ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যে দেশে বউ মেলে না

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে দেশে বউ মেলে না

ডেস্ক রিপোর্ট : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দক্ষিণ চীন সাগরের তীর ঘেঁষে প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম সীমান্তে রয়েছে ১৪০ কোটি মানুষের বিশাল আয়তনের দেশ চীন। চীন বিশাল জনসংখ্যার দেশ হলেও সেখানে রয়েছে বিয়ের জন্য নারীর সংকট।

দীর্ঘদিন এক সন্তান নীতিতে চলা এবং ছেলে সন্তান আকাঙ্ক্ষায় অবৈধ গর্ভপাতের কারণে চীনে নারী-পুরুষের অনুপাতে তারতম্য বিরাজ করছে। সেখানে নারীর তুলনায় বেড়ে গেছে পুরুষের সংখ্যা। দেশটিতে ৩ কোটি ৩৬ লাখ পুরুষ বেশি। এখন প্রতি ১০০টি মেয়ে শিশুর বিপরীতে জন্ম নিচ্ছে ১১৪টি ছেলে শিশু। অনেক পুরুষ একাকিত্ব ঘোচাতে নারীর আদলে তৈরি ‘স্মার্ট’ পুতুলের সঙ্গে জীবনযাপন করছে। 

চীন সীমান্তে অবস্থিত ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলো থেকে মাঝে-মধ্যে তরুণীরা হারিয়ে যায়। তাদের অধিকাংশই আর কখনো ফিরে আসে না। 

এই সব গ্রাম থেকে যে সকল তরুণীরা হারিয়ে যায়, তাদের অনেকের বয়স ১৩ বছরের নিচে। এই তরুণীদের চীনে পাচারের জন্য অপহরণ করা হয়। সেখানে বিয়ের জন্য পাত্রীর সংকট। ভিয়েতনামের তরুণীদের বধূ হিসেবে পেতে তাদের ক্রয় করে নেয় চীনের তরুণরা।  

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন প্লান ইন্টারন্যাশনালের মতে, চীনে এ ধরনের জোর করে বিয়ে বাড়ছে। গত এক দশক ধরে এমনটি চলছে। চীনে দশকের পর দশক ধরে এক সন্তান নীতি এবং ছেলে সন্তানকে গুরুত্ব দেওয়ায় দেশটির সমাজে নারী-পুরুষের সংখ্যায় বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।  

বছর খানেক আগে বিবিসির একজন ফটো সাংবাদিক প্লান ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ভিয়েতনামের এক পাহাড়ি গ্রামে যান, যেখান থেকে তরুণীদের অপহরণ করা হয়।

সেখানে ৫৬ বছর বয়সী এক নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, যাকে এই বয়সেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ভর করেছে। এখন তার একমাত্র আশা মৃত্যু আগের তিনি তার হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে একবার দেখতে চান। তার কিশোরী মেয়ে দুই বছর আগে গ্রাম থেকে হারিয়ে যায়।

 

এই মা যে দিন তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছিল, সেই দিনে স্থানীয় বাজারে মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রচার করেন। ঘটনার দিন তার মেয়ে স্থানীয় বাজারের দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিল, তখন দুইজন পুরুষ তাকে অনুসরণ করছিল। এরপর মেয়েকে আর পাওয়া যায়নি।

মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার পর এই মা ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হা-গিয়াংয়ে গিয়ে মেয়ের খোঁজ করেন। দালালরা মেয়েদের অপহরণ করে প্রাথমিকভাবে সেখানে নিয়ে রাখে, এরপর সীমান্ত পার করে চীনে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু সেই শহরের কেউ তার মেয়ের সন্ধান দিতে পারেনি। স্থানীয়রা তাকে জানান, মেয়েকে হয়ত চীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিয়ের পাত্রী হিসেবে বিক্রির জন্য। তিনি তার হারিয়ে যাওয়া মেয়ের ছবি ঘরের দেয়ালে টানিয়ে রেখেছেন।

এই ঘটনার পর ছোট এই পাহাড়ি গ্রাম থেকে আরো তিন তরুণীকে অপহরণ করা হয়েছে। সম্ভবত তাদেরও ঠিকানা হয়েছে চীনে। যেখানে তরুণরা তাদের কিনে নিয়ে বিয়ে করেছে।

সন্তান হারানো পরিবারের সদস্যরা সন্তানের ফিরে আসার আশায় সারাটা জীবন কাটায়। এই ‘অনিশ্চিত কষ্ট’ তাদের ধ্বংস করে দেয়। হারিয়ে যাওয়া সন্তানরা কোথায় আছে, তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে- জানতে অধীর আগ্রহে থাকে। এটা সর্বোচ্চ দুঃখবোধগুলো একটা। কিন্ত এর উত্তর মেলে না। কারণ এটার সমাপ্তি খুবই কম ক্ষেত্রে ঘটে।

এই পরিবারগুলোকে দীর্ঘ সময় অস্থির অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়। তারা বিভ্রান্তি আর আশা-নিরাশার দোলাচলে বাস করে। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করা হয় না।

চীনে মেয়ের সংখ্যা কম হওয়ায় অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা বাড়ছে। বিষয়টা এমন পর্যায় পৌঁছতে চলেছে যে, ২০২০ সালে অবিবাহিত যুবকের সংখ্যা দাঁড়াবে তিন কোটিতে।

দুই বছর আগের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চীনের গ্রামে ২০ থেকে ৪৫ বছরের প্রায় দুই কোটি অবিবাহিত যুবক রয়েছে, যাদের বিয়ের পাত্রী সংকট রয়েছে। তাড়াছা দেশটির গ্রামে বিয়ে অনুষ্ঠানে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এতে স্বল্প আয়ের যুবকদের বিয়ে করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুলাই ২০১৯/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়