ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রধান বিচারপতির কাছে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরলেন অ্যাটর্নি

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রধান বিচারপতির কাছে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরলেন অ্যাটর্নি

নিজস্ব প্রতিবেদক : অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের বিচার বিভাগের অবক্ষয় ঘটেছে। সাধারণ জনগণের কাছে এ আদালতের যে ভাবমূর্তি ছিল তাতে পরিবর্তন ঘটেছে। আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভেতরে একটি বিরাট অংশ ইতিমধ্যে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করে আদালতের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের দৃঢ় পদক্ষেপ কামনা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

রোববার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভেতরে একটি বিরাট অংশ ইতিমধ্যে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন এবং যারা এখনো সৎ আছেন, এভাবে চলতে থাকলে তাদের পক্ষেও সততা বজায় রাখা কঠিন হবে।

তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয়টি, তা হলো, বিশেষ বিশেষ কোর্টের, বিশেষ বিশেষ আইনজীবীর কোর্ট হয়ে গেছে এবং অনেক সময় অনেক সিনিয়র অ্যাডভোকেটের কাছ থেকে ব্রিফ নিয়ে তাদেরকে নিয়োগ দান করা হচ্ছে।

মাহবুবে আলম বলেন, বিচারপ্রার্থী ব্যক্তিগণ অনেকে জেনে গেছেন, কোন কোর্টে কাকে নিয়ে গেলে মামলা জেতা যাবে। এটা তো ন্যায়বিচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ বিষয়ে অনেকেই ছুটছেন বিচারপতিদের সন্তান-স্ত্রীদের কাছে, যারা আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত আছেন, এই চিন্তা করে যে, এদেরকে নিয়ে গেলে হয়ত মামলায় জেতা যাবে। বিচারপতিদের আত্মীয় বা সন্তানরা আগেও এ পেশায় ছিলেন, কিন্তু কখনো এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। এখন কেন বিচারপ্রার্থীদের আচরণ এরূপ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।

তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর যাবত আমাদের বিচার বিভাগের অবক্ষয় ঘটেছে। সাধারণ জনগণের কাছে এ আদালতের যে ভাবমূর্তি ছিল তাতে পরিবর্তন ঘটেছে। ইতিপূর্বে একজন প্রধান বিচারপতিকে এই আদালতে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় আমি এ আদালতের অবক্ষয়ের কিছু নমুনা তুলে ধরেছিলাম। আমার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তদন্তের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তদন্ত অনেকটা অগ্রসরও হয়েছিল। কিন্তু যখন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি আসলেন, উনার দপ্তর থেকে সেই ফাইলটি নিখোঁজ হয়ে গেল।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের বিধানমতো আপনি ২০২১ সনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির পদে আসীন থাকবেন। এ সময়টা একটি দীর্ঘ সময়, প্রায় চার বছর। আমাদের বিচার বিভাগের বর্তমানের যে অবস্থা, আপনার এই সময়কালে তাতে আপনি আমূল পরিবর্তন আনতে পারেন, যদি এ বিষয়ে আপনি দৃঢ়ভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন।

তিনি বলেন, চার বছর আগে দায়ের করা মামলা লিস্টে বহাল তবিয়তে আছে, অথচ দুই মাস আগে দায়ের করা মামলা চূড়ান্ত শুনানি হয়ে যাচ্ছে। আদালতের কিছু অসাধু কর্মচারী মামলা নিচের থেকে উঠানোর কাজ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। কিছু মামলা শুনানি করা যাচ্ছে না। আবার কিছু মামলা শুনানি হয়ে যাচ্ছে রকেট গতিতে।

তিনি আরো বলেন, আমরা যখন এই আদালতে ঢুকলাম তখন দেখেছি, একটি মামলা শুনানি হয়েছে এবং তার রায় দেওয়া হয়েছে সাথে সাথে। কালেভদ্রে দু-একটি মামলা রায়ের জন্য সিএভি করে রাখা হতো এবং আগের মামলার রায় শেষ হওয়ার পরে পরবর্তী মামলাটি ধরা হতো। এখন দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো আদালতে বিনা নোটিসে মামলা আংশিক শ্রুত হচ্ছে। অনেক মামলা শুনানির পরে রায় দেওয়া হচ্ছে না দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। আবার দেখা যায় মামলার রায় হলেও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হচ্ছে না মাসের পর মাস।

দেশের প্রধান এ আইন কর্মকর্তা বলেন, আদালতে যোগদানের পর দেখেছি, ঠিক সকাল সাড়ে ১০টায় অনেক বিচারপতি এজলাসে বসতেন। কোর্টে আসীন হওয়া ও কোর্ট থেকে নেমে পড়ার ব্যাপারে কজ লিস্টে যে সময় দেওয়া আছে তার কোনো ব্যত্যয় হতো না। কিন্তু এখন কজ লিস্টের যে সময় ধার্য করে দেওয়া হয়েছে তার সাথে বিচারকদের আদালতে ওঠা বা নামার কোনোই সংগতি নেই। এ অবস্থা চললে বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, কোনো কোনো বেঞ্চে বিচারপতিরা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তার বেঞ্চ অফিসারের ওপর। আইনজীবীদের কথায় তারা কর্ণপাত করেন না। তারা পরিচালিত হন তাদের বেঞ্চ অফিসারদের প্রভাবে। ইতিমধ্যে একজন বিচারপতি অবসরে গিয়েছেন। তার প্রতিটি মামলার রায়ই ছিল একই রকম বাক্যসমৃদ্ধ এবং অনেকে হাসাহাসি করতো এই কথা বলে যে, তার হয়ে তার রায় লিখে দিচ্ছে তার বেঞ্চ অফিসার। এছাড়া তিনি অবসরে যাবার পূর্বে মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত না হওয়া এবং কজ লিস্টে মামলাটি না থাকা সত্বেও রায় প্রদান করেন। কোনো কোনো বিচারপতি মামলা কজ লিস্টে না এনেও জামিন বা স্থগিত আদেশ প্রদান করছেন যা ইতিমধ্যে আপনাদের দৃষ্টিগোচরে এসেছে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? ইতিমধ্যে আদালতের রায় নিয়ে জাল-জালিয়াতি শুরু হয়ে গেছে। আদালত থেকে জামিন দেওয়া হয়নি, অথচ জামিনের কাগজ তৈরি করে আসামিরা জেল থেকে বেড়িয়ে গেছে। কীভাবে ইনফরমেশন টেকনোলজিকে আদালতের কাজে আরো ব্যবহার করা যায়, সে ব্যাপারে নিশ্চয়ই আপনি ব্যবস্থা নিবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/মেহেদী/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়