ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভিক্ষাও জুটছে না…

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ১ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভিক্ষাও জুটছে না…

মঞ্চনাটক আর পালা গানের আসর যেখানেই বসতো সেখানেই ছুটে যেতেন হারুন। এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে ছুটে বেড়াতেন তিনি। পরিচিত জনের মাধ্যমে ঢাকায় এসে ১৯৭৯ সালে চলচ্চিত্রে রূপসজ্জার কাজ শুরু করেছিলেন হারুন। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমায় রূপসজ্জাকর হিসেবে কাজ করে প্রশংসিত হন। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ সিনেমায় কাজের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও ‘অন্য জীবন’, ‘শঙ্খমালা’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘জীবন সংসার’সহ শতাধিক সিনেমায় কাজ করেছেন হারুন।

হারুনের হাতের ছোঁয়ায় বদলে গেছে অনেক অভিনয়শিল্পীর চেহারা। অন্যকে সাজাতে গিয়ে নিজের জীবন সাজাতেই ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। বিত্ত-বৈভবের দিকে না তাকিয়ে জীবনের অমূল্য সময় কাটিয়েছেন এফডিসিতে। কিন্তু এখন কেউ তার খোঁজ রাখেন না।

২০০৯ সালে স্ট্রোক হয় তার। এতে শরীরের ডান পাশ প্রায় পুরোটা অকেজো হয়ে যায়। অসুস্থ হওয়ার কারণে এফডিসিতে আর কাজে ফিরতে পারেননি। ছিটকে পড়েন চলচ্চিত্র জগৎ থেকে। শুরু হয় অর্থকষ্ট। অনেকটা বাধ্য হয়েই ২০১১ সাল থেকে ভিক্ষা করতে শুরু করেন। অভাবের তাড়নায় এরই মধ্যে বিক্রি করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সোনার মেডেলও।

এদিকে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে করোনা সংক্রমণ। করোনার কারণে সবাইকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। অফিস, আদালত, শপিং মলসহ সব কিছু বন্ধ। রাস্তা ঘাটেও নেই লোকজন। স্বাভাবিক কারণে ভিক্ষাও জুটছে না হারুনের৷ এমন অবস্থায় পেট চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এদিকে হারুনের স্ত্রী বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। করোনার কারণে সে কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। চিকিৎসাও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে স্ত্রী মহুয়া আকতারকে নিয়ে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ফরিদাবাদ বস্তিতে থাকেন।

মেকআপ ম্যান সেলিম। ১৯৮১ সালে এফডিসিতে পা রাখেন। জনপ্রিয় অভিনেতা রাজিব তাকে এফডিসিতে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় তিনি পেয়েছেন জনপ্রিয় শিল্পীদের সান্নিধ্য। করোনার কারণে শুটিং বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন তিনি।

সেলিম বলেন, ‘এ কাজ ছাড়া অন্য কিছু শিখিনি। এখন ঘরে বসা। কাজ নেই কিন্তু প্রত্যেকদিন তো খেতে হয়। এভাবে বেশিদিন চললে খুব সমস্যায় পড়ে যাব৷ বড় বড় শিল্পীদের সাজিয়েছি কিন্তু এই দুর্দিনে কেউ খোঁজ নিচ্ছে না।’

ফয়সালও ম্যাকআপ ম্যানের কাজ করেন। তার মনেও ভর করেছে উৎকণ্ঠা। সামনের অনিশ্চিত জীবন নিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজহীন কদিন বসে বসে খাব? আয়ের পথ বন্ধ। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের পারিশ্রমিক খুবই কম। এ দিয়ে সঞ্চয় করা যায় না। ঘরে বসে খাওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই।’

রূপসজ্জা শিল্পীদের একটি সংগঠন থাকলেও সদস্যদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সংগঠনটি। স্বাভাবিক কারণে কোনোরকম সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। অনেকেই মনে করছেন এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে তাদের। এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে অনেকেই৷

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়