ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘সামাজিক মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা শক্তিশালী ধারায় দাঁড়িয়েছে’

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সামাজিক মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা শক্তিশালী ধারায় দাঁড়িয়েছে’

রাইজিংবিডির স্টলে পিয়াস মজিদ (ছবি : সাইফ রাজু)

পিয়াস মজিদ মূলত কবি হলেও সাহিত্যের সব শাখায় তার বিচরণ। সৃষ্টিপ্রিয় সমালোচক। জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লায়। পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মরত আছেন বাংলা একাডেমিতে। সাহিত্য রচনার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন এইচএসবিসি কালি ও কলম পুরস্কার, সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার। কলকাতা থেকে অর্জন করেছেন আদম লিটল ম্যাগাজিনের তরুণ কবি সম্মাননা ও দাঁড়াবার জায়গা সাহিত্য পুরস্কার। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে আসেন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাইজিংবিডি ডটকমের স্টলে। এ সময় সমকালীন সাহিত্য নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ।

সাইফ বরকতুল্লাহ : মেলা তো দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ চলে গেল, কেমন দেখলেন?

পিয়াস মজিদ : খুবই ভালো। বইমেলায় যে আবেগ অনুভূতি কাজ করে, সেটা মূলত একুশে ফেব্রুয়ারিকেন্দ্রিক থাকে। এর আগে পয়লা বসন্ত, আরো নানা উদ্যোগ, সরকারি ছুটির দিন সব মিলে মানুষের বিপুল যে আগ্রহ থাকে সেটা কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমদিন থেকেই মেলা জমে উঠেছে। আগে আমরা দেখতাম এক সপ্তাহ পার হবার পর মেলা জমত। আগে যেটা ছিল যে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সবাই বই কিনত, বই প্রকাশও দেরি হতো। কিন্তু এখন মেলা শুরুর দিকেই বই প্রকাশিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় বই কিনতে শুরু থেকেই মেলায় চলে আসে পাঠকরা। সবকিছু ইতিবাচক মনে হচ্ছে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনার এবার তিনটি নতুন বই বেরিয়েছে। বইগুলোর বিষয়বস্তু কী?

পিয়াস মজিদ : বইগুলো হলো কবিতার বই ‘নিঝুম মল্লার’। এটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। এ ছাড়া অন্যপ্রকাশ থেকে বেরিয়েছে স্মৃতিকথা নিয়ে গ্রন্থ ‘স্মৃতিসত্তার সৈয়দ হক’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন চারু পিন্টু। মাওলা ব্রাদার্স থেকে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ‘মনীষার মুখরেখা’। এটি প্রবন্ধগ্রন্থ। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ।

সাইফ বরকতুল্লাহ : স্মৃতিসত্তার সৈয়দ হক গ্রন্থ নিয়ে একটু বলবেন?

পিয়াস মজিদ : স্মৃতিসত্তার সৈয়দ হক গ্রন্থে তার (সৈয়দ শামসুল হক) স্মৃতি যেমন আছে, সাহিত্য আছে। তাকে নিয়ে আমার লেখা বিশ্লেষণ আছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, আমার বিভিন্ন সময়ে নেওয়া সৈয়দ হকের তিনটি সাক্ষাৎকার স্থান পেয়েছে। এই বইটি নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করেছি। কারণ তিনি সদ্য পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনি তো অনেক বিষয় নিয়ে লিখছেন। কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প। মাঝে মাঝে সাক্ষাৎকারও দেখছি। আপনি কী বিষয় নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন?

পিয়াস মজিদ : মূলত কবিতাই লিখি। কিন্তু গদ্য হচ্ছে কবিতারই আসলে সহোদর। সেজন্য গদ্য আমি সবসময় লিখি। অনেক সময় প্রাবন্ধিক গদ্য, অনেক সময় গল্প। গল্প কম লিখেছি মাত্র একটা বই বেরিয়েছে। আমি মনে করি সাহিত্যের সব মাধ্যমই গুরুত্বপূর্ণ। যে মাধ্যমেই কাজ করি সেটা যেন ভালো, উন্নত হয়, যথাযথ ও নতুন কিছু হয়- এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কবিতায় যেমন নতুন শব্দ অন্বেষণ করতে হয়, ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করতে হয়, গদ্য লিখতেও কিন্তু সেই পথ অনুসরণ করতে হয়।

সাইফ বরকতুল্লাহ : ইদানিং একটা অভিযোগ শোনা যায় যে সম্পাদনা ছাড়াই বই বের হচ্ছে, বইয়ের মান কেমন- তবে এর মাঝেই কিন্তু অনেক লেখক বের হয়ে আসছেন। অনেক নবীন লেখক ভালো লিখছেন। এ নিয়ে আপনার ভাবনা?

পিয়াস মজিদ : এটা গুরুতর বিষয়। আমি মনে করি শুধু প্রকাশকরা দায়ী নয়, এটার দায় সবার। কিছু মৌসুমী লেখক আছেন, সারা বছর সাহিত্যের সঙ্গে যাদের কোনো যোগাযোগ নেই, বইমেলা আসলে ঝাঁপিয়ে পড়েন, এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বলা যায় এটা চলবেই, এর মাধ্যমেই প্রকৃত লেখক বেরিয়ে আসবে। আবার প্রকাশকদেরও একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে- লেখকরা যে পাণ্ডুলিপি দিচ্ছেন, হুবহু তা প্রকাশ না করে সম্পাদনা করা। অবশ্যই সম্পাদনা পরিষদ দেখে তারপর প্রকাশ করার দায়িত্ব প্রকাশকদের।

সাইফ বরকতুল্লাহ : এখন ফেসবুক কিংবা সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই সাহিত্যচর্চা করছেন। সেখানে অনেকেই ভালো ভালো লেখা দিচ্ছে, সেটা ছোট হোক, এখানেও কিন্তু বাংলা সাহিত্যের একটা উন্মেষ হচ্ছে। এ বিষয়টা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

পিয়াস মজিদ : এটা বৃহৎক্ষেত্র। মুদ্রিত মাধ্যমে যে সাহিত্য চর্চা হয়, এর সমান্তরালে কিন্তু একটি শক্তিশালী ধারায় দাঁড়িয়ে গেছে অনলাইন, সামাজিক মাধ্যম। আপনি দেখবেন, বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা ব্লগ সংকলন বের করছে, এটির ভিত্তিতে অনেক প্রকাশনা সংস্থাও নতুন আত্মপ্রকাশ করছে। এখানে অনেক তরুণ প্রতিভাবান লেখক পাবেন, তারা পত্র-পত্রিকায় হয়তো লিখছেন না, তবে তাদের লেখা দেখলে আপনাকে চমকে উঠতে হবে নতুনত্বে, ভাবনা, বিশ্লেষণে। এটাতে আশঙ্কা হবার কোনো কারণ নেই (মুদ্রিত মাধ্যম বিলুপ্ত হবে) বরং এই মাধ্যম আরো শক্তিশালী হচ্ছে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনি সম্প্রতি কলকাতা ঘুরে এসেছেন। এপার বাংলা-ওপার বাংলা সাহিত্যের মেলবন্ধন নিয়ে আপনার ভাবনা?

পিয়াস মজিদ : প্রত্যেক জায়গায় ভাষাগত ঐক্য আমাদের আছেই। তবে দূরত্ব কমেছে। যেমন ধরেন ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের একজন লেখক সহজেই কলকাতার ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখতে পারছেন। কলকাতার লেখকরাও ঢাকার পত্র-পত্রিকায় লিখছেন। আমি বলব ভাবনাগত বিনিময় অনলাইনের ফলে সহজেই হচ্ছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, বাংলা ভাষার বিস্তৃতি এখন বিশ্বজুড়ে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?

পিয়াস মজিদ : কাব্যনাট্য লেখার ইচ্ছে আছে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

পিয়াস মজিদ : আপনাকেও। রাইজিংবিডির পাঠকদের শুভেচ্ছা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সাইফ/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়