ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অ্যান্টার্কটিকা ছিল যথেষ্ট উষ্ণ!

জাহাঙ্গীর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২৫ এপ্রিল ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অ্যান্টার্কটিকা ছিল যথেষ্ট উষ্ণ!

বর্তমানে অ্যান্টার্কটিকায় জলের গড় তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। ছবি : সায়েন্স ডেইলি

জাহাঙ্গীর সুর
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল : অ্যান্টার্কটিকার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পাহাড়সম বরফের ফালির চেহারা। বুকে তার দক্ষিণ মেরু। চারধার ঘিরে দক্ষিণান্তের সমুদ্র। অ্যান্টার্কটিকা মহদেশ নিয়ে মানুষের, বিশেষ করে অভিযাত্রীদের কৌতূহলের অন্ত নেই। ভবিষ্যৎ জলবায়ু সম্পর্কে পূর্বাভাস পেতে বিজ্ঞানীরাও ছুটে যান অ্যান্টার্কটিকায়।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বিজ্ঞানী এর চেয়েও বেশি কিছু করে দেখালেন। এই দলে ছিলেন ভূগোলবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক, ভূপদার্থবিজ্ঞানী, ভূরসায়নবিদ এবং একজন জলবায়ু-পদার্থবিজ্ঞানীও। তারা দৃষ্টি ফিরিয়েছিলেন প্রাচীন অ্যান্টার্কটিকায়।
 
বাস্তবে নয়, তত্ত্বের কাল্পনিক মডেলের ওপর ভর করে তারা পৌঁছে গিয়েছিলেন কয়েক কোটি বছর পেছনের অ্যান্টার্কটিকায়। সেখান থেকে তারা ফিরেও এসেছেন। আর সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন এই খবরটা- ওই দূর অতীতে অ্যান্টার্কটিকা উষ্ণ ছিল!

দূর অতীত বলতে ৪ কোটি থেকে ৫ কোটি বছর আগের কথা। ভূতাত্ত্বিক বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী এই সময়টাকে বলা হয় ইওসেন যুগ। সেই যুগে কেমন ছিল অ্যান্টার্কটিকা, সেখানে তাপমাত্রা কতখানি উষ্ণ ছিল- এসবই ছিল জানবার বিষয়।

অবশ্য অতীতের সেই অ্যান্টার্কটিকার সব অংশের তাপমাত্রা মাপার চেষ্টা করা হয়নি।
অ্যান্টার্কটিকা আয়তনে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিগুণ। এর ৯৮ ভাগই সমুদ্র। এই সমুদ্র আসলে বরফ-সাগর। এই সাগরের একেকটা বরফ-ফালির পুরুত্ব গড়ে দুই কিলোমিটার।

কিন্তু ইওসেন যুগে? যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাই-অক্সাইডের আধিক্য ছিল, কেমন ছিল এই সাগরের চেহারা? বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্টার্কটিকার এই জলরাশির কিছু অংশের তাপমাত্রা আজকের ক্যালিফোর্নিয়া কিংবা ফ্লোরিডার মতো উষ্ণ ছিল। এই উষ্ণতা বিরাজ করেছে বহু বছর ধরে।
 
মার্কিন বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন অতীতকালের তাপমাত্রা পরিমাপের নতুন এক পদ্ধতি ব্যবহার করে। যেমন, অ্যান্টার্কটিকার বরফভূমির ভেতর থেকে খুঁজে বের করা হয় ফসিল শেল। এই ধরনের ফসিল শেলে থাকে অতিবিরল কিছু আইসোটোপ (একই মৌলের ভিন্ন ভিন্ন ভর)। এসব তেজস্ক্রিয় আইসোটোপই বলে দেয় অতীতের খবর।
 
ইয়েলের বিজ্ঞানীরা কার্বন-১৩ ও অক্সিজেন-১৮- এ দুটো তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ নিয়ে গবেষণা করেন। পরে ভূ-থার্মোমিটারের মানের সঙ্গে মিলিয়ে কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে জানা যায়, ইওসেন যুগে অ্যান্টার্কটিকার কিছু অংশের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে আজকাল এরকম তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
 
অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণ প্যাসিফিক সমুদ্রের কিছু অংশের তাপমাত্রা ছিল আরো বেশি, ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে ফ্লোরিডার সমুদ্রজলের তাপমাত্রা এ রকম।

গবেষণার সঙ্গে জড়িত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও ভূপদার্থবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক হেগিট অ্যাফেক বলেছেন, তাদের এই গবেষণার গুরুত্ব অনেকখানি। ভবিষ্যতে জলবায়ু কেমন হবে তা বোঝার জন্য এই গবেষণা অনুসরণ করেই আবহাওয়া-মডেল তৈরি করা সহজ হবে। অতীতকে পড়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যাবে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে।

এই গবেষণার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল প্রবন্ধ আকারে ছাপা হয়েছে প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে।

তথ্যসূত্র : সায়েন্স ডেইলি।

রাইজিংবিডি/জাহাঙ্গীর/শাহনেওয়াজ/ক.কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়