হয় কাপড়ে রং করতে। এ ছাড়া আগের দিনের বাসি হালিম বিক্রি করা হচ্ছে পরের দিনও।

 

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রকমারি এসব ভেজাল ইফতারি আমাদের পেটের নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- গ্যাস্ট্রিক, আলসার, বদহজম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিভার, কিডনি, ব্রেন, হার্টসহ দেহের অন্যান্য অঙ্গও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

 

ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও ঢাকা সিটি করপোরেশন। কিন্তু রমজান উপলক্ষে ভেজালবিরোধী তৎপরতা বাড়ানো হলেও কমেনি খাদ্যে ফরমালিন, বিষাক্ত কেমিক্যাল ও রং মেশানোর পরিমাণ।

 

সাধারণ মানুষের মতে, এসব প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা, অদক্ষতা ও জনবলসংকটের কারণে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না ভেজাল খাবার তৈরি ও বিক্রি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুন ২০১৫/সাইফুল/কমল কর্মকার

 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়