মৃত্যুর আগে ‘শান্তিতে মরতে’ চেয়েছিলেন সালমান শাহ
রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম
মৃত্যুর মাত্র এক দিন আগে চিত্রনায়ক সালমান শাহ ‘শান্তিতে মৃত্যু’ কামনা করেছিলেন। চিত্রপরিচালক ওয়াকিল আহমেদকে এ কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
যেকোনো মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত ও বেদনাময়। কিন্তু সালমান শাহ’র মৃত্যু ছিল ভক্তদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাত তুল্য। ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ধূমকেতুর মতো সালমান শাহ’র আবির্ভাব। মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই চিত্রনায়ক রহস্যজনকভাবে মারা যান। সেই থেকে ৬ সেপ্টেম্বর দিনটি সালমানভক্তদের জন্য জন্য বেদনাবিধুর হয়ে আছে।
এই নায়ককে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন গুণী নির্মাতা ওয়াকিল আহমেদ। ‘অধিকার চাই’ ও ‘ভুলো না আমায়’ সিনেমার জন্য তিনি সালমান শাহকে চুক্তিবদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু শুটিং শুরুর আগেই পরপারে পাড়ি জমান সালমান। তার মৃত্যুর ২৫ বছর পর এ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডিকে ওয়াকিল আহমেদ বলেন, ‘সালমান শাহ তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আশা প্রোডাকশনের ‘‘অধিকার চাই’’ এবং ফ্রেন্ডস মুভির ‘‘ভুলো না আমায়’’ সিনেমা দুটির জন্য নায়ক হিসেবে সালমান শাহ এবং নায়িকা শাবনূরকে সিলেক্ট করেছিলাম। সালমান শাহর একটি ব্যক্তিগত দুর্বলতা ছিল আন্ডার ওয়াটার শুটিং। যখনই দেখা হতো বলত, ভাই, আমার সমুদ্রে ডোবার দৃশ্যটা থাকবে তো?’
এই নির্মাতা যেকোনো সিনেমা শুরুর আগে আজমীর শরিফে যেতেন। বিষয়টি জানতে পেরে সালমান শাহ তাকে বলেন, তার কাছে ভারতীয় ৫০০ রুপি আছে। টাকাটা যেন তিনি খাজা বাবার দরবারে দেন।
সেই টাকা আনার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে নির্মাতা সালমান শাহ’র সঙ্গে উত্তরায় ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবির সেটে দেখা করেন।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে ওয়াকিল আহমেদ বলেন, ‘গিয়ে দেখি ও (সালমান শাহ) একটা বিছানায় শুয়ে আছে। মনে হচ্ছে, একটা ফুটফুটে বাচ্চা! আমাকে দেখে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ থেকে টাকাটা বের করতে গিয়ে একটা ছবি বের করলো। ছবিটা কার, আমি দেখিনি। কারণ, আমি ছবির উল্টো দিকে ছিলাম। ছবিটা একবার দেখলো, বিড় বিড় করে কিছু একটা বলার পর ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিলো। এরপর আমাকে পাঁচশ রুপি দিলো। আমি বললাম, দরবারে বাবার ডেকচিতে কিছু দেওয়ার আগে মানুষ নিয়ত করে। আমি কী বলব? উত্তরে সালমান শাহ বললো, আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমার সব চাওয়া শেষ হয়ে গেছে। শুধু বলবেন, আমি যেন শান্তিতে মরতে পারি।’
১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে উল্লিখিত সিনেমার দুই প্রযোজকের সঙ্গে ওয়াকিল আহমেদ ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে প্রযোজকদের একজন হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে বলেন, ‘ওয়াকিল ভাই, আমি একটা বাজে স্বপ্ন দেখছি। দেখলাম, সালমান শাহ মইরা গেছে!’
এ কথা শুনে ওয়াকিল আহমেদ হালকা রসিকতার সুরে বলেন, ‘ধুর মিয়া! সাড়ে ৩ লাখ টাকা সাইনিং মানি দিয়েছেন তো। ওই টাকার যন্ত্রণায় খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন। এখন ঘুমান।’
তখনও তিনজনের কেউ জানেন না, আগামীকাল তাদের জন্য কি দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। ৬ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে কলকাতায় পৌঁছার পর তারা জানতে পারেন, তাদের দেখা রাতের দুঃস্বপ্ন সত্যি হয়েছে! সালমান শাহ আর নেই।
ওয়াকিল আহমেদ বলেন, ‘আজমীর শরিফে সালমান শাহ’র সেই টাকা দিয়েছিলাম। দেশে ফিরেও এলাম। পরে সালমানের বদলে ওমর সানি আর অমিত হাসানকে নিয়ে সিনেমা দুটির কাজ শেষ করি। কিন্তু সালমান শাহকে না-পাওয়ার বেদনা তাতে এতটুকু কমেনি।’
ঢাকা/তারা