ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘এই শিল্পের সঙ্গে বাকি জীবনটাও যুক্ত থাকতে চাই’

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০২, ৩ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘এই শিল্পের সঙ্গে বাকি জীবনটাও যুক্ত থাকতে চাই’

ফজলুর রহমান বাবু

আমিনুল ইসলাম শান্ত : জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু। অভিনয় গুণে দর্শক হৃদয় জয় করেছেন অনেক আগেই। প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে অনেক সম্মাননা। সদ্য বিদায়ী বছরেও ছিল তার পাওয়া না পাওয়ার অনেক গল্প। এসব বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন ফজলুর রহমান বাবু। এ আলাপচারিতার বিশেষ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

রাইজিংবিডি : পাওয়া আর না পাওয়া বিষয়টি মুদ্রার দুই পিঠ। এ ক্ষেত্রে ২০১৮ সালটি আপনার কেমন কেটেছে?
বাবু : পাওয়া আর না পাওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। আমি কী চাই আর কতটুকু পাবো বিষয়টি এমন আরকি। যদি আমার চাওয়া সীমিত থাকে তবে আমার প্রাপ্তি অনেক বেশি হবে। গত বছর দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। বছরটিতে আমার অভিনীত অনেক ভালো ভালো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। যেমন- ‘পোড়ামন ২’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘দহন’ প্রভৃতি। এগুলো আমার ক্যারিয়ারে অনেক কিছু যোগ করেছে। আর যদি ব্যর্থতা বা নেতিবাচক দিক নিয়ে বলি-সেক্ষেত্রে এ বছরে অনেক প্রিয় মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সম্প্রতি চলে গেলেন আমজাদ হোসেন ও সাইদুল আনাম টুটুল ভাই। এদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। যদিও দুজনেই আমার সিনিয়র কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার খুব গভীর সম্পর্ক ছিল। দুজনেই আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। তাছাড়া আমার এক কাছের বন্ধু এ বছরে চলে গেছে, যার সঙ্গে বড় হয়েছি। এগুলো হচ্ছে-ব্যর্থতা বা কষ্টের জায়গা।

রাইজিংবিডি : কাজ নিয়ে আপনার বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই।
বাবু : বেশ কিছু ভালো ভালো কাজ করেছি, যেগুলো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী মাসে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ মুক্তি পাবে। কলকাতার একটি সিনেমায় কাজ করেছি। এটিও চলতি মাসের শেষের দিকে মুক্তির কথা রয়েছে। কলকাতার আরো একটি নতুন সিনেমার কাজ করছি। বর্তমানে অরুণ চৌধুরী পরিচালিত ‘মায়া’ সিনেমার শুটিং করছি। গত পরশু দিন ফরিদপুরে সিনেমাটির শুটিং করলাম। এসব নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছি।  

রাইজিংবিডি : অভিনয় ক্যারিয়ারে নিজেকে কেমন উচ্চতায় দাঁড় করাতে চান?
বাবু : আসলে এখন সব ধরনের কাজ করতে চাই না। টেলিভিশনের কাজ ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছি। একটু অন্য ধরনের কাজ করতে চাই। যে কাজগুলো আর্কাইভ হিসেবে দীর্ঘদিন থাকবে। যে কাজগুলো মানুষ অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে। অভিনয়শিল্পকে ভালোবেসে অভিনয় শুরু করেছিলাম। এই শিল্পের সঙ্গে বাকি জীবনটাও যুক্ত থাকতে চাই। একজন অভিনেতার কোনো সীমানা নেই। তবে আমি কোন পর্যায়ে যাব সেটা কিন্তু নির্ভর করে একটি ভালো চিত্রনাট্য, একজন ভালো পরিচালকের উপর। এগুলো কিন্তু আমার হাতে নেই।

বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। ছোট দেশ হিসেবে আমরা অল্পতেই অনেক মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে যাই। এটা যেমন সত্য পাশাপাশি সত্য হচ্ছে-আমি ভালো কাজ করার যতই যোগ্যতা রাখি না কেন, আমার পক্ষে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব না। কারণ আমাদের রাস্তাটা অনেক ছোট। কারণ আমরা ছোট জায়গার মানুষ। আমি যদি ভারত বা অন্য কোনো বড় ইন্ডাস্ট্রির শিল্পী হতাম তাহলে আমার সামনে যেমন চ্যালেঞ্জ বেশি থাকত, তেমনি সামনে যাওয়ার সুযোগটাও বেশি থাকত। সেখানে সফল হতে পারতাম কি পারতাম না সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি চ্যালেঞ্জ আমি নিতে পারতাম। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সুযোগ আমাদের এখানে কম। আমি আশাবাদী আমাদের এখানেও বড় রাস্তা তৈরি হবে। যে পথ ধরে আমরা অনেক দূর যেতে পারব। আমি না পারলেও আমার পরবর্তী প্রজন্ম যেতে পারবে।

রাইজিংবিডি : ছোট ও বড় পর্দায় নিজেকে বহুবার প্রমাণ করেছেন। অভিজ্ঞতার আলোকে ২০১৮ সালে নির্মিত টেলিভিশন নাটক-টেলিফিল্ম নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
বাবু : গত বছর টেলিভিশনের জন্য নির্মিত কাজগুলোর মধ্যে ৮০ ভাগই নিম্নমানের ছিল। এর ভেতরেও কিন্তু মানসম্পন্ন কাজ হয়েছে। তবে সেটা অল্প। ১০০ ভাগের মধ্যে ২০ ভাগ কাজ অসাধারণ হয়েছে। এ কাজগুলো অতীতের অনেক ভালো কাজকেও হয়তো হার মানাবে। সংখ্যার দিকে থেকে বিবেচনা করলে-বেশির ভাগ কাজই নিম্নমানের, স্থূল হাস্যরসাত্মক।

রাইজিংবিডি : এমটা কেন হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
বাবু : এ বিষয়ে যদি বলতে যাই, তবে ১০ পাতার একটি প্রবন্ধ লিখতে হবে। এমনটা একটা দুইটা কারণে হচ্ছে না। এর মধ্যে বাজেট, দৃষ্টিভঙ্গি, টেলিভিশন কীভাবে ব্যবসা করবে, এজেন্সিসহ অনেক বিষয় রয়েছে। এক কথায় বলব, কাজের মান আগের চেয়ে নিম্নমানের।

রাইজিংবিডি : ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
বাবু : আমাদের চলচ্চিত্র নতুনভাবে মোড় নিচ্ছে। আগে যে ফর্মে চলচ্চিত্র নির্মিত হতো, সে ফর্মে এখন হচ্ছে না। প্যারালাল মুভ্যি হিসেবে আমাদের সিনেমা এখন নতুন জায়গায় যাওয়া শুরু করেছে। সেটা দেশে এবং বিদেশে। বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে আমাদের সিনেমা এখন প্রচুর যাচ্ছে। আমাদের সিনেমার কাহিনি, মেকিং, দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুনত্ব দেখতে পাচ্ছি। আমাদের এখানে নতুন দর্শকও তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ আবার নতুন করে সহপরিবারে সিনেমা দেখা শুরু করেছেন। এটা আমাদের জন্য অনেক ইতিবাচক দিক। আর আশাবাদী মানুষ হিসেবে বলব, আমাদের চলচ্চিত্রে এখন সু-বাতাস বইছে। আমাদের এখানে অনেক মেধাবী পরিচালক ও শিল্পী রয়েছে, যারা দেশ-বিদেশে সঠিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। এখান থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করছি- ভবিষ্যতে এখানে ভালো জায়গা তৈরি হবে।

রাইজিংবিডি : অভিনয় গুণে যশ-খ্যাতি ও মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। কিন্তু এর বাইরেও এমন কোনো কাজ করছেন কিনা যা সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণকর?
বাবু : উল্লেখ করার মতো যদি বলেন-সেক্ষেত্রে হয়তো করি নাই। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা আছে। আমার যে কাজ সে কাজটি যদি আমি সঠিকভাবে করি তবে সেটাও মানুষের জন্য করা। আমি যদি একটি ভালো সিনেমা করি, একটি ভালো নাটক করি-সেই নাটক থেকে যদি মানুষ শিখতে পারেন তবে আমি মনে করি, সেটাও সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য করা। একটি উদারহরণ দিই-‘বাবা’ নামে ৬ মিনিটের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। এতে বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছি। ‘বিকেল বেলার পাখি’ নামে আমার একটা নাটক আছে, এতেও আমি মধ্যবিত্ত বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছি। এ দুটো কাজ দেখার পর অনেক তরুণ-তরুণী বাবার বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। বাবার প্রতি যে অনুভূতি সেটা সন্তান বোঝার চেষ্টা করেছে। অনেক তরুণ-তরুণী ফোন করে বলেছে-বাবা কি জিনিস তা আপনার শর্টফিল্মটি দেখে নতুন করে উপলদ্ধি করেছি। এটাও কিন্তু মানুষের জন্য করা। আমরা যে যেখানে আছি, সেখান থেকে প্রত্যেকে যদি সততার সঙ্গে কাজ করি-তবে সেটাও সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কিছু করা।     

রাইজিংবিডি : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বাবু : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জানুয়ারি ২০১৯/শান্ত/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়