ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিস্ময়কর নাটক ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’

মাহফুজ রিপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিস্ময়কর নাটক ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’

নাট্যকার মোহন রাকেশের একটি বিস্ময়কর নাটক ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ তিনি মূলত হিন্দিতে লিখতেন। মহাকবি কালিদাসকে নিয়ে রচিত এই নাটকের সাবলিল অনুবাদ করেছেন নাট্যজন অংশুমান ভৌমিক। অনুবাদ যে শুধু ভাষায় ভাষায় মিল ঘটিয়ে দেয়া নয়, সেটার একটি উজ্জল উদাহরণ ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’।

গঙ্গা যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবের পঞ্চম দিন ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মঞ্চের পাদপ্রদীপের আলোতে পসরা বসলো থিয়েটার ফ্যাক্টরি প্রথম প্রযোজনা ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকের অষ্টম রজনী।

এই নাটকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি সংলাপ দর্শক স্পষ্ট হয়েছে। ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন অলোক বসু। একটি সহজিয়া মঞ্চ পরিকল্পনার নাটক ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’। নির্দেশক অলোক বসু এর নাটকের প্রতিটি চরিত্রকে নিপুন হাতে গড়ে তুলেছেন। একটি পরিমিত বোধ নম্পন্ন নাটক এটি। পৃথিবীতে মানব সন্তান আগমনের সময় যেমন ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আসে; থিয়েটার ফ্যাক্টরির প্রথম প্রযোজনা ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকের শুরুও ঠিক তেমনি প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টিকে সাথে নিয়ে। নাট্যকার এবং নিদের্শক যেন মিলে গিয়েছেন নবরসের খেলায়। বারবার তার প্রতিফলন দেখা গেছে দর্শক সারিতে। এক ঘণ্টা পয়তাল্লিশ মিনিটের এই নাটক চলাকালে সমস্ত হল যেন নৈঃশব্দ ভেঙে পড়ে, এক সময় মনে হয়েছিল আজকের এই নাটমন্দিরে স্বয়ং মহাকবি কালিদাস আসন পেরেছেন। নাটকের চরিত্রগুলো যেন প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়েছিল দৃশ্য এবং অদশ্যকাব্যের মেলবন্ধনে।

প্রকৃতি আর প্রেম যেন কবি কালিদাসের সাথে হাত ধরাধরি করে চলে। কালিদাস মাতুলের বাড়িতে থাকেন। মাতুলের গরু চড়ানোই তার কাজ। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে প্রকৃতির মাঝে। প্রকৃতির সাথে তার হার্দিক সম্পর্ক। প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা কবিতার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উজ্জয়িনী থেকে রাজার লোক আসে তাকে রাজকবির সম্মান দিয়ে রাজধানীতে নিয়ে যেতে। কিন্তু কালিদাস রাজসম্মানে লালায়িত নন। তিনি তার গাঁ ছেড়ে যেতে চান না। ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকের কাহিনি বিন্যাস সমকালকে ধারণ করেছে। কথায় আছে ‘যেই লঙ্কায় যায় সেই রাবন হয়’ দারিদ্র্যের কড়াল থাবা থেকে বাঁচতে মানুষ রাজধানীর দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু যখন সে সাবলম্বী হয়ে ওঠে তখন ভুলতে বসে পেছনের ফেলে আসা সব। পুঁজিবাদের শীতল যাপন তাকে পেয়ে বসে। রাক্ষুসে মাছ যেমন অবলিলায় গিলে ফেলে দেশি টাংরা, রুটিকে ঠিক তেমনি প্রতিভাধর ধীশক্তি সম্পন্ন মানুষকে লুটেরা তার পুঁজির স্বপক্ষে ব্যবহার করে এবং মহো ভেঙে দিয়ে মরার আগেই মৃত্যুর সনদ হাতে তুলে দেওয়াই যেন নেশায় পরিণত হয়েছে কায়েমী স্বার্থভোগী মানুষের। কিন্তু মহাকবি কালিদাস ছিলেন তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এই নাটক যেন সমস্ত দর্শকদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয় সমকালীন এই মহাদ্বন্দ্বকে।

‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকে কালিদাস চরিত্রে রমিজ রাজু অসাধারণ অভিনয় করেছেন। কাশ্মির থেকে ফেরার দৃশ্যে কালিদাসের শরীরে রোগ বাসা বাঁধে, শ্বাস  কষ্টে ভোগা শরীর থেকে বেরিয়ে আসে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস। দর্শক অবলিলায় বিশ্বাস করে এই অভিনয় আঙ্গিক এবং একান্ত আপন করে নেয় মহাকবিকে। সঞ্জিতা শারমীন- মল্লিকা চরিত্রে ভাল অভিনয় করেছেন। এক কথায় এই নাটকে তার সু-অভিনয় দিয়ে ধরে রেখেছেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্তু। এছাড়া অম্বিকা চরিত্রে- শামসুন নাহার বিউটি, মাতুল চরিত্রে আর কে এম মোহসেন, বিলোম চরিত্রে-  অলোক বসু এবং প্রিয়ঙ্গমঞ্জুরী চরিত্রে সুরভী রায়ের অভিনয়ে দর্শক স্পষ্ট হয়েছে। এই নাটকে আরো অভিনয় করেছেন- হাসানুজ্জামান খান, সুমন মণ্ডল বানি, হাসানুজ্জামান এবং মিশাল সমাপ্ত।

‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকের নির্দেশক এই নাটকের সকল অভিনেতার প্রতি সমান গুরুত্ব দিয়ে গড়ে তুলেছেন, নাটকের টিম ওয়ার্ক দেখে সেটা পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে এই নাটকের সকল অভিনেতা এখনও ব্যক্তি স্বত্তাকে ছাপিয়ে চরিত্রের স্বত্তাকে ধারণ করতে পারেন নাই। ইতিবাচক দিক হচ্ছে দুই স্বত্তার ব্যবধানের দূরত্ব বেশি দূর নয়।

নাট্যজন অলোক বসুর নির্দেশিত ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকের পরিমিত আলোক পরিকল্পনা করেছেন ঠাণ্ডু রায়হান, আবহসঙ্গীত প্রয়োগ করেছেন আকাশ চত্রবর্তী নির্ঝর, কোরিওগ্রাফি আমিনুল আশরাফ, মঞ্চপরিকল্পনা কামালউদ্দিন কবির। সব মিলিয়ে একটি আশাব্যঞ্জক এবং সু-অভিনিত প্রযোজনা ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’। মঞ্চ নাটকের জয় হোক।         


ঢাকা/মাহফুজ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়