ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

কথা বলা চন্দনা টিয়া

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ২৩ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কথা বলা চন্দনা টিয়া

শামীম আলী চৌধুরী: চন্দনা টিয়া আকারে কাকের চেয়েও বড়। টিয়া প্রজাতির মধ্যে চন্দনা সবচেয়ে বড় টিয়া। এর দৈর্ঘ্য ৫৩ সে.মি.। দেহ সবুজ। পুরুষের গলায় লাল মালা ও থুতনির নিচে কালো। বিশাল লাল ঠোঁটের শেষ প্রান্ত কমলা। চোখ লেবুর ভিতরের অংশের মতো মাঝে কালো। সবুজ দেহের ডানার দুই পাশে লাল রঙের দাগ আছে। মোট কথা দেখতে খুবই অসাধারণ সুন্দর একটি পাখি!

বাংলাদেশে ৭ প্রজাতির টিয়া পাখি দেখতে পাওয়া যায়। সবগুলোই আমাদের দেশীয় বা আবাসিক পাখি। অঞ্চল ভেদে এই পাখিগুলোর বিচরণ। বাসন্তী লটকন টিয়া, ফুলমাথা টিয়া ও মদনা টিয়া সবুজ বনে পাওয়া যায়। এরা লোকালয়ে আসে না। আর বাকিগুলো লোকালয়ে থাকে। এরা আবার গ্রীন ফরেস্টে তেমন যায় না। এই সাত প্রজাতির টিয়াই ফলভোজী। তবে চন্দনা টিয়া ফুল বেশি পছন্দ করে। সূর্যমুখী ফুল ও বীজ চন্দনা টিয়ার পছন্দের খাবার। এ ছাড়াও পলাশ ফুলের মধু ও পাঁপড়ি চন্দনার খাবারের অংশ। রঙ্গিন ফল চন্দনার বেশ প্রিয় খাবার।

 



ইংরেজিতে কেন এই পাখির নাম আলেকজেন্ডার প্যারাকিট রাখা হলো তার একটি কারণ আছে। ইতিহাসের পাতা থকে পাওয়া  যায় সম্রাট আলেকজান্ডার পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে এই পাখিগুলো ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেন, যেখানে এগুলো সম্ভ্রান্ত মানুষদের মধ্যে উচ্চমূল্যের শৌখিন পাখি ছিল এবং এগুলো তারা বড় খাঁচায় পুষত। তাই সম্রাট আলেকজান্ডারের নামানুসারে ১৭৬৬ সালে এই প্রজাতি টিয়ার নামকরণ করা হয় Alexandrine parakeet. বাংলায় চন্দনা। চন্দনার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সম্ভ্রান্ত বংশীয়, অথবা অভিজাত দেশোদ্ভুত। বৈজ্ঞানিক নামটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় লাতিন শব্দ psittacula মানে তোতা আর গ্রিক eu মানে সম্ভ্রান্ত বা ভালো এবং patria মানে বংশ অথবা পিতৃভূমি। সুতরাং সম্ভ্রান্ত বংশীয়। ফ্রেঞ্চ প্রাণিবিদ Mathurin Jacques Brisson প্রথমে একে Psittaca Ginginiana বা La Perruche de Gingi অর্থাৎ The Gingi's Parakeet বলেন ১৭৬০ সালে। যা কিনা দক্ষিণ ভারতীয় একটি শহর যেখানে একদা ফ্রেঞ্চদের ফাঁড়ি ছিল।

 



তৎকালীন সময়ে বন্দীদশায় এ পাখিকে খাঁচায় পুরে কথা শেখান হতো। জানা যায় যে যেসব পাখি বন্দীদশায় শিস দিতে শিখেছিল তারা পরবর্তীতে আর কথা বলতে পারেনি। সে আমলে সার্কাসের চাহিদা থাকায় এই পাখিকে ব্যবহার করে নানা রকম কসরত করিয়ে নেয়া হতো। ফ্রেঞ্চরা তৎকালীন পাখি শিকারীদের কাছ থকে জেনে ছিলেন যে অন্ধর অস্রবাদ উপত্যকার এবং গুজরাটের রাজপিপলা অঞ্চলের চন্দনা পাখি দ্রুত কথা শিখতে পারে। তাই তাদের চাহিদা ছিল বেশি। এই পাখির একটি বিশেষ গুণ হলো এর দুটো আঙ্গুল সামনে ও দুটো পিছনে, আর এই কারণেই এরা পা বা ঠোঁটের সাহায্যে যেকোনো জিনিস বেয়ে উঠতে পারে। আর একটি মজার ব্যাপার হলো, এরা মানুষের মতো খাবার বেলায় ডান বা বাম হাতি। বাংলায় এই পাখিকে হিরামন বা পাহাড়ি তোতা বা চন্দনা টিয়া বলা হয়।

বি. দ্র.: ছবিগুলো লেখক ঢাকার রমনা পার্ক থেকে তুলেছেন



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মে ২০১৯/হাসনাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়