ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

একজন অদম্য নারী শিরিনা বিথী

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ২৭ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একজন অদম্য নারী শিরিনা বিথী

শিরিনা বিথী

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঝিনাইদহ শহরে। বাবার চাকরির সুবাদে শৈশব কৈশোর কেটেছে মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায়। শৈশবে মায়ের মুখেই ছড়া ও কবিতা শুনতে শুনতেই কবিতার প্রতি আগ্রহ। সেই সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমী ও বাসায় গানের ও আবৃত্তির চর্চা ছিল নিয়মিত।

জেলা সদরের বলে জাতীয় পর্যায়ে অনেকের কাছে তেমন পাত্তা পেতেন না। তবু দমে যাননি তিনি, চালিয়ে গেছেন নিজের চর্চা। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় বাংলা আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করে পেয়েছেন স্বর্ণ পদক। টেলিভিশন উপস্থাপিকা হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, বর্তমানে নিয়োজিত আছেন অধ্যাপনা পেশায়।

এই অদম্য নারীর নাম শিরিনা বিথী। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। এর আগে দীর্ঘদিন যাবত সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগে অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। বাবা শরিফুল ইসলাম ছিলেন জেলা পোষ্ট মাস্টার। মা হাফিজা ইসলাম গৃহিণী। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট। মাগুরা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ৪ বিষয়ে লেটার সহ স্টার মার্কস, ঢাকা বেগম বদরুনেসা সরকারি মাহিলা কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে এইচএসসি পাস এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রনীতি ও লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে অনার্স ২য় শ্রেণী, মাস্টার্স প্রথম শ্রেণী এবং এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।

শৈশবে মায়ের কাছেই আবৃত্তিতে হাতে খড়ি। তারপর বাসায় ও শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়মিত চর্চা। বিশেষ দিবসের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণসহ নানা অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও গান পরিবেশনা করতেন নিয়মিত। পরবর্তীতে কলেজে পড়াকালীন সময়ে মেজ ভাইয়ের সহযোগিতায় টিএসসিতে ত্রিবেনী সংগঠনে আবৃত্তির প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা শুরু। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলার মুখ’ সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংগঠনটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিএনসিসি সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০০২ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় বাংলা আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করে স্বর্ণ পদক অর্জন করেন তিনি।

২০০৪ সাল থেকে বাংলদেশ বেতারের উপস্থাপক, আবৃত্তিশিল্পী, নাট্যশিল্পী, সংবাদ উপস্থাপক, অনুষ্ঠান সঞ্চালক, ঘোষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন সহ বিভিন্ন বেসরকার টেলিভিশনের আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও প্রামান্য চিত্রে নিয়মিত কন্ঠশিল্পী। বর্তমানে এশিয়ান টেলিভিশনে মাদক, সন্ত্রাস ও মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ও সমস্যার সমাধান নিয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘জানা উচিত’ এর সঞ্চালনা করছেন।

এছাড়া তিনি একজন কলাম লেখক। বিশেষ দিবসগুলোতে যেমন: বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিভিন্ন কলাম লেখা ও প্রবন্ধ উপস্থাপনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সমাজে একজন নারী হিসেবে এসব জায়গাগুলোতে নিজের অবস্থান তৈরি করতে দীর্ঘ সময় ধরে চর্চা ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত মুল অডিটোরিয়াম  সংগীত ও আবৃত্তি সন্ধ্যায় একক আবৃত্তি পরিবেশনা ছিল উল্লেখযোগ্য একটি অনুষ্ঠান। এছাড়া পূর্বেও বেশ কিছু একক আবৃত্তির অনুষ্ঠান আয়োজন  করেছে বেশ কিছু সংগঠন।

শিরিনা বিথীর রয়েছে ৩টি আবৃত্তির অ্যালবাম। পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘আমরা  আবহমান ধ্বংসে ও নির্মাণে’ জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলামের সঙ্গে প্রকাশিত তৃতীয় অ্যালবাম। এছাড়া শফিকুল ইসলাম বাহারের সঙ্গে ‘বিশ্বের সেরা মানুষের প্রেমপত্র’ অ্যালবামটি প্রথম এবং কবি দিলদার হোসেনের লেখা কবিতা ‘প্যারিস কাব্য’ অ্যালবামটি আবৃত্তির দ্বিতীয় একক অ্যালবাম।

দীর্ঘ ৬ বছর ধরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে প্রচারিত লাইভ অনুষ্ঠান সঞ্চালন করা তার উল্লেখযোগ্য কাজের একটি। পেশায় শিক্ষক হলেও আবৃত্তি ও উপস্থাপনার কাজটি শখের বশে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চালিয়ে যেতে চান। সেই সঙ্গে সমাজের অবহেলিত নারী ও শিশুদের অধিকার আদায়ে তাদের  জন্য কাজ করতে চান অদম্য নারী শিরিনা বিথী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়