ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

‘এই শহরে’ পেল সেরা অভিনেতার পুরস্কার

মামুনুর রশিদ রাজিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১৬ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘এই শহরে’ পেল সেরা অভিনেতার পুরস্কার

রওনক রিপন ও সুব্রত পাল

মামুনুর রশিদ রাজিব : হাশেম। মাঝ বয়সী যুবক। কাজের সন্ধানে শহরে এসেছেন। সম্বল বলতে গ্রাম থেকে নিয়ে আসা একটি কোদাল। একসময় কোদাল হারিয়ে সে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। পথে পথে ঘুরে বেড়ায় সে কাজের সন্ধানে। কিন্তু কোদাল না থাকায় তাকে কাজে নিতে সবাই অপারগতা জানায়। এক পর্যায়ে একটা কোদাল কেনার জন্য সে শহরের পথে পথে ভিক্ষা করতে শুরু করে। কিন্তু দিন শেষে হিসাব করে যা পায় তাতে কোদাল কেনার টাকা হয় না। একদিন রাতে আপন মনে সে হেঁটে চলেছে- হঠাৎ দেখে, তারই মতো একজন মাঝ বয়সী যুবক শুয়ে আছে ফুটপাতে। তার পাশেই একটা কোদাল এবং একটা টুকরি। অন্যায় উপলব্ধি সত্ত্বেও হাশেম ওই ঘুমন্ত যুবকের কোদাল নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে বিবেকের দংশনে যাওয়ার আগে ভিক্ষা করে পাওয়া টাকা ওই যুবকের পাশে সে রেখে যায়। এমনই এক জীবনের করুণ গল্প তুলে ধরা হয়েছে ‘এই শহরে’ নামক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে।

সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নবম আন্তর্জাতিক দাদা সাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য স্টুডেন্ট ক্যাটাগরিতে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন রওনক রিপন। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন সুব্রত পাল। তরুণ এই নির্মাতা সম্প্রতি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন। সমাজের আর দশটা বাবার মতো সুব্রত পালের বাবা বরেন্দ্রচন্দ্র পালের স্বপ্ন ছিল ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা এমন বড় কিছু হবেন। যে কারণে ছেলের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে ভর্তি হওয়াটা প্রথমে তিনি মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু ছেলের কাজ এবং প্রশংসায় তার সেই দুঃখ কেটে গেছে। ছেলের অর্জনে তিনি আজ গর্বিত বাবা।

সুব্রত বলেন, ‘আমি একদিন ঢাকার রাস্তায় হাঁটছি। হঠাৎ একজন মাঝ বয়সী যুবক এসে সাহায্য (ভিক্ষা) চাইল। তার এই সাহায্য চাওয়ার পেছনে যে কারণটা জানাল সেখান থেকেই এই গল্পের ভাবনা মাথায় এসেছে। ওই যুবকটিও গ্রাম থেকে একটি কোদাল নিয়ে শহরে এসেছিল। সে কোদালটি হারিয়ে ফেলেছিল। ওটাই ছিল তার উপার্জনের একমাত্র উপায়। সে কোদাল কেনার জন্যই আমার সাহায্য চেয়েছিল। সামান্য একটা কোদালের জন্য একটা মানুষ কতটা অসহায়ত্বের মুখোমুখি হতে পারে তার বাস্তব চিত্র সবার সামনে তুলে ধরতেই চলচ্চিত্রটি বানানো। অর্থাৎ এই চলচ্চিত্রটি কাল্পনিক কিছু নয়।’



স্কুল পর্যায়ে ইউনিসেফ-এর শিশু সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কিছু তথ্যচিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে সুব্রত’র চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। সেই ভালোবাসা বাস্তবে রূপ দিতেই চলচ্চিত্র নিয়ে তার পড়াশোনা। নবম আন্তর্জাতিক দাদা সাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সম্মাননা বিষয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে গিয়ে দেশের হয়ে কিছু করতে পারার অনুভূতি অসাধারণ। তাও আবার বিশ্বের বড় বড় দেশ যেমন চীন, জাপান, স্পেন, পর্তুগাল, কানাডাসহ অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দেশের হয়ে আত্মপ্রকাশ করার অনুভূতি অবর্ণনীয়। তবে এই প্রাপ্তি আমার কাজকে আরো গতিশীল করবে। পুরস্কার মানুষকে দায়বদ্ধ করে ফেলে ভালো কাজ করার জন্য। আশা করছি, আমার প্রোডাকশন হাউজ সিনেমায়ার মাধ্যমে কাজ করে এগিয়ে যেতে পারব অনেক দূর।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ মে ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়