ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘মান্না ভাই অনেক আদর করতেন’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মান্না ভাই অনেক আদর করতেন’

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত- বাণিজ্যিক এবং শৈল্পিক উভয় ধারার সিনেমায় সমান সাবলীল দর্শকপ্রিয় এক অভিনেত্রী। কলকাতা-বাংলাদেশ দু’জায়গাতেই ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দহন’, অপর্ণা সেনের ‘পারমিতার একদিন’, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ সিনেমায় তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ‘দহন’ সিনেমায় নববিবাহিতা নারীর চরিত্রে অভিনয় করে তিনি জিতে নেন ভারতের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার। সম্প্রতি এই অভিনেত্রী বাংলাদেশে এসেছেন ‘জ্যাম’ সিনেমার শুটিং-এ অংশ নিতে। বিএফডিসিতে শুটিংয়ের ফাঁকে রাইজিংবিডির বিনোদন প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ঋতুপর্ণার।

রাহাত সাইফুল : ‘জ্যাম’ সিনেমায় আপনি কী ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছেন?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : এখানে আমি আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করছি। যার জীবনে একটি অতীত আছে। তার স্ট্রাগল লাইফটাই সিনেমায় দেখানো হবে।

রাহাত সাইফুল : শুভর সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগছে?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : শুভ এবং আমি ইতোমধ্যেই ‘একটি সিনেমার গল্প’, ‘আহারে’ সিনেমায় অভিনয় করেছি। সহশিল্পী হিসেবে ও খুব ভালো। সব মিলিয়ে বলবো- ভালোই হচ্ছে আমাদের কাজ।

রাহাত সাইফুল : কলকাতায় শিল্পীদের অনেকেই এখন রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। অনেকে তো সাংসদ পর্যন্ত হয়েছেন। আপনি কী ভাবছেন?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : রাজনীতি আমি বুঝি না। ফলে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি আমার কাজ নিয়েই থাকতে চাই। এখন লেখালেখি করছি। ভালোই তো আছি।

রাহাত সাইফুল : দীর্ঘ সময় চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। চলচ্চিত্র নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : চলচ্চিত্র এখন বির্বতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেক ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে একটা পর্যায়ে এসেছে আজকের সিনেমা। আমি এই সময়ে সিনেমায় থাকতে চাই। এখন নতুন অনেক পরিচালক এসেছেন। তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। নতুন কাজ তো হচ্ছে। সেই জায়গাটায় আমি কাজ করতে চাই।

রাহাত সাইফুল : একটানা কাজ করতে গিয়ে কখনও ক্লান্তি এসে ভর করে না?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : ক্লান্তি তো একটু ভর করেই। আমি যে কোনো সময় ঘুমিয়ে পড়তে পারি। অনেক সময় মেকআপ রুমেই একটু ঘুমিয়ে নেই। আবার ধরুন, প্লেনের মধ্যেই ঘুমিয়ে নেই।

রাহাত সাইফুল : আপনার সমসাময়িক অনেককেই কিন্তু এখন পর্দায় দেখা যায় না। আপনি এখনও কাজ করছেন। রহস্যটা কোথায়?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত :  রহস্য তেমন কিছুই নেই। আমি বলবো- দর্শকদের খাঁটি ভালোবাসা আমাকে কাজে বেঁধে রেখেছে। আর একটা বিষয় হচ্ছে কমিটমেন্ট। সঙ্গে যুক্ত করুন ভালোবাসা- এই দুটো জায়গা ঠিক থাকলে কখনও হারিয়ে যাবেন না। লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

রাহাত সাইফুল : মান্নার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু সিনেমায় আপনি কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন পর এই প্রতিষ্ঠানের সিনেমায় কাজ করছেন অথচ মান্না ভাই নেই!

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : খুবই ভালো লাগছে এই প্রোডাকশনে কাজ করে। কারণ মান্না ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক বন্ধন আছে। মান্না ভাইয়ের স্ত্রী আমার খুব কাছের মানুষ। ভাবীর সঙ্গে সবসময় এই প্রোডাকশন নিয়ে কথা হয়। মান্না ভাইয়ের ভালো লাগার জায়গা ছিলো সিনেমা। যে কারণে ভাবী এই সিনেমার কাজ শুরু করেছেন। কাজ করতে এসে মান্না ভাইকে প্রতি পদে পদে মনে পড়ছে। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি। মান্না ভাই আমাকে অনেক আদর করতেন, স্নেহ করতেন। একজন হিরো সিনেমাকে কতটা ভালোবাসে মান্না ভাইকে দেখেছি। সিনেমার গান, লোকেশন, এডিটিং কীভাবে কী করতে হবে তিনি সব কিছু নিয়ে ভাবতেন। আমি যখন বাংলাদেশে আসতাম তখন মান্না ভাই আমার খেয়াল রাখতেন। এই যে আন্তরিকতা- সবসময় স্মৃতিতে ভাসে। তিনি সুপারস্টার হয়েও আমার জন্য নিজ হাতে লাঞ্চ নিয়ে আসতেন। তিনি সহশিল্পীর কেয়ার নিতেন।

রাহাত সাইফুল : দীর্ঘসময় এই এফডিসিতে আপনি সিনেমার শুটিং করেছেন। মাঝে কিছুদিন বিরতীর পরে আবার কাজ করতে এলেন। কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েছে আপনার?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে এখানে ফিল্ম মেকিংয়ের জায়গা থেকে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ভালো সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে্। সিনেমা দিনে দিনে পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তন আমাদের কত দূর নিয়ে যাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। পরিচালক, শিল্পী একসঙ্গে কাজ করলে আরো ভালো কাজ হবে।

রাহাত সাইফুল : একটা সময় ঢালিউডের স্বর্ণ যুগ ছিলো। তুলনামূলক টলিউড অনেকটা পিছিয়ে ছিলো। কিন্তু এরপর আমরা পিছিয়ে গেলাম। এর কারণ কী বলে মনে হয়?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : আমার মনে হয় আপনাদের আরো সিরিয়াস হওয়া উচিৎ ছিলো। নাটকটা এখানে দারুণ হয়। এখানে নাটকের ইন্ড্রাস্ট্রি ঊর্বর। সিনেমার জায়গাগুলো আরো ডেভেলপ করা উচিৎ। বিশেষ করে টেকনিক্যাল দিকগুলো।

রাহাত সাইফুল : ক’দিন পরই পুজো। কোথায় থাকবেন?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : এবারের পুজোটা একটু মিলেমিশে হয়ে যাচ্ছে। এখানে শুটিং করছি। এরপর কলকাতা। এরপর সিঙ্গাপুরে একটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আছে। সেখানে থেকে আবার কলকাতায় কয়েকটা অনুষ্ঠান আছে। এরপর আমেরিকাতে নাচের কিছু প্রোগ্রাম আছে। সব মিলিয়ে পুজোয় ব্যস্ত সময় কেটে যাবে।

রাহাত সাইফুল : দুই বাংলার শিল্পীরা দু’জায়গাতেই অভিনয় করছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : আমি শিল্পীর মধ্যে বর্ডার বা দেশ দেখি না। আমি মনে করি, সিনেমায় একটা চিরন্তন সত্য বিষয় আছে- সেটা যে ভাষাতেই হোক সেখানে ভাষা বা বর্ডার নেই, আছে পিওর ইমোশন।

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়