ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাহিত্যে বর্তমান বলতে কিছু নেই : মোজাফফর হোসেন

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাহিত্যে বর্তমান বলতে কিছু নেই : মোজাফফর হোসেন

আরিফ সাওন : ‘সাহিত্যে আসলে বর্তমান বলতে কিছু নেই। যেমন আমি একটি ঘটনা নিয়ে লিখব- শাহবাগ আন্দোলন। আমি লিখব এর ইমপ্যাক্ট নিয়ে। আমি এটিকে বর্তমান ঘটনা বলব, আসলে তা  নয়। ওটা অতীতে হয়ে গেছে। আমি যখন অতীতে দেখব তখন তার ইমপ্যাক্ট নিয়ে গল্প বলতে পারব। সাহিত্য আসে অতীত থেকেই। তার একটা প্রভাব ভবিষ্যতের দিকে ছুড়ে দিই আমরা। এটি চলে যায়, স্বাভাবিকভাবে ভবিষ্যতের দিকে চয়ে যায়।’

বুধবার সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘সমকালীন সাহিত্য ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন এ কথা বলেন।

গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাইজিংবিডি স্টলে এ বৈঠকের আয়োজন করে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম।

মোজাফফর হোসেন বলেন, আমাদের দেশে সমকালীন ভাবনা বলতে কোনো কিছু ছোট পরিসরে দেখা, স্কান করে দেখার মতো বোঝায়। যেমন এই ১০ বছরের ভাবনাটা কী? আন্তর্জাতিকভাবে যখন বিষয়টি আনা হয়, তখন তা কমপক্ষে ৫০ বছরের পরিসরে ব্যাপ্ত হয়। এই সমকালীন প্রেক্ষাপটে আমরাও পড়ি, আগের প্রজন্মও পড়ে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে যখন ভাবি তখন গণ্ডি ছোট করে ফেলি। কিন্ত ব্যাপারটা তা নয়। ব্যাপারটা অনেক বড়। সমকালীনতা বলতে আসলে বোঝায় একটি সময়সীমার মধ্যে সব ধরনের লেখালেখি। সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে হোক বা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। তার মানে সময়সীমার মধ্যে লিখিত আকারে যা আসবে সেটা সমকালীন এবং তার মধ্য দিয়ে একটা ধরন বা প্রকৃতি তৈরি হবে। সেই প্রকৃতি যদি অতীতমুখী হয় তাহলে বোঝা যাবে সমকালীন গল্পের প্রবণতা অতীতমুখী। ওই সমসাময়িক বিষয়বস্তু তারা এড়িয়ে যাচ্ছে। এটি একটি প্রবণতা কিন্তু গল্পগুলো সমকালীন। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, এই সময়ের গল্পকার হয়ে আমি কী লিখব? আমার বয়স এখন ২৮ বছর। আমি যে টাইম ফ্রেমে আছি, আমার দেখার বয়স হয়তো ১৫ বছর, আমি কি এই সময়ের মধ্যে লিখব? এটা একটা ব্যাপার। আবার আমার চিন্তা-চেতনা ১০ বছরের হলে আমি বিশাল বড় ইতিহাসের মধ্যে পড়ে গেছি। তা ছাড়া ১৯৪৭ সালের কোনো ঘটনা এখন লিখলে তাও সময়োপযোগী।

এখন মহাজন নেই। মহাজন নিয়ে গল্প লিখতে হলে বর্তমান সময়ের উপযোগী করে লিখতে হবে অন্যভাবে। সরাসরি মহাজনের যে ট্রিটমেন্ট দিই গ্রামে, অনেকে শহরে বসে মনে করতে পারেন মহাজন আছে গ্রামে, সুদ নেয়- এসব। আসলে মহাজন এখন নেই। আমি দেখেছি, সমকালীন কোনো কোনো গল্পকার ওই মহাজনকে উপজীব্য করে ওই রকম একটা গল্প লিখছেন। আমি বলি এটার দরকার নেই। এখন মহাজনের জায়গায় অন্যজন এসছে- ব্যাংক এসেছে, বিমা এসেছে, যারা গ্রামের মানুষগুলোকে ওইভাবে ট্রিট করছে। তার মানে এই রূপান্তরগুলো যদি আমি এখানকার প্রজন্মকে বোঝাতে পারি যে, আমাদের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাহলে তা কাজে আসবে।  আমি গ্রামের বা হোক সব জায়গার। সময়ের কোনো বিষয় নিয়ে লিখলে ২০/৩০ বছর পরে ওই প্রেক্ষাপটটা পরিবর্তন হবে, তখন সেটি লিখিত গল্পের মধ্য দিয়ে ইতিহাস হিসেবে ধরা হবে। জানা যাবে ওই সময়ে ওই কালে এই ব্যাপারগুলো, ব্যবস্থাগুলো সমাজে ছিল।

সময়ের বিচারে গল্পের আবেদন টেকা না-টেকার বিষয়ে তিনি বলেন, গল্প টিকে যাওয়া, না-যাওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই নির্ধারণ করা যায় না। কোনটা টিকবে, কোনটা টিকবে না- একটা ভালো গল্প টিকতে পারে, একটা খারাপ গল্পও টিকতে পারে। এটা সময়ের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

গল্পের কাঠামোর ব্যাপারে তিনি বলেন, আগে থেকে ভেবেচিন্তে কাঠামো ঠিক করার মনে হয় কিছু নেই। কাঠামো যেদিকে যাবে যাক। আমার মনে হয় না, ফর্ম নিয়ে খুব বেশি ভাবার আছে। আমার গল্পটা কোন কাঠামোকে বেছে নিচ্ছে, সেটা হলো প্রকৃত বিষয়।

রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়ের সভাপতিত্বে ও সাহিত্যিক মনি হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন এ সময়ের জনপ্রিয় ছয় লেখক। তারা হলেন মাসউদ আহমাদ, মোজাফফর হোসেন, ম্যারিনা নাসরীন, মাহবুব ময়ূখ রিশাদ, এনামুল রেজা ও শাশ্বত নিপ্পন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন রাইজিংবিডির সহকারী বার্তা সম্পাদক রাসেল পারভেজ, রাইজিংবিডির সহসম্পাদক সাইফ বরকতুল্লাহ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ সাওন/রাসেল পারভেজ/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়