ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘জীবনের ওপর হুমকি সৃষ্টি হলে মানুষ দেশ ত্যাগ করে’

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘জীবনের ওপর হুমকি সৃষ্টি হলে মানুষ দেশ ত্যাগ করে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, জীবন ও সম্পদের ওপর যখন হুমকির সৃষ্টি হয়, তখনই মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়। সাধ করে কেউ দেশ ত্যাগ করে না। সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার হারিয়েই বিভিন্ন সময় এ দেশের সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আদিবাসী সাঁওতাল ও অন্যান্য প্রান্তিক পরিবারের প্রতি বর্বরতার বিচার ও মানবিক সহায়তার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ওই হত্যার ঘটনার পর দুই বছরের বেশি সময় হয়ে গেল, কিন্তু আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদনই পাওয়া গেল না। এই ঘটনার বিচার হচ্ছে না কেন?

সুলতানা কামাল বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে এই সমস্যা জিইয়ে রাখার কারণ কী? ভুক্তভোগী মানুষ দরিদ্র বলে, অসহায় বলে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে তো এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।

তিনি বলেন, সাঁওতালদের এলাকায় সরকারের স্থানীয় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা কি চান এসব মানুষ দেশ ত্যাগ করে চলে যান? তারা যদি না চান, এর প্রমাণ তো তাদের দিতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই প্রমাণ আমরা পাচ্ছি না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে। তিনি বলেন, রংপুর চিনিকল স্থাপনের জন্য আখ চাষ করতে ১৯৬২ সালে বাগদা ফার্ম এলাকার ১ হাজার ৮৪০ একর জমি রিকুইজিশন করা হয়। এসব ছিল স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালিদের ভোগদখলীয় সম্পত্তি। চুক্তি অনুযায়ী, যে কাজের (আখ চাষ) জন্য জমি রিকুইজিশন করা হয়েছে, তা না করা হলে আগের মালিকদের জমি ক্ষতিপূরণসহ দিতে হবে।

ফিলিমন বাস্কে আরো বলেন, ২০০৪ সালে রংপুর চিনিকল বন্ধ হয়। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চাষাবাদ শুরু করেন। জমি ফেরত পেতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আন্দোলন শুরু করলে মিথ্যা মামলা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশ, প্রশাসনসহ স্থানীয় সন্ত্রাসীরা উচ্ছেদের নামে হামলা করে। ওই ঘটনার পর হাইকোর্ট দুটি মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন। কিন্তু আড়াই বছর হলেও তদন্তের কাজ শেষ হয়নি।

ফিলিমন বাস্কে আরো বলেন, ‘একই জেলার সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার মামলা তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট দিতে দেখেছিলাম। তাহলে এ মামলার তদন্ত আড়াই বছরে হচ্ছে না কেন?’

জমি ফেরত, এজন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, ওই ঘটনা নিহত ব্যক্তিদের পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ , সাঁওতালদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সাঁওতালদের ঘরে অগ্নিসংযোগকারী চিহ্নিত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারসহ আট দফা দাবি তুলে ধরেন ফিলিমন বাস্কে।

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের প্রধান আইন উপদেষ্টা বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘সরকার গোবিন্দগঞ্জের এই ইস্যুতে চুপ করে আছে কেন? আমরা চাই, সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করুক। কারণ, এটি মানবিক অধিকারের প্রশ্ন।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ এপ্রিল ২০১৯/মেহেদী/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়