ব্যস্ত পালবাড়ি মা আসছেন
জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন:
‘আমি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা
তুমি আমারি, তুমি আমারি
মম অসীমগগণবিহারী।’
মেঘে মেঘে বেলা ঘনিয়ে এলো। দরজায় কড়া নাড়ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত পুরোনো ঢাকার মৃৎশিল্পীরা। এতটুকু সময় নেই তাদের পাশ ফিরবার। ক’দিন পরেই শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ উৎসব- দুর্গাপূজা।
মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে মর্ত্যলোকে। পূজা শুরু হবে ৩ অক্টোবর মহাপঞ্চমী তিথিতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে। ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়া। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পীরা। পড়েছে প্রতিমা তৈরির ধুম। এবারও শাঁখারী বাজার, তাঁতীবাজার, পাতলাখান লেনসহ প্রতিটি মহল্লায় থাকছে একাধিক মণ্ডপ। ফলে পরম যত্নে মূর্তির অবয়ব তৈরিতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পীরা। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করেও সঠিক পারিশ্রমিক না পাওয়ার মনোকষ্ট তাদের রয়েছে। যে কারণে তারা বছরের অধিকাংশ সময় মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হন। তখন কাজ না থাকায় অলস সময় কাটাতে হয়। এ কারণে ইতোমধ্যে অনেকেই বাপ-দাদার পেশা বদলে অন্য পেশায় চলে গেছেন। তবে আর্থিকভাবে লাভবান না হলেও পৈত্রিক পেশা ধরে রাখতে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিমাশিল্পীরা।
পুরোনো ঢাকার কয়েকটি পালবাড়ি ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বাবা-দাদার আমল থেকে। প্রতিবছর তারাই মূলত প্রতিমাগুলো তৈরি করেন। কারিগরদের সঙ্গে পরিবারের বাকি সদস্যরাও তখন যুক্ত হন। প্রথমে কাঠ-বাঁশ দিয়ে ফ্রেম তৈরি করে খড় দিয়ে মূর্তির আদল তৈরি করা হয়। তার উপর দেয়া হয় কাদা-মাটির প্রলেপ। এভাবে একের পর এক প্রলেপ লাগিয়ে শুকাতে হয়। সব শেষে রং লাগিয়ে পোশাক ও গহনা পরানো হয়। কারিগরেরা বলছেন, প্রতিমা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশ।
প্রতিমা তৈরির কারিগরেরা বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর পারিশ্রমিক একটু বেশি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। প্রতিমা ভেদে ৩০ হাজার থেকে ১ লাখেরও বেশি টাকা মজুরি নিচ্ছেন তারা। প্রতিমা কারিগর গণেশচন্দ্র পাল জানান, তিনি মাসখানেক আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। এবছর তিনি ২০টি প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছেন। তিনি বলেন, এখনও আনেক কাজ বাকি আছে। তিন-চার দিন পর থেকে শুরু হবে ফিনিশিং-এর কাজ। পুরোনো ঢাকার শিমুলিয়া শিল্পালয়ের পল্টন পাল বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত দুই মাস আগে থেকে এবারও প্রতিমা তৈরিতে হাত দিয়েছি। এবার চার সেট প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। প্রতিমার মডেল ও কারুকাজের ওপর এর মূল্য নির্ভর করে। আমার এখানে যে সব প্রতিমা তৈরি হয় এর মূল্যে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। একসেট প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে কমপক্ষে ১৫ দিন। সেট হলো দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ এবং মহিষাসুর। অনামিকা ভাস্কর শিল্পালয়ের সুশীল নন্দী বলেন, এবার চার সেট প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। এর মধ্যে সর্বনিন্ম ৪০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা। কত দিন থেকে এই পেশায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে যখন ৮-৯ বছরের বালক ছিলাম তখন থেকেই হাতেখড়ি। এরপর যুবক বয়স থেকেই পেশাদার প্রতিমাশিল্পী আমি।
এবার ৮ অক্টোবর মহা বিজয়া দশমীর মাধ্যমে পূজা শেষ হবে। দুর্গাপূজা হলো হিন্দু দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন মাসের শুক্লাপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, প্রতিবছর মা দুর্গা পৃথিবীতে আসেন সমস্ত অশুভ ও অসুর শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য।
ঢাকা/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন