ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন তার অর্থনৈতিক শক্তিতে’

রাশিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন তার অর্থনৈতিক শক্তিতে’

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা

ছোটবেলা থেকে অনেকেই স্বপ্ন দেখেন বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, শিক্ষক, ডিসি, প্রধানমন্ত্রী আরো অনেক কিছু হবেন। কেউ কেউ সে স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার স্বাদ পান, কেউ আবার পান না। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে স্বপ্ন পূরণ তো স্বর্ণের হরিন। আর নারীদের ক্ষেত্রে কল্পনার রাজ্যেও বাধার পাহাড় এসে দাঁড়ায়। এ পরিস্থিতিতেও নারীরা এগিয়ে চলছেন দুর্বার গতিতে। সফল নারীদের মধ্যে শাহিদা সুলতানা এক অনন্য ব্যক্তিত্বের নাম।

তিনি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক দেশের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। সে পদে যখন আসীন হন কোনো নারী, তখন স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল জাগে মনে।

একজন জেলা প্রশাসকের কাজের পরিধি, জেলা প্রশাসক হয়ে উঠার গল্প, একজন বিসিএস পরীক্ষার্থীর রুটিন কেমন হওয়া উচিৎ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে শাহিদা সুলতানার সাথে কথা বলেছেন রাইজিংবিডির ক্যাম্পাস পাতার নিয়মিত লেখক ও বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশিদুল ইসলাম (রাশেদ)।

রাশেদ: প্রথমেই আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই?

শাহিদা সুলতানা: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি।

রাশেদ: সরকারি চাকরিতে যদি আসতে না পারতেন, তাহলে কী করার ইচ্ছা ছিল?

শাহিদা সুলতানা: সরকারি চাকরি না পেলে নিঃসন্দেহে উদ্যোক্তা হতাম।

আমাদের সময়ে পেশা পরিকল্পনার তেমন সুযোগ ছিল না। তবে, বর্তমান সরকার তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনেক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আসতে না পারলে অবশ্যই নিজের মেধা আর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হতাম।

রাশেদ: যেসমস্ত তরুণ দেশের জন্য কাজ করতে চায়, তাদের সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?

শাহিদা সুলতানা: বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে হতে হবে আত্মপ্রত্যয়ী এবং আত্মনির্ভরশীল। যারা দেশের জন্য কাজ করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে বলব; তোমরা সবকিছুর প্রথমে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে জানো। এ দেশের ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে জানো, বুকে ধারণ করো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানো ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করো। তবেই তোমরা একদিন দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে উঠবে। মনে সৎ সাহস আর দেশপ্রেম থাকতে হবে।

রাশেদ: একজন বিসিএস পরীক্ষার্থীর রুটিন আসলে কেমন হওয়া উচিত?

শাহিদা সুলতানা: জীবনের যেকোনো স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একাগ্রতা প্রয়োজন। কেননা, কঠোর পরিশ্রমই জীবনে সফলতা বয়ে আনে। নিজের প্রতি বিশ্বাস আর ধৈর্য রেখে পরিশ্রম করতে পারলে যেকোনো কিছুতেই সফল হওয়া সম্ভব।

রাশেদ: আপনি ডিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় ৭ মাস পূর্ণ হলো। আপনাকে অভিনন্দন। কাজের ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

শাহিদা সুলতানা: কাজের ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হলো কাজটির জন্য লেগে থাকা এবং তা পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা। জেলা প্রশাসক মূলত একটি টিমের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। এক্ষেত্রে টিমের প্রত্যেক সদস্যকে শেষ অবধি কর্মসম্পাদনে উদ্দীপ্ত রাখতে পারাটাই একটি চ্যালেঞ্জ।

রাশেদ: একটি জেলায় শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে, মাদক ও ইভটিজিং মুক্ত সমাজ গঠন করতে একজন জেলা প্রশাসকের ভূমিকা কতটুকু? এক্ষেত্রে আপনি কতটুকু সফল?

শাহিদা সুলতানা: আগেই বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসক মূলত একটি জেলায় কর্মরত সকল ডিপার্টমেন্টের কর্মকাণ্ড সমন্বয় করে থাকেন। জেলাকে মাদকমুক্ত ও ইভটিজিংমুক্ত রাখার জন্য এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দপ্তর কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সকল দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে তাদের কার্যক্রমকে গতিশীল রাখার জন্য জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে Auto Biometric Attendance System চলমান রয়েছে; শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতা ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে ও চর্চায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৪টি ক্লাব (স্পোর্টস ক্লাব, সাংস্কৃতিক ক্লাব, হৃদয়ে বাংলাদেশ ক্লাব ও শুদ্ধাচার ক্লাব) স্থাপন করা হয়েছে।

রাশেদ: আপনি একজন নারী, আর এ জেলার নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য আপনি কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন?

শাহিদা সুলতানা: অবশ্যই, নারীদেরকে আত্মনির্ভরশীল করার জন্য মূলত তাকে জীবনে কর্মক্ষম করে তোলাই জরুরি। মেয়েদের শিক্ষার বিস্তার, কর্মসৃজন এবং কর্মস্থলে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করণে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। মেয়েদের ঝরে পড়া রোধে ইতোমধ্যে ৭০০ স্কুলগামী মেয়েকে বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে। মেয়েদের আত্মপ্রত্যয়ী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্কুলে মেয়েদের কারাতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। মেয়েদের আয় বর্ধন কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি বেসরকারি দপ্তরকে নারীবান্ধব করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

রাশেদ: জাতির পিতার পূণ্যভূমিতে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন! এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কী?

শাহিদা সুলতানা: হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে গোপালগঞ্জ জেলায় জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে পারায় আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। মনে হয়, আমিও একটি মহান ইতিহাসের গর্বিত অংশ হতে পারছি।

রাশেদ: সর্বশেষ জানতে চাই, আপনার মতে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন কীভাবে সম্ভব?

শাহিদা সুলতানা: নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন তার অর্থনৈতিক শক্তিতে। নারীকে সকল কর্মকাণ্ডের সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে এবং তার অর্থনৈতিক মুক্তির পথ সৃষ্টির মাধ্যমেই নারীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

রাশেদ: রাইজিংবিডিকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

শাহিদা সুলতানা: আপনাকেও ধন্যবাদ। রাইজিংবিডির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।


বশেমুরবিপ্রবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়