ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘শুদ্ধ মনের মানুষই পারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে’

গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১১, ২৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘শুদ্ধ মনের মানুষই পারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে’

ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি বাড়তি ঝোঁক ছিল ইফতেখারের। তিন গোয়েন্দার প্রতি ঝোঁক থেকেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। মফস্বলে বড় হয়ে ওঠা ইফতেখার আহমেদের। পড়াশোনার পাশাপাশি কৈশোর থেকেই ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা ছিল। ২০১৮ সালে বই নিয়েই শুরু করেন ‘অবসর’ নামের অনলাইন বুক শপ। স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ-চ্যাপ্টার ২-এ দেশসেরা ১০টি উদ্যোগের একটি অবসর। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হচ্ছে ইফতেখারের গল্পে।

ইফতেখার আহমেদ বর্তমানে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করছেন৷ কুমিল্লার গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে জেএসসি ও এসএসসি পাস করেন। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন কুমিল্লা সরকারি কলেজ থেকে। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতাসহ নানা সহ-শিক্ষাকার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন ইফতেখার।

নিজেকে শুধু পড়াশোনার গণ্ডিতে বেঁধে ফেলতে চাননি। ক্রিয়েটিভ কিছু করার ইচ্ছাটা তখন থেকেই মূলত। স্কুল-কলেজে পড়াশোনায় সিরিয়াস থাকলেও যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলেন, তখন একাডেমিক পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যায়।  উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে অনেক আগে থেকে। নিজে নিজের বস হতে চেয়েছেন সবসময়৷ পাশাপাশি চেয়েছেন এমন কিছু করতে, যেটা দিয়ে মানুষের জীবনে পজিটিভ অর্থে পরিবর্তন আনতে পারে।  সেইসাথে সে কাজে যাতে নিজের ভালো লাগাও থাকে। কলেজ জীবনের শেষ দিকে এসে এসব নিয়ে ভাবনার সূত্রপাত। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পাওয়া স্বাধীনতা সেই ভাবনাকে ত্বরান্বিত করেছে।

বই পড়ার প্রতি আগ্রহ ছোট থেকেই। আস্তে আস্তে বই পড়া কমলেও বই কেনা কমেনি। বইয়ের প্রতি একটা আলাদা ভালো লাগা ছিল। নতুন কিছু করার পরিকল্পনা যখন মাথায় ঘুরপাক করছিল, তখনই বই নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে জাগে ইফতেখারের। ভাবনা থেকেই সহকর্মী মাহাফুজুর রহমানকে নিয়ে ২০১৮ সালে শুরু করেন অনলাইন বুক শপ ‘অবসর’।

অবসর সম্পর্কে জানতে চাইলে ইফতেখার বলেন, ‘অবসরকে অনেকেই মূলত অনলাইন বুক শপ হিসেবে চেনে। যদিও আমরা শুধু একটি অনলাইন বুক শপ নই। অবসর মূলত একটি কমিউনিটি বেজড বই ক্রয়-বিক্রয়ের প্ল্যাটফর্ম। আমাদের শুরুটা রাজশাহী শহরকে কেন্দ্র করে ছিল। বর্তমানে রাজশাহী, রংপুর ও কুমিল্লা শহরে আমাদের মোট ৫টি কমিউনিটি হাব রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য বইকে পাঠকের কাছে যতটা পারা যায় সহজলভ্য করা।’

‘আমাদের হাবগুলোতে স্টকে থাকা বই আমরা মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি করে থাকি। যেসব শহরে এখন আমাদের হাব নেই সেসব শহরগুলোতে বিভিন্ন ডেলিভারি এজেন্সি ও কুরিয়ারের মাধ্যমে বই পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য দেশব্যাপী এমন কমিউনিটি হাব প্রতিষ্ঠা করে দ্রুততম সময়ে পাঠকদের কাছে বই পৌঁছে দেওয়া। আমরা অন্য অনলাইন শপগুলোর মতো ঢাকা নির্ভর কার্যক্রমও পরিচালনা করি৷ আমাদের লক্ষ্য পুরো দেশে আমাদের ‘কমিউনিটি হাব’ প্রতিষ্ঠা করে সবচেয়ে দ্রুত পাঠকদের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী বই পৌঁছে দেওয়া। যেহেতু আমরা এখনও একটি স্টার্টআপ, আমাদের সে লক্ষ্যে পৌঁছতে সময় লাগবে তা আমরা জানি’, বলেন তিনি৷

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালে আরও অন্তত ১২টি শহরে হাব চালু করা। এর মধ্যে কয়েকটি প্রক্রিয়াধীন। Pay Less, Read More এই স্লোগানকে নিয়ে কাজ করা অবসর এর আরেকটি বড় উদ্দেশ্য পাঠক তৈরি করা। কমিউনিটি হাব আমাদের এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকে সহজতর করার অন্যতম একটি উপায়। আমাদের একটা ভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে, আমরা শুধু বই বিক্রিই করি না, আমরা পাঠকদের কাছ থেকে বই কিনিও। যদিও পুরাতন বই সংগ্রহ এখন পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব হাবগুলোতে একাডেমিক বইয়েই সীমাবদ্ধ রয়েছে, আমাদের লক্ষ্য হাবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আমরা পাঠক চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের পুরাতন বই সংগ্রহ শুরু করব। এতে যারা বেশি বেশি বই পড়তে চান, তারা উপকৃত হবেন আশা করছি। আমাদের এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে জাতীয় পর্যায়েও স্বীকৃতি পেয়েছে। গত বছর আইসিটি ডিভিশন আয়োজিত ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ: চ্যাপ্টার-২’ এ আমরা দেশসেরা ১০টি স্টার্টআপের একটি নির্বাচিত হই।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইফতেখার বলেন, ‘অবসর অনেকটা আমার ব্রেইন চাইল্ডের মতো। অবসরকে নিয়ে স্বপ্নটা তাই অনেক বড়। দেশের প্রতিটি পাঠক অবসরের নাম জানবে এমনটা প্রত্যাশা। টেকনাক থেকে তেঁতুলিয়া সাড়ে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে পাঠকদের কাছে পৌঁছে যাবে অবসর-স্বপ্নটা এমনই। আর শহরগুলোতে অবসরের এমন কিছু আউটলেট করতে চাই, যেখানে পাঠকরা এসে বই নেড়েচেড়ে দেখবে, বসে বই পড়বে আর পছন্দমতো বই কিনে নিয়ে যাবে।’

‘আমার আরেকটা ইচ্ছে আছে, প্রতিটি পাড়ায় যাতে অন্তত একটা লাইব্রেরি থাকে। শিশু থেকে বয়স্ক সবাই বই পড়বে। পরিবর্তনের কথা বললে আসলেই মানসিকতার পরিবর্তনটাই সবার আগে করতে হবে। সেজন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প দেখি না। যারা বই পড়ে, তারা সবচেয়ে শুদ্ধ মানসিকতার হয় এটা আমার বিশ্বাস। আর এই শুদ্ধ মানসিকতার মানুষই পারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে’, বলেন তিনি।


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়