ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঈশিতার ‘ইশরাফ স্টাইল জোন’

স্টার্লিং ডি মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৩০ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ঈশিতার ‘ইশরাফ স্টাইল জোন’

কিছু মানুষের স্বপ্ন থাকে আকাশ ছুঁয়ে দেখার। এই সমাজ, সংসার ও নিয়মনীতির বেড়াজালে আকাশ আর ছুঁয়ে দেখা হয় না তাদের অনেকেরই। এমন কিছু মানুষ থাকেন, যারা শত বাঁধার শিকল ছিঁড়ে দেরিতে হলেও অসীম আকাশ ছুঁয়ে দেখার স্বাদ ঠিকই মেটান। তেমন একজন স্বপ্নবাজ নারী ঈশিতা আক্তার তানিয়া।

তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানাধীন বড়বাড়িয়া গ্রামে। বাবার সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাটিয়েছেন ছোটবেলা। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়া মেধাবী এই ছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষার ঠিক ১৮ দিন আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সেই পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক খারাপ করেন ঈশিতা।

এরপর অল্পবয়সে মা হোন তিনি। ছোটবেলায় বাবা-মা মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন বলে স্বপ্ন দেখতেন। মেয়ের স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়ার। সব স্বপ্ন যেন থমকে গেছে বিয়ের কারণে। পড়াশোনার পাশাপাশি যে মেয়েটি উপস্থিত বক্তৃতা, কুইজ, গান, আবৃত্তিতে নানা পুরস্কার পেয়েছে বিগত দিনে, বিয়ের কারণে সব স্বপ্ন থেমে যাচ্ছে এটা মানতে পারছিলেন না তিনি। মায়ের সাথে পরামর্শ করে ভর্তি হোন এইসএসসিতে। স্বামীর অমতে কোনোমতে ইন্টার শেষ করেন, সাথে জিপিএ-৫ও পান তিনি।

এরপর আর পড়াশোনা চালাতে দেবেন না স্বামী। প্রথমে ঝগড়াঝাটি, এরপর শারীরিকভাবে নির্যাতন নেমে আসে ঈশিতার জীবনে। বাধ্য হয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শেষ করেন ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক।

ফেসবুকের কল্যাণে বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে পরিচয়৷ এরপর চিন্তা করেন তিনিও ব্যবসা করবেন। ২৫৯ টাকা মূলধন নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন তিনি। ক্রাফটিংয়ের জিনিস দিয়ে শুরু করেন, যদিও আঁকিবুঁকি খুব ভালো পারতেন না। কিন্তু রঙ নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন। আর নিজের বেরঙ জীবনে রঙ ভরে দেওয়ার চেয়ে বেটার অপশন আর কী বা হতে পারে। এই চিন্তা আর ভালো লাগা থেকেই শুরু।

আস্তে আস্তে যখন ভালো সাড়া পাচ্ছিলেন, তখন ফেসবুকেই একটা পেজ খুললেন। নাম দেন "ishraf style zone'। হাতে বানানো গয়না, দেশি হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি, কামিজ নিয়ে কাজ শুরু করেন।

স্বপ্নবাজ এই তরুণী বলেন, ‘একটা ডিভোর্সি মেয়ে সাথে বাচ্চা, সমাজ ছেড়ে কথা বলেনি আমাকে, তবুও সব মুখ বন্ধ করে সহ্য করে ধীরে ধীরে আগাচ্ছি। প্রায় ২ বছর থেকে ব্যবসায় সময় দিচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। স্বপ্ন দেখি আমার ‘ishraf style zone’ একদিন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড হবে৷ একটা সুন্দর অফিস হবে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হবে বিদেশে আমার প্রতিষ্ঠানের পণ্য।’

নারী হিসাবে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা এই সমাজে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জিং। পারিবারিক সাপোর্ট থাকে না৷ শুনতে হয় সামাজিকভাবে নানা বাঁকা কথা। সামাজিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয় বারবার। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে কটাক্ষমূলক কথাবার্তা শুনতে হয় নিয়মিত। এসব পেছনে ফেলে যারা দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যায়। সফলতা তাদেরকেই আলিঙ্গন করে। সফলতার গল্প লেখা হয় তাদের জন্যই।

এই স্বপ্নবাজ তরুণ উদ্যোক্তা কোনো প্রশিক্ষণ না নিলেও অনলাইন গ্রুপ Women and e- Commerce (WE) থেকে পান সার্বিক সাপোর্ট আর এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। সেটাকে পুঁজি করেই এগিয়ে যাচ্ছেন নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অদম্য গতিতে।

উদ্যোক্তা হিসেবে বর্তমানে তিনি কেমন আছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো আছি।  এভাবে চলতে পারলে আশা করি অচিরেই আরও ভালো অবস্থানে থাকবো’।

যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হয়ে, ধৈর্য্য ধরে, সততার সাথে এগিয়ে যেতে হবে ধীরে ধীরে। আগে কী করবেন, সেটার পরিকল্পনা করুন। শক্তভাবে সেটা নিয়েই আগান৷ এই সমাজ আপনার পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। সব সমস্যার বিরুদ্ধে বুক পেতে লড়াই করেই কেবল জয় ছিনিয়ে আনা যায়। ঐ যে একটা কথা আছে, slow and steady wins the race.’

লেখক: তরুণ উদ্যোক্তা।

 

ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়