ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কাজী নজরুলের রসবোধ নিয়ে ‘রসিক নজরুল’

রেজাউদ্দিন স্টালিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাজী নজরুলের রসবোধ নিয়ে ‘রসিক নজরুল’

বাংলা সাহিত্যে হাস্যকৌতুক রস, হিউমার বা স্যাটায়ারের অভাব আছে- এমন অভিযোগ অতীতে না উঠলেও এখন প্রায়ই শোনা যায়। পরশুরাম থেকে শিবরাম- এই দুই ‘রাম’ ছাড়াও অনেকেই হাস্যকৌতুক রসের ফোয়ারা তৈরি করেছেন আপন গুণে।

পাঠকমাত্র জানেন, সরস আলাপচারিতায় রবীন্দ্রনাথ অনন্য। সূক্ষ্ম, তীক্ষ্ম, তীর্যক সেসব বয়ান। উদাহরণ অনেক দেয়া যায়। তাপস রায় সেসবের কিছু সংকলন করে লিখেছেন ‘রসিক রবীন্দ্রনাথ’। এবার একই ধারায় লিখেছেন ‘রসিক নজরুল’। বাংলা সাহিত্যে প্রত্যেক কবির একটা ভাবমূর্তি দাঁড়িয়ে যায়। কেউ পল্লীকবি, কেউ বিশ্বকবি, নাগরিক কবি, আধুনিক কবি, মরমী কবি, বিপ্লবী কবি, গণমানুষের কবি ইত্যাদি। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাগ্যেও একটি পদবি তৈরি হয়ে গেছে সেই ১৯২০ সাল থেকে ‘বিদ্রোহী কবি’।

অনেকের ধারণা নজরুলের জীবনে শুধুই বিদ্রোহ, শুধুই ঝড়ের তাণ্ডব। প্রকৃত প্রস্তাবে নজরুলের জীবনে যে হাস্যরস, যে আনন্দময় দিক ছিল তা উপেক্ষিত থেকেছে আলোচনায়। সেই শূন্য জায়গায় আলো ফেললেন লেখক তাপস রায়। ‘রসিক নজরুল’ শীর্ষক একটি দুর্দান্ত গ্রন্থ রচনা করে তিনি আমাদের সামনে তুলে আনলেন আরেক অজানা নজরুলকে।

গ্রন্থের মুখবন্ধে হায়াৎ মামুদ লিখেছেন: ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’- এমন এমন অদ্ভুত শিরোনামে কবিতা- ভাবা যায়! তাপস রায় রসিক নজরুল লিখে ভুল করেননি।’

গ্রন্থের মূল্যায়নমূলক লেখায় আহমদ রফিক একটা মানবিক গোপনকে স্পর্শ করতে চেয়েছেন- ‘তাপসের বই পড়লে মনে হতে পারে, নজরুল যেমন প্রবল উচ্ছ্বাসে হাসতেন এবং অন্যদেরও হাসাতেন। আসলে সেটাই শেষ ও সব কথা নয়। দারিদ্রাবস্থার সঙ্গে বরাবর লড়াইয়ে নজরুলের এসব হাসি ঠাট্টার নেপথ্যে ছিল সঙ্গোপন কান্না।’

‘যৎকিঞ্চিৎ’ শিরোনামে তাপস রায় নিজেই বলেছেন, ‘নজরুল বাঁধনহারা ছিলেন। তাই বলে প্রতিপক্ষকে কখনো কটূবাক্যে আক্রমণ করেছেন তাঁর শত্রুরাও একথা বলবে না। তবে প্রয়োজন হলে জবাব দিয়েছেন হাসির গান গেয়ে অথবা ব্যঙ্গ ছড়া লিখে। যেমন কবি গোলাম মোস্তফা যখন নজরুল সম্পর্কে লিখলেন:

‘কবি নজরুল ইসলাম
বাসায় একদিন গিছলাম
ভায়া লাফ দেয় তিনহাত
হেসে গান গায় দিন রাত...।’

নজরুল এর উত্তরে লিখলেন:

‘গোলাম মোস্তফা
দিলাম ইস্তফা।’

তাপস অনুসন্ধিৎসু লেখক। এই বইটি রচনার আগে তিনি বিস্তর জানতে চেষ্টা করেছেন নজরুল সম্পর্কে। বইয়ের সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি দেখলে বোঝা যায় পরিশ্রমের পরিধি। মেম সাহেবের বাংলা, বৈঞ্চব তো নয়, অভিনব মিল, ডাবজল, সত্যিকার সম্পর্ক, চায়ের নেশা, পঞ্চমুদ্রা কোরবানী, ঘটক, এত চা এত জল, কাকের তাড়া,, তেঁতুল গাছে দই, কলজে দিয়ে গান ইত্যাদি শিরোনামে ছোট ছোট ঘটনার বর্ণনা করেছেন যা অভিনব এবং চমকপ্রদ। ঘটনাগুলোর মধ্যে রসিকতা যেমন আছে তেমন নজরুলের ব্যক্তিত্বও সহজেই বোঝা যায়। বইয়ের এক ঘটনায় নজরুলকে চেনা যায়- তিনি বলছেন, ‘নবাবরা নজরুলকে দেখার জন্য কুর্নিশ করবে এটাই তো নিয়ম।’ কেউ অটোগ্রাফ চাইতে এলে দাম দিতে হবে এমন হাস্যরসও তিনি করতেন কখনও কখনও।

নজরুলের বিশ বছরে সাহিত্য সাধনার জীবন কিন্তু ঘটনাবহুল। এই গ্রন্থে আরো একটি ঘটনা সন্নিবেশিত হতে পারে। নিশ্চয় পরবর্তী সংস্করণে লেখক তা করবেন। একটি হলো নজরুল চমৎকার রান্না করতে পারতেন। জেলখানায় তিনি যখন রান্না করতেন সকলে খাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকত।

নজরুলের জীবন ও কর্ম থেকে নেয়া খণ্ড খণ্ড ঘটনার কোলাজ ‘রসিক নজরুল’। তাপস রায় মাইকেল মধুসূদন দত্তসহ জসীমউদ্দীন, অধুনা শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ প্রমুখের হাস্যরস গল্পের সঞ্চায়ন করতে পারেন। বর্তমান গ্রন্থটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, সামগ্রিক নজরুলকে আবিষ্কারের জন্য ‘রসিক নজরুল’-এর আবশ্যকতা অনিবার্য।

প্রকাশক: পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
মূল্য: ১৭৫ টাকা
প্রচ্ছদ: গৌতম ঘোষ

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়