ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রুপালি জগতের জয়ললিতা

গোবিন্দ তরফদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রুপালি জগতের জয়ললিতা

জয়রাম জয়ললিতা

গোবিন্দ তরফদার : ভারতের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম জয়ললিতা। ৬৮ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে  গতকাল রাতে ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি।

 

জয়রাম জয়ললিতা তার অনন্য প্রতিভার দ্বারা ‘কাভারচি কান্নি’ খেতাভ লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে ‘পুরাতছি থালাইভি আম্মা’ যার অর্থ ‘প্রতিবাদী নেত্রী’র উপাধি লাভ করেন।

 

রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে সিনেমা জগতে কাজ করেছেন জয়ললিতা। ১২০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তামিল, তেলেগু, হিন্দি, কন্নড় এমনকি ইংরেজি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন জয়ললিতা। তার সময়ে অন্যতম প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী ছিলেন তিনি।

 

রুপালি জগতে পা রাখার কোনো ইচ্ছায় ছিল না জয়ললিতার। আইনজীবী হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার ভাগ্যে ছিল অন্যকিছু। তার মায়ের ইচ্ছাতে আস্তে আস্তে তিনি তামিল সিনেমা জগতে পরিচিত হতে থাকেন। তবে তার আগে তিনি নাচ এবং নাটকের দলের ছোট ছোট খন্ড চরিত্রে অভিনয় করতেন। কাকতালীয়ভাবে তিনি কান্নড় সুপারস্টার রাজকুমার এর শ্রী শাইলা মাহাথমে সিনেমাতে শিশু শিল্পী হিসেবে একটি গানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান।

 

এর কয়েক বছর পরে ১৯৬১ সালে তিনি এপিস্টেল সিনেমাতে প্রধান নারী চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পান। এটা তার জীবনে একমাত্র ইংরেজি সিনেমা। এই সিনেমার অর্থায়ন করেছিলেন ভারতের নাবেক রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরির ছেলে শঙ্কর গিরি। সিনেমাটি কয়েক বছর পরে ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। এমনকি প্রেক্ষাগৃহেও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।

 

মাত্র ১৫ বছর বয়সে একটি ব্লকবাস্টার হিট কন্নড় সিনেমায় অভিষেক ঘটে জয়ললিতার। সিনেমাটির নাম ছিন্যদা গোম্বে। সিনেমাটির প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছিলেন বি.আর. পান্থুলু। তার এই সিনেমার সাফল্য দেখে তার মা, ভেদাভাল্লি অর্থাৎ সন্ধ্যা, যিনি নিজেও অভিনেত্রী ছিলেন, তাকে অভিনয়টাকে পেশা হিসেবে নেয়ার পরামর্শ দেন যাতে করে তিনি পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারেন।

 

জয়ললিতা ১৯৪৮ সালে কর্ণাটকের মান্দ্যা জেলায় একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার স্কুল জীবনে শুরু হয়েছিল ব্যাঙ্গালুরুতে। এরপরে তিনি তার মার সাথে চেন্নাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। ওই সময় তার বয়স ছিল ১০।

 

 

তিনি ছিলেন মূলত তামিল সিনেমার অভিনেত্রী। কিন্তু তার জন্ম কর্ণাটকে হওয়ায় এটা নিয়ে একটা বেশ বড় ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। ‘কান্নড়িগা গার্ল’ নামক কন্নড় অঞ্চলের এক বিশেষ পোশাক পরতে না চাওয়ায় একটি সংগঠনের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে।

 

এই ঝামেলাটাকে আরো উস্কে দিয়েছিল তিনি যখন একটি তামিল ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তিনি কানাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন কন্নড় ভাষায় অবলীলায় কথা বলতে পারেন কিন্তু তিনি তামিলে বড় হয়েছেন তিনি একজন তামিলিয়ান। এই মন্তব্য কন্নড় সংগঠনগুলো মোটেও ভালো ভাবে নেয়নি। পরবর্তীতে তিনি যখন কানাড়ার প্রিমিয়ার স্টুডিও মাইসুরুতে একটা কন্নড় সিনেমার রিমেক ‘গঙ্গা গৌরি’র  শুটিং করতে গিয়েছিলেন সেখানে তাকে একটি সংগঠনের কর্মীরা আক্রমণ করে।

 

এই আন্দোলনটি, ‘কানাড়া ছালুভালি ভেতাল’ দলের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ভটান নাগরাজ।  তাদের দাবি ছিল জয়ললিতা যেন ক্ষমা চায়। কিন্তু জয়ললিতা সেটা করেননি। পরে তারা সিনেমার শুটিং বন্ধের দাবি জানায় এবং তাকে কানাড়া থেকে চলে জেতে বলেন। এলাকায় তার নামে পোস্টারিংও করা হয়। এই ভাবে তিনি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে পড়েন।

 

আস্তে আস্তে তিনি তামিল, কন্নড় এবং তেলেগু সিনেমাতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বেশ কিছু খ্যাতনামা চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে নেন তিনি। ১৯৭৩ সালে তার ‘সুরায়াগান্ধি’ চরিত্র সকলের মন জয় করে নিয়েছিল। এই সময় তার সাথে নায়কের ভূমিকায় ছিলেন আর মুথুরামান।

 

তিনি শুধু একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নন বরং ভালো উপার্জনক্ষম নারীতে পরিণত হয়েছিলেন। পরিবারের পাশাপাশি তার স্বামীর পরিবারেও খরচ যোগান দিতেন তিনি। কারণ তার স্বামী তার থেকে কম উপার্জন করতেন।

 

 

তিনি প্রমাণ করেছিলেন নারীদের কাজ শুধু রান্নাঘরের চুলা জ্বালানো নয়। তিনি নারী জাগরনের জন্য অনেক সিনেমা করেছেন। এর মধ্যে ১৯৭০ সালে সুপারস্টার শিবাজির সাথে এনগিরুন্ধো ভান্ধাল সিনেমাটি সবচেয়ে সারা জাগিয়েছিল। এছাড়া তিনি কমেডি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। গালাট্টা কালাইয়ানাম তার একটি কমেডি সিনেমা। এখানেও শিবাজি গানেশান তার বিপরীতে কাজ করেছিলেন। শিবাজি আর জয়ললিতা জুটি বেশ কিছু ধামাকাদার সিনেমা উপহার দিয়েছিল। এর মধ্যে সাভালে সামালি (১৯৭১), দেইভা মাগান (১৯৬৯), সুমাথি এন সুন্দারি (১৯৭১) উল্লেখযোগ্য।

 

বি.আর. পান্থালুর আইরাথিল অরুভান (১৯৬৫) জয়ললিতাকে সুপারস্টার বানিয়ে দিয়েছিল। সিনেমাটির নায়ক এম.আর. জি প্রথমে জয়ললিতার সঙ্গে কাজ করতে রাজি ছিলেন না। কারণ তিনি ওই সময় অনেক ছোট ছিলেন। তার সাথে জয়ললিতাকে মানাবেনা এমনটা ভেবেই না করেছিলেন। কারণ তাদের বয়সের অনেক ফারাক যেটা মানানসই মনে হচ্ছিলনা তার। কিন্তু নির্মাতার কথায় তিনি রাজি হয়ে যান আর এই সিনেমাটি পুরো তামিল মুভি ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে আজ অবধি একটি হিট সিনেমা। এরপরে এম. আর. জে এবং জয়ললিতা আরও ২৮টা সিনেমা করেন। যেগুলো ‘এভারগ্রীণ’ সিনেমা হিসেবে খ্যাত। এর মধ্যে, নাম নারু (১৯৬৯), রামান থেডিয়া সিথাই (১৯৭২), এন আন্নান (১৯৭০) অন্যতম। পরবর্তীতে শোনা যায় এম.জি.আর জয়ললিতার ব্যপারে অনেক একগুয়ে ছিলেন। তিনি জয়ললিতাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। 

 

জয়ললিতা ১৯৮২ সালে ‘এআইএডিএমকে’ তে যোগ দান করেন এবং এভাবেই তিনি তার সিনেমা জগতের প্যাক আপ করেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ডিসেম্বর ২০১৬/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়