ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্যারকে অভিশাপ দিতাম: কুমার বিশ্বজিৎ

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩০, ৫ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্যারকে অভিশাপ দিতাম: কুমার বিশ্বজিৎ

আদর্শিক বা মানবিক গুণাবলীর শিক্ষা সবচেয়ে বড় শিক্ষা। এ সবই শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া। আমাদের সময়ে শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের মারধর করতেন—এটাও এক প্রকার শিক্ষা ছিল। যে শিক্ষক মারতেন না, তিনি শিক্ষক হিসেবে ভালো হতেন না। তাকে ফাঁকিবাজ শিক্ষক ধরা হতো। এখন সেই মারের সুফল উপলদ্ধি করতে পারি।

হরিবিলাস নামে আমার এক শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাকে প্রাইভেট পড়াতেন। এখনো শিক্ষকতা করেন। এখনো স্যারের প্রচুর স্টুডেন্ট। গণিত ও ইংরেজিতে অসম্ভব ভালো। স্যারকে প্রচুর জ্বালাতন করেছি। তিনি বাসায় এসে পড়াতেন এবং গ্রুপ করেও পড়াতেন। গ্রুপের ব্যাচ পড়ানো শুরু করতেন ভোর ৪টায়। ভোর ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এক ব্যাচ। ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এক ব্যাচ। ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত আরেক ব্যাচে পড়াতেন। তারপর স্যার বাসায় ফিরতেন। আমি ভোর ৫টার ব্যাচে পড়তাম। স্যার বাজারের একটি রুমে পড়াতেন। ঘুম থেকে উঠে রুমের সাটার তুলে ভেতরে ঢুকে যেতাম। তারপর স্যার সাটার নামিয়ে দিতেন।

তখন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড এশিয়ান হাইওয়ে ছিল। গাড়ি শাঁ শাঁ করে ছুটে যেতো। সকালে দেখতাম- হোটেলে পরোটা ভাজছে। মিষ্টির দোকানে মিষ্টি তৈরির তোড়জোর চলছে। কোনো কোনো দোকানে পুরোনো দিনের গান বাজছে। লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, কিশোর কুমারের গান বাজত। গান শুনতে শুনতে স্যারের কাছে পড়তে যেতাম। স্যারকে নিয়ে অনেক মজার ঘটনা আছে। যেমন: স্যারকে অভিশাপ দিতাম- স্যার মরে যাক! স্যারের অসুখ হোক ইত্যাদি। এগুলো এখন মনে পড়লে খুব হাসি পায়।

হরিবিলাস স্যার আমাদের বাসায় এসেও পড়িয়েছেন। আমরা ভাই-বোনেরা মিলে পড়তাম। একদিন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা খুব খুশি, কারণ বৃষ্টির মধ্যে স্যার আসতে পারবেন না। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখি— বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে স্যার সাইকেল নিয়ে হাজির! স্যারকে দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। কারণ বৃষ্টি এসে লাভ কি হলো? কোনোভাবেই স্যারকে আটকানো যাচ্ছিল না। ঝড়-বাদল যাই হোক না কেন সময়মতো স্যার পড়াতে চলে আসতেন। তিনি এতটাই সিনসিয়ার ছিলেন। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে মাঝে মাঝে স্যারের সাইকেলের হাওয়া ছেড়ে দিতাম। স্যারকে প্রতিদিন পড়ানোর শেষের দিকে নাস্তা দেওয়া হতো। স্যার যাতে তাড়াতাড়ি চলে যান এজন্য আমরা মাকে গিয়ে বলতাম, স্যারকে নাস্তা দিয়ে দাও। কিন্তু মা বলতেন, ‘না, নাস্তা দেওয়া যাবে না। পড়া শেষ হলে দিব’। কিন্তু মায়ের সঙ্গে ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই থাকতাম।

এসব করেও যখন ব্যর্থ, তখন আমরা ভিন্ন পথ খুঁজতে থাকি। গ্রামের বাড়িতে বাথরুম মূল বাড়ি থেকে একটু বাইরে হয়। ওদিকে যাওয়ার পথে আমার দাদা লেবুর বাগান করেছিলেন। একদিন ওই বাগান থেকে স্যারকে দুটো লেবু ছিঁড়তে দেখি। তারপর আমরা সুযোগ পেয়ে যাই। স্যারকে বললাম, আপনি লেবু চুরি করেছেন। আপনি যদি আমাদের দুইদিন ছুটি না দেন তবে আমরা বাবা-মাকে বলে দিব। কিন্তু স্যার উল্টো গর্ব করে বললেন, ‘আমি দুটো লেবু নিয়েছি তাতে অসুবিধা কোথায়? নিতেই পারি!’ আমরা বলি, না স্যার আপনি না বলে লেবু নিয়েছেন। আমরা দেখেছি। কিন্তু মা যখন নাস্তা নিয়ে এলেন স্যার নিজেই মাকে বললেন, ‘আপা আপনার গাছ থেকে দুইটা লেবু নিয়েছি। আপনি কিছু মনে করবেন না’। এভাবে সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যেতো। স্মৃতিগুলো এখন খুব মনে পড়ে।

হরিবিলাস স্যারের সঙ্গে এখনো আমার যোগাযোগ আছে। স্যারের দীর্ঘায়ু কামনা করছি। যেসব শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি একাডেমি শিক্ষা গ্রহণ করেছি শুধু তারাই নন, বরং যাদের কাছ থেকে গান শিখেছি তাদের প্রতিও আমার বিনম্র শ্রদ্ধা রইল। তাদের দীর্ঘ জীবন কামনা করি।

অনুলিখন: আমিনুল ইসলাম শান্ত


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়