ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘চাপের কাছে মাথানত করবেন না’

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘চাপের কাছে মাথানত করবেন না’

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের চাপের কাছে মাথানত না করার আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা দুদককে ভয় পাবেন না। ভয়ের কিছু নেই। দুদক কোনো ভয়ের বস্তু নয়। দুদকের একটি আইন আছে। সেই আইনে আপনি চাইলেও পালাতে পারবেন না। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত মামলা হবে না, যতক্ষণ আপনার বিরুদ্ধে কাগজপত্রে প্রমাণ পাওয়া না যায়। সেই কাগজপত্র যদি চাপওয়ালার কাগজপত্র হয়, তাহলে আপনি বেঁচে যাবেন। আবারও বলছি, চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। কারণ চাপওয়ালা আপনাকে বাঁচাতে পারবেন না।’

ঘুষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘যারা ঘুষ নেন তাদেরকে আমরা ধরছি। যারা বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয় তাদেরকে আমরা ধরছি না। তবে অনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ঘুষ দেন সেই ঘুষ দাতা এবং গ্রহীতাকেও ধরা হবে।

চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সরকারি কর্মকর্তাদের  ‘ভয় না পাওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আপনার ভুল আমরা অ্যালাউ করব। কিন্তু আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, সেই ভুল আপনি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেননি। সেই ভুল আপনি সরল বিশ্বাসে করেছেন। দুর্নীতি ঘটার আগেই প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা মামলা-ধরপাকড় চাই না। একটি মামলা হলে কি দুদক আনন্দ পায়? একজনকে ধরে নিয়ে গেলে কি দুদক আনন্দ পায় ? সেই লোকটি তো আমার আত্মীয়ও হতে পারে।’

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল পর্যায়ে শিক্ষায় অনিয়ম বন্ধের টার্গেট নেওয়া হয়েছে। যারা স্কুলে পড়ে, তাদের সঠিক শিক্ষাটা দিতে হবে। কয়েকটি স্কুলে গিয়ে আমি হতাশাজনক চিত্র দেখেছি। ক্লাসে টিচারকে যেতে হবে। অবশ্যই যেতে হবে। আমার বাচ্চা এ-প্লাস পেল কি-না সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। যদি ক্লাসে টিচার ভালোভাবে পড়ায় তাহলে এমনিতেই এ-প্লাস পাবে। আমরা ক্লাস টেন পর্যন্ত টার্গেট করেছি। ১০ বছর যদি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে পারি, ১০ বছর পর সুশিক্ষিত নাগরিক পাব।’

বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওভার ইনভয়েসিং-এর মাধ্যমে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়। হুন্ডির মাধ্যমে যে অর্থ পাচার হয় তা খুবই কম। কিন্তু কাস্টমস-এর মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যায় তা ধরা পড়ে না। কখনো কখনো ধরা পড়লেও জরিমানার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। কিন্তু পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসে না।

এ ব্যাপারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আহ্বান জানান দুদক চেয়ারম্যান । আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে কত ওভার ইনভয়েসিং হলো, তার তালিকা মার্চে দুদকের কাছে পাঠানোর জন্য তাৎক্ষনিক নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার ফারুক আহমেদ, সিএমপি কমিশনার মো.মাহবুবর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনাসহ, চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, ওয়াসা, পিডিবিসহ বিভিন্ন সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৭ জানুয়ারি ২০১৯/রেজাউল/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়