ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

১৫ আগস্ট বিশ্ব ইতিহাসে কলঙ্কিত দিন

আসেফ আয়মান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১০, ১৬ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৫ আগস্ট বিশ্ব ইতিহাসে কলঙ্কিত দিন

আসেফ আয়মান : ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে রচিত একটি দিন।  কেননা এই দিনেই ফরিদপুর জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

তার পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন।  ভোরের সুর্য যেমন দিনের কথা বলে তেমনই বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা জানলে বোঝা যায় কেন তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।

তিনি শীতের সময় একজন দুস্থ শীতার্ত ব্যক্তিকে দেখে তার গায়ের চাদরটি ওই মানুষটিকে দেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, স্বাধীনচেতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদী।

১৯৪৯ সালে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক হয়ে মুজিব আনুষ্ঠানিকভাবে তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।  সমাজতন্ত্রের পক্ষ সমর্থনকারী হিসেবে পূর্ব-পাকিস্তানিদের ওপর সকল অবিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। এজন্য বঙ্গবুন্ধকে বার বার সরকারের রোষাণলে পড়ে কারাবরণ করতে হয়। কিন্তু তিনি ছিলেন ইস্পাত কঠিন চিত্তের মানুষ, তাই কারাগারের চার দেয়াল তার সংগ্রামে বিন্দুমাত্র বাধা দিতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানিদের জুলুম অত্যাচার দেখে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা স্বায়ত্তশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন যাকে পাকিস্তানিরা বিচ্ছিন্নবাদী পরিকল্পনা হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মূলত ৬ দফা ছিল বাঙারির মুক্তির ন্যায্য দাবি। সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হয়ে দুই বছর জেলে থাকার পর ১৯৬৮ সালের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুসহ আরো ৩৪ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়। যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে পরিচিত। এরপর ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিচার শুরু হয়। কিন্তু ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ফলে সামরিক জান্তা তাকেসহ সকল নেতাকর্মীদের বিনাশর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

আরো পরে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার বিজয়কে মেনে না নিয়ে সরকার গঠনে গড়িমসি করতে থাকে। পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন বিষয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে মুজিবের আলোচনা বিফলে যায়।  বঙ্গবন্ধু বুঝে গিয়েছিলেন যে এভাবে সহজে তারা ক্ষমতা ছাড়বে না।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন, যা সমগ্র বাঙালি জাতিকে এক নব্য চেতনায় মোহিত করে। তার ভাষণে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার আহ্বান ছিল এবং এই ভাষণের মাধ্যমেই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র জনসাধারণকে এক কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে সমর্থ হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইতিহাসের কুখ্যাত অপারেশন সার্চ লাইট নামক গণহত্যার মাধ্যমে যুদ্ধের সূচনা করে।  গণহত্যার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্ত গ্রেপ্তারের কিছু সময় পূর্বেই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বেতারযোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং সমগ্র মুক্তিকামী মানুষকে যার যেখানে যা কিছু আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরার আহ্বান জানান।  এরপর সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয।

বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বহির্বিশ্বে পূ্র্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার দাবিকে অনেক দেশই সমর্থন করে। যার ফলে প্রতিবেশী দেশ ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, যুদ্ধকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন।  ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই যুদ্ধ।

৩০ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পাই স্বাধীন একটি ভূখণ্ড।  ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সামগ্রিক পুনর্গঠন, ভারতে অবস্হানরত কোটি শরণীর্থীর পুনর্বাসন, সংবিধান প্রণয়ন, নতুন নির্বাচন, মিত্র বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠানো, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় তার শাসনামলেরই অর্জন।  তিনি ছিলেন বাঙালি মুক্তির পথ প্রদর্শক, জাতির জনক, নতুন আশা ও ভালবাসার অন্য নাম।

কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় বিপথগামী কুলাঙ্গার সামরিক কর্মকর্তাদের হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান এই স্থপতি নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন।  যা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে আজও।  তাই পুরো বাঙালি জাতি দিনটিকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।

লেখক : বরিশাল জিলা স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ আগস্ট ২০১৯/আসেফ আয়মান

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়