ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘প্রবাসীদের লাশ সরকারি খরচে দেশে আনার আইন হোক’

প্রকাশিত: ১০:১৫, ৬ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘প্রবাসীদের লাশ সরকারি খরচে দেশে আনার আইন হোক’

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। গানের মাধ্যমে দর্শক মাতানোর পাশাপাশি ঘটে যাওয়া নানা অসঙ্গতি নিয়েও কথা বলেন তিনি। এবারো প্রাবাসীদের মরদেহ সরকারি খরচে দেশে আনাসহ সমাকালীন কিছু ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন এই শিল্পী। তা ছাড়া প্রবাসীদের জন্য গানও গাইবেন বলে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের কেরালায় অন্তঃসত্ত্বা একটি হাতিকে হত্যা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষও প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু সীমান্তে দেশের মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, তা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। এ বিষয়ে কারো কেন ভাবনা নেই সেই প্রশ্ন তুলেছেন আসিফ।

এ বিষয়ে এই শিল্পী ফেসবুকে লিখেন, ‘ভারতের কেরালায় বন্য শুকরের জন্য পাতা ফাঁদে দূর্ঘটনাবশত একটা অন্তঃসত্ত্বা হাতি মারা গেছে। মানুষ যে অমানুষ এটা জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি। স্রষ্টার যেকোনো সৃষ্টির প্রতি অবিচারে আমারও মন কাঁদে। এই অবুঝ হাতি মৃত্যুর ঘটনায় পশুপ্রেমিকদের ক্রন্দনে আকাশ বাতাসের সঙ্গে ফেসবুকও ভিজে গেছে। এদিকে কয়দিন আগে পঞ্চগড় সীমান্তে শিমোন রায় নামে একজন স্কুলছাত্রকে বিএসএফ পেটে বন্দুক চেপে গুলি ছুড়ে ভুড়ি বের করে মেরে ফেলেছে, সেটা নিয়ে তাদের কোনো বিকার দেখলাম না। লিবিয়ায় ছাব্বিশজন নিরীহ প্রবাসীকে হত্যা করা হলো, এটা নিয়েও তাদের বিবেক আটক ছিল খোঁয়াড়ে। দেশে মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে, সেটা নিয়েও প্রতিক্রিয়া দেখলাম না। আজকাল ভীতুদের প্রতিবাদও হয় বুঝে-শুনে যেখানে সেফটি আছে।’

প্রবাসীরা বিদেশের মাটিতে কতটা কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠান তা স্মরণ করে আসিফ লিখেন, ‘মনে বহু কষ্ট নিয়ে প্রবাসে যেতে হয়, আর উচ্চতর ক্যারিয়ার গড়ার জন্যও বিদেশ যায় মানুষ। ৯১ সালে গলাকাটা পাসপোর্টে জার্মানি যেতে চেয়েছিলাম প্রতিষ্ঠিত হতে যেন মিতুকে বিয়ে করতে পারি, পরে যাওয়া হয়নি। ২০০২ সালে কাতার গেলাম শো’ করতে। আমাদের বংশের বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর ভাইয়া আর উনার ছোটজন হানিফ ভাইয়া তখন কাতার প্রবাসী। কাতার এখনকার অবস্থায় ছিলে না। এয়ারপোর্ট ছিল একদম ছোট। উনারা কনস্ট্রাকশন  ফার্মে কাজ করতেন। সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৪৫/৫০ ডিগ্রি। আমাদের প্রবাসীরা অনেকে এখনো এসব অমানবিক কষ্টের কাজ করছেন। আগে প্রবাসীদের টিপ্পনি কেটে বলা হতো ওসি ডিসি অর্থাৎ ওনিয়ন কাটার এবং ডিশ ক্লিনার। এবারের করোনা পুরো জাতিকে ওসি ডিসি বানিয়ে দিয়েছে। প্রবাসী মানে লেবার মনে করে স্বদেশীরা, তাতে কোনো সমস্যা নাই। তবে আমরা ভুলে যাই প্রবাসে আমাদের কোয়ালিফাইড ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সাইন্টিস্ট অধ্যাপক সাংবাদিক রাজনীতিকসহ অন্যান্য সম্মানী পেশার মানুষও আছেন। এক প্রবাসী ইতালি থেকে নেমে কোয়ারেন্টাইনে গিয়ে দেখে গুদামঘরের মতো জায়গায় নিয়ে সেখানে তাদের থাকতে বলছে। এগারো ঘন্টা জার্নিসহ নানা বিড়ম্বনায় তিনি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সিনক্রিয়েট করে জাতির কাছে ভিলেন হয়েছেন। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যতে অভ্যস্ত জাতি পুরো প্রবাসীদের গালাগাল শুরু করলো। ভুলেই গেল অর্থনীতিতে তাদের অবদান।’

প্রবাসীদের লাশ সরকারি খরচে দেশে আনার আইন করার আহ্বান জানিয়ে আসিফ লিখেন, ‘করোনায় স্থবির অর্থনীতিতে জাতি যখন শুধু হাত ধোয়া আর প্রণোদনা ভিক্ষা করে তখন প্রবাসী নবাব আর চোরডাকাতরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার (১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার)। অর্থ বছর শেষ হওয়ার একমাস আগেই এ টাকা পাঠিয়ে গত বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে, যা মোট জিডিপির ১২%। ছোটবেলায় পড়েছিলাম নেই কাজ তো খই ভাজ। বেকুব নাতি গোলার সব ধান দিয়ে খই ভেজে ফেলেছে, এবার ভাত খাওয়ার চাল নাই। ক্রমাগত ট্রল আর ছোট করার মানসিকতা সম্পন্ন জাতির প্রধান কাজই হচ্ছে প্রবাসীদের নিয়ে জাবর কাটা। অথচ প্রত্যেকটা পরিবারে প্রবাসী আছেই। আফসোস আমরা সম্মান করাটা শিখলামই না। এখন দাবি প্রবাসীদের লাশ সরকারি খরচে দেশে আনার আইন হোক, তাদের জন্য প্রিভিলেজড কার্ডের ব্যবস্থা করা হউক। করোনা শিখিয়েছে বাস্তবতাকে আপনকে পর। আসেন আমরা সমালোচকরা সবাই সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুয়ে সরকারের কাছে ভিক্ষা চাই। প্রবাসীদের জন্য আরো একটি গান তৈরি করবে দ্রুত। স্যালুট প্রবাসী ভাইবোনেরা।’


ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়