ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বহুমাত্রিক লেখক আহমদ ছফা

হাকিম মাহি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২০, ২৮ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বহুমাত্রিক লেখক আহমদ ছফা

হাকিম মাহি : সৃষ্টিশীল লেখক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ, আদর্শনিষ্ঠ এবং প্রগতিপন্থি সংস্কৃতিকর্মী ছিলেন আহমদ ছফা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালে তার রচিত বই ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ তুমুল সাড়া জাগিয়েছিল। তিনি এ বইতে বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের কড়া সমালোচনা করেছেন। আহমদ ছফা দেখাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বুদ্ধিজীবীদের কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ ভাবনা।

তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী আহমদ ছফা ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলাধীন গাছবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০১ সালের ২৮ জুলাই মারা যান। জীবদ্দশায় সমাজে চলমান বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক দ্বন্দ্ব ও তার সমাধান নিয়ে কাজ করেছেন তিনি।

আহমদ ছফার শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামেই। চট্টগ্রামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সমাপ্ত করে ঢাকায় আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

বহুমাত্রিক লেখক হিসেবে তিনি গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, সমালোচনা, অনুবাদ, শিশুসাহিত্য রচনা করেন। তার লেখা ছিল সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সবাই ছিল তার লেখার উপজীব্য বিষয়।

আহমদ ছফার উপন্যাস- সূর্য তুমি সাথী (১৯৬৭), ওঙ্কার (১৯৭৫),    একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন (১৯৮৮), মরণবিলাস (১৯৮৯),   অলাতচক্র (১৯৯৩), গাভী বিত্তান্ত (১৯৯৫), অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী (আত্মজৈবনিক প্রেমের উপন্যাস, ১৯৯৬), পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ (১৯৯৬)।

তার প্রবন্ধের বইগুলো হলো- জাগ্রত বাংলাদেশ (১৯৭১), বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (১৯৭২), বাংলা ভাষা : রাজনীতির আলোকে (১৯৭৫), বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা (১৯৭৭), বাঙালি মুসলমানের মন (১৯৮১), শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৮৯), রাজনীতির লেখা (১৯৯৩), আনুপূর্বিক তসলিমা ও অন্যান্য স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ (১৯৯৪), নিকট ও দূরের প্রসঙ্গ (১৯৯৫), সঙ্কটের নানা চেহারা (১৯৯৬), সাম্প্রতিক বিবেচনা : বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (১৯৯৭), শতবর্ষের ফেরারী : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৯৭),   শান্তিচুক্তি ও নির্বাচিত প্রবন্ধ (১৯৯৮), বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র (২০০১), উপলক্ষের লেখা (২০০১), আমার কথা ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০২),    সেইসব লেখা (২০০৮) ও সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস (১৯৭৯)।

আহমদ ছফার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- জল্লাদ সময় (১৯৭৫), দুঃখের দিনের দোহা (১৯৭৫), একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা (১৯৭৭), লেনিন ঘুমোবে এবার (১৯৯৯) ও আহিতাগ্নি(২০০১)।

গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবেই আহমদ ছফার খ্যাতি সর্বজনস্বীকৃত। তার গবেষণার বিষয় ছিলো বাঙালি মুসলমান সমাজের গঠন, বিকাশ, জাগরণ ও প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। ছফার চিন্তার বিকাশ ঘটেছে দুটি উল্লেখযোগ্য রচনা দিয়ে; বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস এবং বাঙালি মুসলমানের মন।

আহমদ ছফা জীবনে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। এরমধ্যে লেখক শিবির পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি কর্তৃক সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার। কিন্তু তিনি এসব পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। মৃত্যুর একবছর পর ২০০২ সালে তাকে সাহিত্যে একুশে পদক (মরণোত্তর) দেয়া হয় ।

গুণী এই মানুষটিকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুলাই ২০১৯/হাকিম মাহি/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়