ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

একটি ছবি, অনু হোসেন এবং বইমেলা

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একটি ছবি, অনু হোসেন এবং বইমেলা

অনু হোসেন

সাইফ বরকতুল্লাহ : ‘আজ সকাল ৫টা ২২মিনিটে অনু হোসেন শান্তির জগতে চলে গেল’- ফেসবুকে যখন এই স্ট্যাটাস দেখতে পাই, তখন আমি ব্যক্তিগত কাজে ট্রেনে কিশোরগঞ্জের পথে। মৃত্যুর খবর জেনে একটা ধাক্কা খেলাম। ট্রেনটিও ক্রসিংয়ের জন্য থেমে গেল। হালকা শীত। রোদ উঠেছে। ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি আকাশে সাদা মেঘের ওড়াউড়ি। অনু ভাইয়ের নানা স্মৃতির দৃশ্য হৃদয়ে বারবার ধাক্কা দিচ্ছে।

অনু হোসেন। অসাধারণ মেধাবী একজন মানুষ। সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগেই থাকত। অনেক পরিচয়ও আছে তার। গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক। কর্মরত ছিলেন বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক পদে। গত অক্টোবরে তিনি কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসাও হয়েছে অনেকে। মুম্বাই, কলকাতা, সবশেষ ঢাকার ডেলটা হাসপাতালে ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় কেমোথেরাপি। তিনটি থেরাপি নেয়ার পর অস্ত্রোপচার হয়। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি সকালে চিরবিদায় নিলেন তিনি।

অনু ভাই সবসময় স্মার্ট থাকতেন। বইমেলায় যতবারই দেখা হয়েছে, ইন করা প্যান্ট- শার্ট, ফুল হাতা শার্টের দুই হাতে ভাজ করা, বাম হাতে ঘড়ি পরতেন। কেউ ছবি তুলতে চাইলে দ্বিধা করতেন না। লেখালেখির বিষয়ে প্রায়ই নানা পরামর্শ দিতেন। একটা বড় হৃদয় ছিল তার। সে হৃদয়ে সবাইকে আপন করে নিতেন। বইমেলায় অনেক কথা হতো, আড্ডা হতো।

 


তিন নম্বর লোকাল গ্রন্থে অনু হোসেনের তোলা ফ্ল্যাপ ছবি

২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘তেত্রিশ নম্বর জীবন’ প্রকাশিত হয়। সেবার বইমেলায় সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম। কবি মাসুদুজ্জামান, কবি মুজিব ইরমসহ আরো অনেকে ছিলেন। আমার গল্পের বইয়ের ফ্ল্যাপে ছবিটা দেখে অনু ভাই বললেন, ‘সাইফ দাঁড়াও আগামী বইয়ের ফ্ল্যাপের জন্য তোমার ছবি তুলে দেই’। আমি বিস্ময়ে হতবাক! অনু ভাই ছবি তুলবেন আর আমি এ সুযোগ মিস করি কীভাবে? সঙ্গে সঙ্গে তার ক্যামেরায় চার পাঁচটা ছবি তুললেন। ২০১৯ বইমেলায় আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘তিন নম্বর লোকাল’ প্রকাশিত হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। প্রকাশক তাগাদা দিলেন ফ্ল্যাপ, ছবি দ্রুত দেবার জন্য। অনু ভাইয়ের তোলা দুটি ছবি গল্পকার নাহিদা নাহিদকে পাঠালাম ঠিক করার জন্য। নাহিদ ঠিক করে দিলেন। আমার বইটি এখন বাইন্ডিং চলছে। দু’একদিনের মধ্যেই বের হয়ে যাবে। কিন্তু অনু ভাইকে বইটি দেখানো সম্ভব হলো না। এ কথা ভাবতেই মনটা যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়। অনু ভাইয়ের এই চলে যাওয়া নিয়ে আসলেই কী লেখা সম্ভব!

অনু হোসেন এই স্বল্প জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বাংলাদেশের কবিতায় লোকসংস্কৃতি (১৯৪৭-৯৬)’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। দীর্ঘদিন সংবাদপত্রে কাজ করেছেন। ২০১০ সালে বাংলা একাডেমিতে কাজ শুরু করেন। সবশেষ একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগে উপপরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কবিতা প্রসঙ্গে : ১৯৪৭-৯৬, শিল্পের চতুষ্কোণ, বাংলাদেশের কবিতা : লোকসংস্কৃতির নন্দনতত্ত্ব, বোধ ও বাতি, শিল্পের তরঙ্গ অন্তরঙ্গ এবং জীবনী : আবদুল মান্নান সৈয়দ। সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে আবদুল মান্নান সৈয়দ রচনাবলি, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর টুনটুনির গল্প, গল্পমালা, জ্যোতির্ময় : সৈয়দ আকরম হোসেন সংবর্ধনাগ্রন্থ, অভিবাদন শহীদ কাদরী, সংস্কৃতিসাধক সনজীদা খাতুন (যৌথ), সমকালে রবীন্দ্রনাথ : সমকাল পত্রিকায় রবীন্দ্রচর্চা, এবং Bangla Academy English-Bangla Dictionry : Revised & Enlarged Edition (যৌথ)।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/সাইফ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়