ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘পরিবারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে সফল সজীব’

স্টার্লিং ডি মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ৬ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পরিবারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে সফল সজীব’

সবাই চায় প্রিয়জনকে নানা উপলক্ষে উপহার দিতে। সেটা প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা কিংবা পারিবারিক বা বন্ধুত্বের হোক। প্রাচীনকালে স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেওয়া হতো৷ এরপর যত দিন গড়িয়েছে সভ্যতা আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার ধরন বদলে গেছে। বদলেছে উপহারসামগ্রী।

প্রিয় মানুষটি একটু খুশি হোক, সেজন্য সবার থাকে নিরন্তর প্রচেষ্টা। একুশ শতকে এসে আমাদের দেশের হাজারো তরুণ যখন বেকারত্বের করালগ্রাসে হতাশায় ভুগছে, তখন কিছু স্বপ্নবাজ উদ্যোমী তরুণ হাজারো সমস্যা থেকে সম্ভাবনা খুঁজে নিয়ে গড়েছেন বর্ণিল ক্যারিয়ার। এমনই এক স্বপ্নবাজ তরুণের কথা বলবো আজ।

মোহাম্মাদ সজীব, গাজিপুর জেলার কাপাসিয়া থানার বীর উজলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে ওঠা গ্রামের পরিবেশে। পড়ালেখা করেছেন রাজধানী ঢাকায়। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নিজে কিছু করবেন। সেজন্য ছাত্রাবস্থা থেকেই নানা ধরনের ট্রেনিং, ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম চালিয়ে যান। প্রিয় মানুষকে উপহার দিয়ে যেন মানুষ আরো ভালো থাকে, সেই চিন্তা থেকে শুরু করেন ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘এস বি গিফট শপ’।

পণ্য হিসেবে তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের কাস্টমাইজড গিফট (পেপার ক্রাফট, উডেন ক্রাফট ইত্যাদি)। সেগুলো অনলাইনে ও বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করে থাকেন। তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা করছেন তিনি।

প্রশ্ন করা হয়েছিল কর্মচারী কতজন আছে? উত্তরে স্বপ্নবাজ তরুণ বলেন, পণ্য বিক্রয় করার জন্য বেশ ক’জন মেয়ে নিয়োগ দিয়েছি, যারা অনলাইনে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তারা ঘরে বসে ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রয় করে থাকেন পণ্যগুলো। বিনিময়ে তাদের কমিশন দিয়ে থাকি।

তিন বছর ধরে নিজ বাসা থেকেই প্রোডাক্ট বিক্রয় করে আসছেন৷ এখনো অফিস নেননি। স্বপ্ন দেখছেন একদিন অফিস শো-রুম সব হবে। চাকরি ছেড়ে ব্যবসা কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘শুরুতে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে চার বছর চাকরি করি। চাকরিরত অবস্থায় উপলব্ধি করি এই চাকরি আমার জন্য সুখকর নয়। স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে ব্যবসা করতে হবে। ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে পেপার ক্রাফট, স্কার্প বক্স, স্কার্প বুক, ইনফিনিটি বক্স, ডায়েরি, চাবির রিং, উডেন ক্রাফটসহ নানা পণ্য নিয়ে কাজ করা শুরু করি।’

সজিব ব্যবসা করতে গিয়ে প্রথমে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন, সবার প্রথমে ছিল পরিবারের বাঁধা। কেউ চায়নি ব্যবসা করুক তিনি। বাংলাদেশের আর দশটা পরিবারের মতো সবার চাওয়া ছিল তিনি চাকরি করবেন। পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে, প্রথমে সবাইকে মানিয়ে কাজ করাটা ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। শুরুতে অল্প পুজি নিয়ে শুরু করেন, তাই প্রোডাক্ট স্টক করা কষ্টসাধ্য ছিল। অনলাইন সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা ছিল না, সেজন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে স্বপ্নবাজ এই তরুণকে।

বর্তমানে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কেমন আছেন, প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। যখন কেউ ‘এস বি গিফট শপ’ থেকে উপহার কিনে খুশি হয়, তখন খুঁজে পাই কাজের সার্থকতা। সব মিলিয়ে ভালো আছি।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নিজের শো-রুম করবেন তিনি। অনলাইন শপকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চান। কারো যদি গিফটের কথা মাথায় আসে, তাহলে প্রথমে যেন এস বি গিফট শপের নাম মাথায় আসে।

যারা ব্যবসা বা কোনো উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে চান, শুরু করার পূর্বে কী পণ্য/সেবা নিয়ে কাজ করতে চান, সেটা সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে। প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। আর সবচেয়ে বেশি দরকার ধৈর্য ও শেখার মন মানসিকতা থাকতে হবে। ব্যবসার মাঝ পথে এসে ছেড়ে দিলে হবে না, শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে।

লেখক: তরুণ উদ্যোক্তা।


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়