ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আমেরিকারও আগে বাংলায় বড়দিন পালন

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমেরিকারও আগে বাংলায় বড়দিন পালন

জব চার্নকের সমাধি

১৬৬৮ সাল। বাংলায় প্রথম বড়দিনের উৎসব পালন করেন জব চার্নক। নামটি কি চেনা চেনা লাগছে? হ্যাঁ, তিনিই কলকাতা নগরীর গোড়াপত্তন করেছিলেন। তিনিই প্রথম এই বাংলায় বড়দিন পালন করেন। অথচ খোদ মার্কিনমুলুকে অনেক আগে থেকেই বড়দিনের উৎসব পালন করা হলেও ১৮৭০ সাল থেকে দিনটি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ কারণে বলা হয়, আমেরিকারও আগে বাংলায় বড়দিন পালন করা হয়েছিল!

ইতিহাসবিদ ‘মিথু শিলাক মুরমু’র বর্ণনায় জানা যায়, বাংলায় ১৫৯৯ সালে প্রথম চার্চ তৈরি করেন ওরাই নামে এক পর্তুগীজ। জায়গাটি যশোর জেলার কালিগঞ্জ, অর্থাৎ সুন্দরবনের কাছে। এছাড়া বাংলায় কীভাবে বড়দিনের উৎসব প্রচলিত হলো এনিয়ে মজার ঘটনা প্রচলিত রয়েছে। একবার জব চার্নক যাচ্ছিলেন হিজলির উদ্দেশ্যে। পথে সুতানুটি গ্রামে আসার পর তার হঠাৎ বড়দিনের কথা মনে পড়ে! সেখানেই যাত্রাবিরতি করে তিনি বড়দিন উৎসব পালন করেন। বহরে ঘোষণা করেন সাধারণ ছুটি। সেই থেকে আমাদের দেশে বড়দিন পালিত হয়ে আসছে।

আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও ইসলাম ধর্ম প্রচলিত। সবার শেষে ১৬ শতকে পর্তুগীজদের মাধ্যমে এই অঞ্চলে খ্রিষ্টান ধর্ম এসেছে। তবে এখানে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ব্রিটিশরা। ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ব্রিটিশরা ক্ষমতা দখল করে নেয়। এরপর থেকেই মূলত ঘটা করে আমাদের এই অঞ্চলে বড়দিনের উৎসব পালন করার রেওয়াজ শুরু হয় এবং দিনটি ছুটির দিন হিসেবে পালনের প্রচলন হয়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ২০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মিসরে একদল মানুষ যিশুর জন্মদিন পালন শুরু করে। ২২১ খ্রিষ্টাব্দে মিসরের একটি দিনপঞ্জীতে লেখা হয়েছিল, মা মারিয়া ২৫ মার্চ গর্ভধারণ করেন। বিষয়টি রোমান ক্যালেন্ডারেও ছিল।  ক্যালেন্ডারে সূর্যদেবতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উৎসবের কথাও রয়েছে। ইতিহাস বলছে, ৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমে সর্বপ্রথম বড়দিন উদযাপন শুরু হয়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দেশে। ৩৫৪ খ্রিষ্টাব্দের রোমান ক্রমপঞ্জীতে ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন উল্লেখ করে দিনটিকে ‘যিশুর জন্মদিবস’ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকালে ৪৪০ সালে পোপ একে স্বীকৃতি দেন। পোপ জুলিয়াস প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিনের উৎসব করার কথা ঘোষণা করেন। সেই থেকে দেশে দেশে বড়দিনের উৎসব হয়ে আসছে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার, ক্রুসেডের আগে বড়দিনের উৎসব তেমন গুরুত্বপূর্ণ ও জাঁকজমকপূর্ণ ছিল না।

তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালিত হলেও রাশিয়া, জর্জিয়া, মিসর, আর্মেনিয়া, ইউক্রেন ও সার্বিয়ায় ব্যতিক্রম। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জন্য দেশগুলোতে ক্রিসমাস পালিত হয় ৭ জানুয়ারি। উত্তর ইউরোপীয়রা যখন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে তখন পৌত্তলিকতার প্রভাবে ক্রিসমাস শীতকালীন উৎসবের মতো পালিত হতো। ফলে সেখানকার এই উৎসবে শীত উৎসবের অনুষঙ্গ জড়িত। আবার এশিয়া মাইনরের দেশগুলোতে ৬ জানুয়ারি এই উৎসব পালন করা হয়। দিনটি যিশুর ব্যাপ্টিজম বা দীক্ষাগ্রহণ দিবস।

দেশ ভেদে ভিন্নতা থাকলেও ২৫ ডিসেম্বরই অধিকাংশ দেশে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। তবে এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। বাংলাদেশেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে, আনন্দে, উৎসবে দিনটি পালিত হবে। ঢাকাসহ দেশের প্রায় ৫০০টি গির্জায় উদযাপিত হবে বড়দিন উৎসব।



ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়