ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আমি বাজারি সিনেমা বানাচ্ছি না: টোকন ঠাকুর

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৬, ১৭ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমি বাজারি সিনেমা বানাচ্ছি না: টোকন ঠাকুর

আমিনুল ইসলাম শান্ত : কবি ও চিত্রপরিচালক টোকন ঠাকুর। শহিদুল জহিরের ছোটগল্প ‘কাঁটা’ অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করছেন ‘কাঁটা দ্য ফিল্ম’। দয়াগঞ্জে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন স্মৃতি ভবনে সিনেমাটির সেট ফেলেছেন এই নির্মাতা। শুধু এ বাড়িই নয় আরো চারটি জায়গায় সেট নির্মাণের কাজ চলছে।

সিনেমাটিতে ২৫০জন শিল্পী অভিনয় করবেন। খুব শিগগির সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে। ‘কাঁটা দ্য ফিল্ম’ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন টোকন ঠাকুর। এ আলাপচারিতার অংশবিশেষ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।  

রাইজিংবিডি : চিত্র নির্মাণে শহিদুল জহিরের ‘কাঁটা’ ছোটগল্পটিকে বেছে নিলেন কেন?
টোকন ঠাকুর :
আমি শহিদুল জহিরের লেখার ভক্ত। তার যেকোনো ধরণের লেখা আমার অনেকবার করে পড়া। ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’, ‘মুখের দিকে দেখি’, ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’, ‘ডুমুরখেকো মানুষ ও অন্যান্য গল্প’, ‘ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প’ এসব উপন্যাস ও ছোটগল্প আমার একাধিকবার পড়া। সিনেমা বানানোর নেশায় ছিলাম, আছি। সমগ্র বিশ্বেই সংখ্যালঘুরা নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার। যে যেখানে সংখ্যালঘু সে সেখানেই উৎপীড়নের শিকার। এই সত্য শহিদুল জহিরের ‘কাঁটা’ গল্পে আছে। আমার মনে হলো মিয়ানমারের মুসলিম ভাই-বোনেরা চারশ বছরের জীবনযাপন ছেড়ে চলে আসছে। মিয়ানমারের কোনো বৌদ্ধকে কোথাও যেতে হয়নি। রামুতে বৌদ্ধরা আক্রান্ত হলো-এসব তো ঘটছেই। এসব বিষয়ে প্রত্যেকের মতো আমারও সামাজিক সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ‘কাঁটা’ গল্পটা সুন্দর। গল্পটিতে ১৯৬৪, ১৯৭১, ১৯৯০ সালের প্রেক্ষাপট রয়েছে। কি হিন্দু, কি মুসলমান, কি বৌদ্ধ যেখানেই সংখ্যালঘু সেখানেই এই গল্পটি নিয়ে আমি দাঁড়াতে চাই।

রাইজিংবিডি : শহিদুল জহির আপনার প্রিয় লেখক এবং গল্পটি আপনার পছন্দের। কিন্তু চলচ্চিত্র বড় একটি ক্যানভাস। এক্ষেত্রে এই গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে কতটা সফল হতে পারবেন বলে মনে করছেন?
টোকন ঠাকুর :
এখন চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে রয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান পাওয়ার পর গত সারে চার বছর ধরে চিত্রনাট্য ডেভেলপ করতে করতে একটি লেয়ারে নিয়ে গেছি। যা সিনেমাটির ব্যাকগ্রাউন্ড টিম, আর্টিস্ট টিমের সঙ্গে শেয়ার করছি। ২০১৮ সালে এটি একটি ভালো সিনেমা হবে। অর্থাৎ এ বছর বিশ্বে যত সিনেমা নির্মিত হচ্ছে- তার মধ্যে আমিও একটি সিনেমা বানাচ্ছি। আর সে ভাবনা নিয়েই কাজ করছি। সিনেমা বানানো শেষ না হওয়ার আগে তো বলা যাবে না, বানানোর পরে বলতে পারব আমরা কতটা পেরেছি বা  বাস্তবতার নিরিখে ও বাজেটের আলোকে টিম কতটা পেরেছে। সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। চিত্রনাট্য লেখার সময় আমি একাই লিখেছি কিন্তু নির্মাণের সময় ২৫০জন লোক কাজ করছে। কাজটি কেমন হলো তা আসলে নির্মাণের পরই বোঝা যাবে। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী।

রাইজিংবিডি : সিনেমাটির জন্য অডিশনের মাধ্যমে ২৫০জন নতুন মুখ চূড়ান্ত করেছেন। শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই পথ অবলম্বন করলেন কেন?
টোকন ঠাকুর :
কারণ সিনেমাটির গল্পে তিনজন সুবোধচন্দ্র দাস, তিনজন স্বপ্নারাণী দাস আছে। ১৯৬৪, ১৯৭১ এবং ১৯৯০ সালে এই তিন দম্পতি একটি বাড়িতে বসবাস করে। মহল্লাবাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তারা ওই বাড়িটির একটি কূপে আত্মহত্যা করে। আমি কোনো পরিচিত লোককে সুবোধচন্দ্র বানাতে চাইনি।

রাইজিংবিডি : একদম অপরিচিত মুখ নিয়ে কাজ করছেন। এটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেল না?
টোকন ঠাকুর :
সিনেমা নির্মাণ ব্যাপারটাই ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের মতো দেশে বসে সিনেমা নির্মাণের ইচ্ছেটাই ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষের বেঁচে থাকাটাই ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া বর্তমান সময়ে তারকাদের উপর আমার কোনো ভরসা নাই। তারকাদের নিয়ে সিনেমা বানানোটাই আমি খুব অপছন্দ করি। তারা কোনো না কোনোভাবে পুঁজির সিনেমা, বাণিজ্যিক সিনেমা, ফর্মুলার সিনেমার ক্ষেত্রে যায়। ‘কাঁটা’ কোনো প্রণিত প্রণয়নের সিনেমা নয়। আমার ইচ্ছে একটি শালিক পাখি দিয়ে অভিনয় করানোর। সেখানে আমি শালিক পাখিই নেব। কেউ আমাকে কোকিল সাধলে আমি নেব না। আমার টিয়া দরকার টিয়া নিয়েছি, কবুতর দরকার কবুতর নিয়েছি, বিড়াল দরকার বিড়াল নিয়েছি। এজন্য আমি তারকা না নিয়ে আমার প্রয়োজন অনুযায়ী ২৫০ জন নতুন মুখ নির্বাচন করেছি। যাদেরকে এই সিনেমায় গাঁথার চেষ্টা করা হচ্ছে। তা ছাড়া এতে এমন কজন অভিনয়শিল্পী রয়েছেন যারা আগে কখনো অভিনয় করেননি। এটা একটা ভালো লাগা। তা ছাড়া আমি বাজারি সিনেমা বানাচ্ছি না।

রাইজিংবিডি : এই নতুন শিল্পীদের কীভাবে তৈরি করছেন?
টোকন ঠাকুর :
নয়শ শিল্পীর মধ্যে ২৫০জন শিল্পী নির্বাচন করে গত সাত মাস ধরে রিহার্সেল করিয়েছি। কোন চরিত্রে কাকে অভিনয় করানো যায় সে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছি। রিহার্সেল করতে করতে চরিত্রের বদল হয়েছে। কে কতটা মনোযোগী, কে কতটা সিনেমা করতে উৎসাহী, কে কতটা তারকা হতে উৎসাহী, কে কতটা সিনেমাকে ভালোবাসে এবং ‘কাঁটা’ সিনেমার নির্মাণব্রতকে রক্ষা করে কারা কতটা মনোযোগী- এই সবের ভেতর দিয়ে ২৫০জন অভিনয়শিল্পীকে গড়েছি। তারা সেটে আছি ১ মাসের বেশি সময় ধরে। সেটে বসে তাদের সঙ্গে কথা বলছি। আমার জানা মতে, গত ৩০ বছরের মধ্যে এভাবে কাউকে সিনেমা নির্মাণ করতে দেখিনি। এদেশে আমার বন্ধুরা অনেক বড় বড় সিনেমা নির্মাতা। তাদের সিনেমা বানানো দেখেছি। তারা এখনো সিনেমা বানাচ্ছে। তারাও ভালো করছে। একটি টিম নিয়ে, শহিদুল জহিরকে নিয়ে, পুরান ঢাকার ভূতের গলি নিয়ে এবং একটি বিভ্রান্ত মহল্লাবাসীকে নিয়ে একটি জার্নিতে আছি। যা নিয়ে একটি জায়গায় পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। এই জার্নির নাম ‘কাঁটা দ্য ফিল্ম’।

রাইজিংবিডি : সিনেমার গল্পে ১৯৬৪, ১৯৭১ এবং ১৯৯০ সালের প্রেক্ষাপট রয়েছে। সেট নির্মাণের ক্ষেত্রে এটা কীভাবে করছেন?
টোকন ঠাকুর :
এক্ষেত্রে ষোল আনা পূরণ করার চেষ্টা করছি। আমাদের গল্পের বাস্তবতাই হচ্ছে ১৯৮৯-৯০, ১৯৬৪, ১৯৭১ সাল। ২০১৮ সালে দাঁড়িয়ে আমরা ওই সময়কে নির্মাণের চেষ্টা করছি। প্রথমত ১৯৬৪ সালের লুকটি বের করার চেষ্টা করছি। ওটার উপরই ১৯৭১, ১৯৮৯-৯০ এর প্রলেপ দিব। ধ্রুব এষ, মাহমুদুর রহমান দীপন, তন্ময়সহ চারুকলার একদল শিল্পী ‘কাঁটা’ গল্পের প্রয়োজন মেটাতে আর্টিস্ট হিসেবে রাত দিন কাজ করছেন। তা ছাড়া আমি নিজেও চারুকলার শিক্ষার্থী ছিলাম।   

রাইজিংবিডি : সিনেমাটি প্রদর্শনের বিষয়ে কী পরিকল্পনা করেছেন?
টোকন ঠাকুর :
সিনেমাটি আমি মানুষকে দেখাতে চাই। সিনেমা হল ভাড়া করে দেখানোর পথ তো চালু রয়েছেই। এছাড়া অনলাইন হাঁট রয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে আমি সিনেমাটির প্রযোজক। সিনেমাটি আমি কোথাও বিক্রি করিনি। যেকোনো জায়গায় এ সিনেমাটি আমি প্রজেক্টর কিংবা হল ভাড়া করে দেখাতে পারব। সিনেমা হলে মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে এক ধরণের সিনেমা দেখে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সে ধরণের শর্ত পূরণ না করে সিনেমা বানালে হল মালিকরা সেসব সিনেমা নেয় না। সামগ্রিক যে বাস্তবতা তার প্রেক্ষাপটে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি নিয়ে যাওয়ার চেয়ে অন্যভাবে মানুষের কাছে প্রদর্শনের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ মে ২০১৮/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়