ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘গরিবের নতুন বছর বইল্যা কিছু নাই’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘গরিবের নতুন বছর বইল্যা কিছু নাই’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: আগামীকাল ১ জানুয়ারি। ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন। দিনটি বরণ করে নিতে আয়োজনের শেষ নেই। মানুষ হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত- কেমন গেল গত বছর? কেমন যাবে আগামী দিন? জ্যোতিষরাও গণনা করে বলে দিচ্ছেন রাশিফল। কেননা নতুন বছর নিয়ে আগ্রহ, উদ্দীপনা আর প্রত্যাশার কমতি নেই। এই প্রত্যাশা সমাজের নানা শ্রেণি, পেশার মানুষের মধ্যে রয়েছে। আমরা জানতে চেয়েছিলাম রাজধানীর কিছু শ্রমজীবী মানুষের নতুন বছরের প্রত্যাশার কথা।

আব্দুল বারেক (৫০) রিকশাচালক। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানায় হলেও, বসবাস মোহাম্মদপুর শেখেরটেক এলাকায়। তিনি দুই বছর ধরে রাজধানীতে রিকশা চালান। তিনি জানান, আগে গ্রামে থাকতেন, মানুষের বর্গা জমি চাষ করতেন। কৃষিকাজে সংসার না চলায় পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন। শুরুতে মোহাম্মদপুর জনতা হাউজিংয়ে করেছেন নাইট গার্ডের চাকরি। বেতন কম হওয়ায়, এখন রিকশা চালান। ঘরে একটি প্রতিবন্ধী মেয়েসহ বিয়ের বয়সী তিনটি মেয়ে রয়েছে।  রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন দুই-তিনশ টাকা আয় হয়, তাতেই টেনেটুনে চলে সংসার।



আব্দুল বারেকের কাছে জানতে চাই, তার নতুন বছরের ভাবনা সম্পর্কে। তিনি বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে ভাত খাই মামা। টাকা নাই, রিকশা ছাড়া গতি নাই। বড় লোক হলে পরিকল্পনা করতাম, কোনখানে কয়টা বাড়ি করুম, কোনখানে ঘর করুম, কয়টা গাড়ি করুম। দিন আনি, দিন খাই। ধারকর্জ করে চলতে হয়। নতুন বছর নিয়ে কোনো ভাবনা নাই। দেখা যাক আল্লাহ যেভাবে নেয়।’

বাবুচন্দ্র দাসের (৪৮) বাড়ি যশোরের অভয়নগর। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ মুচির কাজ করেন ২৫ বছর ধরে। পরিবারে আছে স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে। দুই ছেলে সেলুনে কাজ করেন। এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন, আরেক মেয়ে এখনো অবিবাহিতা। তিনি জানান, ২৫ বছর ধরে এই এলাকার উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত প্রায় অনেকেই তার কাছে এসে জুতা সেলাই করে নিয়েছেন। ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ টাকা দামের প্লাস্টিকের জুতাও তিনি সেলাই কিংবা পালিশ করেন। নতুন বছরের ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গরীবের আবার ভাবনা কী? কাজ করে ভাত খাই। টাকার অভাবে ছোট মেয়েটার পড়া বন্ধ করে দিয়েছি। এই বছর বিয়ে দেব ভাবছি। তবে জিনিসের দাম বাড়ছে, গরিবের দেনা-কর্জও বাড়ছে। সরকার সব কিছুর দাম কমাক, আমরা খাইয়া পইরা বাঁচি।’



হেমায়েত উল্লাহর (৪৬) গ্রামের বাড়ি বরিশাল, থাকেন ধানমন্ডি মধু বাজার। ভ্যানে বিক্রি করেন চিতই, ভাপা পিঠা। তিনি মৌসুমী বিক্রেতা। বছরের অন্য সময় ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন। তিনি জানান, পিঠা বিক্রিতে তার প্রতিদিন আয় হয় ৩০০ টাকা। এই দিয়েই তার পরিবার চলে।

ধানমন্ডি স্টাফ কোয়াটার এলাকায় কথা হয় হেমায়েত উল্লাহর সঙ্গে। জানতে চাই নতুন বছরের ভাবনা সম্পর্কে। তিনি বলেন, ‘গরিবের নতুন বছর বইল্যা কিছু নাই। যেখানে রাইত, সেইখানে কাইত। নাই টাকা, পয়সা, সম্পত্তি। ফুটপাতে ব্যবসা করি তারও গ্যারান্টি নাই। এই বয়সে আর কি করুম? হকারি করেই বাকি জীবন পার করতে চাই।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়