ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মেঘনাপাড়ে শিশুদের ফুটবল উন্মাদনা

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ৩ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেঘনাপাড়ে শিশুদের ফুটবল উন্মাদনা

জুনাইদ আল হাবিব: ছোট্ট একটি মাঠ। একটি বল। নেই কোনো গ্যালারি। নেই কোনো আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। তবু তারা মেতেছে ফুটবল উন্মাদনায়। গোল লাইনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে ছোট ছোট কিছু লাঠি দিয়ে। কোনো রেফারি নেই। নিজেরাই নিজেদের রেফারি। গোল হলে তারাই নির্ধারণ করে গোল, না হলে না। এ নিয়ে যে কথা কাটাকাটি আর ঝগড়ায় মাথা ফাটাফাটি হয় না, তাও কিন্তু নয়। তবে বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, তাদের সুচিন্তিত মতামতে গন্ডগোল এড়িয়ে যায়।

বলটা কি মাঠের বাইরে গেল? বলটা কি গোলকিপারের? পেনাল্টি হলো নাকি হ্যান্ডবল হলো? তাদের মধ্যকার আলোচনায় এসব নির্ধারিত হয়। আর ধুমধামভাবে চলে ফুটবল খেলার আসর।

পেছনেই চলছে নদী ভাঙন। জোয়ারের পানিতে তাদের খেলার মাঠ ভাসে। কাদামাখা মাটিতেই জমে উঠে তাদের খেলার আসর। খেলতে খেলতে অনেকের গা কাদায় ভরে যায়, তবু ছাড় নয়। শেষ লড়াইটা চালিয়ে যায় তারা। ফুটবলপ্রেমী এসব শিশুদের অনেকেই কখনো স্কুলের বারান্দায় পা রাখেনি। বেশিরভাগই জেলে পরিবারের শিশু। পারিবারিক বাঁধা পেরিয়ে এদের কেউ কেউ খেলতে চাইলেও বেশি সময় খেলতে পারে না। টানাটানির সংসারে এদের অনেককেই স্বজনদের দু’মুঠো ভাত জোগানোর ভারটা কাঁধে নিতে হয়। তবু যতটুকু সময় পায়, ততক্ষণ দেখা যায়— নদীরপাড়ে ফুটবল উচ্ছ্বাসে মেতে থাকতে।

শহরে বসবাসরত শিশুদের অনেক ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলেও গ্রামের এ শিশুদের বেলায় ভিন্ন। সমুদ্রতীরবর্তী উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পশ্চিম চর লরেন্স মেঘনাপাড়ের শিশুদের কথা বলছি।

ছোট সীমানার মাঠের গণ্ডিতে খেললেও আন্তর্জাতিক অনেক রীতি ওদের রপ্ত আছে। ফলে ওদের খেলা প্রতিনিয়ত বড়দের চমকে দেয়। ওদের মধ্যে অনেকেই মেসি ভক্ত কিংবা রোনালদো বা নেইমারদের অনুসারী। খেলতে গিয়ে একজন আরেকজনকে মেসি, নেইমার, রোনালদো বলেই ডাকে। এ শিশুদের খেলা দেখার জন্য মাঠের চারপাশে বয়স্ক মানুষদের দেখা যায় দর্শকের ভূমিকায়। প্রিয় টিমকে সাপোর্ট দিতে অনেকেই উৎসাহ যোগানোর চেষ্টাও করেন।

খেলার এক ফাঁকে কথা হয় কাওছার, সবুজ, জামাল, মাহফুজের সঙ্গে। তারা বলে, ‘এখন কাজ নাই, তাই খেলতে আসছি। প্রতিদিন বিকালে আমরা খেলতে আসি। বল বিপক্ষ দলের কারো কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে খেলতে পারলে খুব ভালো লাগে। আর গোল দিতে পারলে তো কোনো কথাই নাই। তখন আরো ভালো লাগে। আমরা সবাই মিলেমিশে খেলি। এতেই আনন্দ।’


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৯/ফিরোজ/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়