ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হিমালয়ের পাখি ধলাটুপি লালগির্দি

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হিমালয়ের পাখি ধলাটুপি লালগির্দি

শামীম আলী চৌধুরী : ডিসেম্বর মাস ২০১৫ সাল। আমার এক আত্মীয়ের বিয়েতে ঠাকুরগাঁও যাওয়া। বরাবরের মতো ক্যামেরার ব্যাগ সঙ্গী। প্রচণ্ড শীত। ভোরবেলা ঠাকুরগাঁও পৌঁছলাম। সকালের নাস্তা শেষ করে ঘুমালাম। বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রিয়াজুল হাফিজ রাহির সঙ্গে দেখা। তার অভ্যর্থনা ও আলাপচারিতায় মুগ্ধ হলাম। পরদিন শুক্রবার থাকায় রাহি নিজেই কর্মসূচী তৈরি করলো আমরা রানীগঞ্জ বাঁধে যাব ছবি তোলার জন্য।

রাহির সঙ্গে খুব ভোরে মোটরবাইকে রওনা হলাম। সকাল ৮টার মধ্যে রানীগঞ্জে পৌঁছলাম। সেখানে আরো তিনজন ফটোগ্রাফারের সঙ্গে দেখা হলো। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার বোদার ফিরোজ আল সাবা একজন। সাবাকে পেয়ে আনন্দটা বেড়ে গেল। বর্তমানে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সাবা নিবেদিত প্রাণ।

সাবাসহ আমাদের সবার একটি পাখির ছবি তোলার জন্য রানীগঞ্জ আসা। কাঙ্ক্ষিত পাখিটিকে পেয়ে গেলাম। মাথায় সাদা টুপি, লাল ও কালো রঙে আবৃত দেহ। সুন্দর একটি পাখি! নাম লালগির্দি। স্থানীয়দের কাছে জানতে পারলাম প্রতিবছর এই সময় পাখিটি এখানে আসে। বাঁধের পানি যখন চলাচল করে তখন ঝর্নার মতো ঝিরিঝিরি শব্দ হয়। সেই শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাখিটি গান ধরে। সুরেলা কণ্ঠ। খুব চঞ্চল স্বভাবের পাখি। আমরা সবাই পাখিটির ছবি তুলে বুড়িবাঁধে চলে আসি।

ধলাটুপি লালগির্দি ১৩ সে.মি. দৈর্ঘ্যের পতঙ্গভুক পাখি। ওজন প্রায় ৩৩ গ্রাম। লালগির্দি লাল পেট ও কালো বুকের একটি পোকা শিকারী পাখি। এর বুক নীল-কালোসহ মাথায় সাদা টুপি। দেহের পিছন ও ডানা পুরাপুরি কালো। বুকের নিচ, পেট ও কোমর লালচে। লেজের প্রান্তদেশে প্রশস্ত কালো ফিতা থাকে। ঠোঁট কালো ও চোখ কালচে বাদামী। পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামী। পূর্ণ বয়স্ক পাখির দেহের প্রায় পুরোটা কালো ও লালচে।

ধলাটুপি লালগির্দি সাধারণত পর্বতের জলাধার, নদী, খাল, উঁচু পর্বতের তৃণভূমি, শিলাময় অঞ্চল ও বরফে ঢাকা এলাকায় বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় থাকে। এরা পানির ধার অথবা উঁচু পর্বতের তৃণভূমিতে খাবার খোঁজে। এদের লেজ ছড়ানো থাকে। মাটিতে চলার সময় অবিরাম লেজ ওঠানামা করে। খুব দ্রুত গতিতে চলাফেরা করে। খাবারের পিছনে ছোটাছুটির সময় গলা উঁচু করে ডাকে। মাটিতে ঠুকরে খাবার খায়। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে পোকা-মাকড় ও রসালো ফল। এরা হিমালয়ের স্থায়ী বাসিন্দা, সেখানেই প্রজনন করে। এদের প্রজননের সময় মার্চ থেকে আগস্ট মাস। প্রজননকালে শিলার নিচে বা শিলার মুখে গর্তে শেওলা, পাতা, ঘাস ও চুল দিয়ে বড় বাটির মতো করে নিজেরাই বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে পাখিটি ২-৩টি ডিম পাড়ে। মেয়ে পাখিটি একাই ডিমে তা দেয়। পুরুষ ও মেয়ে পাখি মিলে ছানা বড় করে।

ধলাটুপি লালগির্দি পাখি বাংলাদেশ বিরল পরিযায়ী পাখি। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জলপ্রপাত ও নদীতে মাঝে মাঝে দেখা যায়। এ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, চীন, নেপাল, মিয়ানমার লাওস ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বিচরণ রয়েছে। এরা বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। এই পাখিটি পৃথিবীতে একটি মাত্র প্রজাতি। বাংলাদেশেও এই এক প্রজাতি দেখা যায়।

বাংলা নাম: ধলাটুপি লালগির্দি

ইংরেজি নাম: White-capped water Redstart

বৈজ্ঞানিক নাম: Chaimarrornis leucocephalus

লেখক ছবিগুলো ঠাকুরগাঁও জেলার রানীগঞ্জ থেকে তুলেছেন


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯/হাসনাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়