ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সিঁদুরে লাল মৌটুসি ঢাকায় কেন?

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ২ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিঁদুরে লাল মৌটুসি ঢাকায় কেন?

গত বছর মে মাসে রোজার দিন; শুক্রবার। সাহ্‌রির পর খুব ভোরে রমনা পার্কে গেলাম। পার্কে পৌঁছার পরই শুরু হলো বৃষ্টি। একটু পর থেমেও গেল। পুব-আকাশে দেখা গেল রোদ। পার্কের রাস্তা ধরে হাঁটছি। উদ্দেশ্য মৌটুসির কিছু ছবি তুলবো। পার্কের রঙ্গনফুলে গাছগুলোর কাছে পৌঁছলাম। বেশ কয়টি বেগুনী কোমর মৌটুসির দেখা পেলাম। হঠাৎ ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখে পড়লো লাল রঙের মৌটুসি। বুঝতে কষ্ট হলো না এটা সিঁদুরে লাল মৌটুসি।

ছবি তোলা বন্ধ করে খালি চোখে পাখিটির গতিবিধি লক্ষ্য করলাম। ভাবনায় পড়ে গেলাম লাল মৌটুসি ঢাকায় কেন? কৌতূহল হলো। সঙ্গে সঙ্গে বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফকে ফোন দিলাম। ওর ফোনটা বন্ধ থাকায় চিন্তায় পড়ে গেলাম। যদিও পরে ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে কিছু ছবি মেইলে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমি দিয়েছিলাম। ছবি দেখে ও জানাল- এটা Pin-tailed crimson sunbird হতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত নই। এরপর পাখি গবেষক ও প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক ড. আলী রেজা খান স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তিনি বললেন- Pin-tailed crimson sunbird বলে কোনো মৌটুসি নেই। এটা সিঁদুরে লাল মৌটুসি। স্যারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হলাম পাখিটি সম্পর্কে। যদিও এই পাখির ছবি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বহুবার তুলেছি। কিন্তু এতো কাছ থেকে তোলা ছিলো না।

সিঁদুরে লাল মৌটুসি Nectariniidae পরিবারের ১০ সে.মি. দৈর্ঘ্যের কালচে বাদামী ঠোঁট এবং একই রঙের পা বিশিষ্ট Aethopyga  গণের অন্তর্ভূক্ত একটি ছোট পাখি। ওজন ৬.৭ গ্রাম। পুরুষ ও মেয়ে পাখির পালকে পার্থক্য অনেক। পুরুষ পাখিটির মাথায় চাঁদি ও মালার মতো ডোরা আছে। মাথা ও কাঁধের অবশিষ্ট অংশ কালচে গাঢ় লাল রঙের। কোমর হলুদ। লেজ লম্বা ও সবুজ রঙের গলা ও বুক উজ্জ্বল লাল। পেট কালচে হলদে জলপাই রঙের। মেয়ে পাখির লেজ গোলাকার। পিঠ কালচে জলপাই। দেহের নিচ ফিকে জলপাই ও পেটের মাঝে হলুদের আভা। পুরুষ ও মেয়ে পাখির ঠোঁট, চোখ, পা ও আঙুল কালচে বাদামি। বিশ্বে এদের ১৫টি উপপ্রজাতি বিচরণ করছে।

সিঁদুরে লাল মৌটুসি ঘন সবুজবন, পাতাঝরা বন, ছোট ছোট ঝোপ-ঝাড় ও সুন্দরবনে বিচরণ করে। এরা একা থাকতে পছন্দ করে। মাঝে মাঝে জোড়ায় দেখা যায়। এরা বেশিরভাগ রঙ্গিন ফুলে বিচরণ করে। ফুল থেকে ফুলে উড়ে বেড়ায়। এরা উড়ে উড়ে খাবার খায়। এদের খাদ্য তালিকায় আছে ফুলের মধু, পোকা-মাকড় ও মাকড়সা। এরা কর্কশ কণ্ঠে ডাকে। বহুদূর পর্যন্ত এদের ডাক শোনা যায়।

এরা এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে প্রজনন করে। প্রজননের সময় ঝোপের ভিতর বা নিচু গাছের ডালে মাকড়সার জাল দিয়ে শেওলা শিকড়ের টুকরা দিয়ে ছোট ঝুলন্ত বাসা বানায়। দেখতে অনেকটা নাশপাতির মত। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে পাখিটি ২-৩টি ডিম পাড়ে। উভয়ে মিলে ডিমে তা দেয় ও বাচ্চা লালন-পালন করে।

এরা আমাদের দেশে সুলভ আবাসিক পাখি। ঢাকা, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব বনে পাওয়া যায়। এ ছাড়া পাকিস্তান, নেপাল, ভারত, শ্রীলংকা, ভুটান, চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ, পূর্ব  ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এদের দেখা যায়।

বাংলা নাম: সিঁদুরে লাল মৌটুসি

ইংরেজি নাম: Crimson Sunbird.

বৈজ্ঞানিক নাম: Aethopyga siparaja

লেখক ছবিগুলো ঢাকা রমনা পার্ক থেকে তুলেছেন

 

ঢাকা/হাসনাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়