ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুখের সাতকাহন

আশিক মাহমুদ আদনান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ৩ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুখের সাতকাহন

এই পৃথিবীর সবচেয়ে দামী জিনিস আসলে কী?

টাকা? সম্পদ? ক্ষমতা?

আমার কাছে দামী জিনিস হলো, কাজে লাগে এমন বুদ্ধি এবং উপদেশ। সেই উপদেশ কাজে লাগিয়ে সুখ খুঁজে পাওয়া।

আমি যখন ছোট ছিলাম, এই পৃথিবী ছিলো অনেক রহস্যময় একটা জায়গা। কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে অল্প কিছু মানুষ হয় সফল, আর তার থেকেও অনেক কম মানুষ হয় সুখি। বড় ডিগ্রি, ভালো রেজাল্ট দিয়ে চাকরি, চাকরি দিয়ে বেতন, বেতন দিয়ে লোন, লোণ দিয়ে গাড়ি বাড়ি বা ব্যবসা করে মানুষ হতে চায় সুখী।

এই জীবনে বুঝতে শেখার পর অনেক মানুষ আমাকে উপদেশ দিয়েছেন কিন্তু কাজে লেগেছে খুবই কম। আমেরিকায় পড়তে যাওয়া, সাবজেক্ট বেছে নেয়া, ইউনিভার্সিটি খুঁজে ট্রান্সফার করা, চাকরি করা, মাস্টার্স করা, দেশে ফিরে আসা- সব কিছুর পিছনে ছিলো অনেক ঠেকে শেখা বড় ভাইদের দেয়া সূক্ষ্ম উপদেশ।

একটা চারা গাছ যখন ছোট থাকে, তখন পানি আর সার দিলে একদিন পরিণত হয় অনেক বড় একটা বৃক্ষে। একজন ছোট মানুষ, যার জীবনে স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নেই, যার ছিলো মোটিভেশনের অভাব, তাকে সঠিক উপদেশ দিয়ে তার জীবনের ধ্রুবতারা খুঁজে দেয়ার কাজটা করেছেন অনেক বড়ভাই। গাছ কিন্তু মনে রেখেছে কে কে একদিন তাকে পানি দিয়েছিলো। এই প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়লো-

একদিন এক শিক্ষক ক্লাশে ঢুকে সব ছাত্রকে একটি করে বেলুন দিয়ে বেলুনে যার যার নাম লিখতে বললেন। সবার নাম লেখা হয়ে গেলে শিক্ষক বেলুনগুলো সংগ্রহ করলেন। বেলুনগুলো নিয়ে পাশের একটি রুমে রাখলেন। এরপর শিক্ষক সব ছাত্রকে ৫ মিনিট সময় দিয়ে তাদের নিজের নাম সংবলিত বেলুনটি খুঁজতে বললেন। সবাই হুড়মুড় করে ঐ রুমে ঢুকলো, হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলো, সবাই চিৎকার, হইহুল্লোর কাড়াকাড়ি শুরু করলো কিন্তু কেউই ৫ মিনিটে কারো বেলুন খুঁজে পেলো না; উপরন্তু অনেক বেলুন নষ্ট হয়ে গেলো।

এরপর শিক্ষক একইভাবে আর একটি রুমে আবার সব বেলুন দিয়ে বললেন এবার বেলুনগুলিকে রেন্ডমলি সংগ্রহ করতে, তার মানে একটা একটা করে বেলুন নেওয়া হবে এবং সেটাতে যার নাম লেখা থাকবে সেটা তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিযোগিতা নয়। এভাবে একের পর এক বেলুনগুলি ফিরিয়ে দেয়াতে মাত্র ৩ মিনিটেই সবাই নিজ নিজ বেলুন হাতে পেয়ে গেলো । এবার শিক্ষক সবাইকে বললেন, বেলুনগুলির মত ঠিক একই জিনিস ঘটে চলছে আমাদের জীবনে। আমরা আমাদের চারপাশে সুখ খুজে বেড়াচ্ছি, এটা না জেনেই যে আসলে আমাদের সুখটা কোথায়? আমাদের আসল সুখ নিহীত রয়েছে আমাদের কাছের মানুষ এবং চারপাশের মানুষদের কাছে। আমরা যদি প্রতিযোগিতা বন্ধ করে তাদের সুখগুলি ফিরিয়ে দিতে পারি, তাদের প্রাপ্য সুখগুলি বুঝিয়ে দিতে পারি, তাহলেই আমরা আমাদের সুখগুলো খুঁজে পাবো। আর এটাই মানব জীবনের মূল উদ্দেশ্য।

আমি বাকীটা জীবন এই গল্পের মত মানুষের সুখ খুঁজে দিয়ে কাটাতে চাই।

লেখক: সিনিয়র প্রভাষক, স্কুল অফ বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়