ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দ্বিজেন্দ্রনাথের উপন্যাসের প্রতিটি শব্দের শুরু ‘প’ দিয়ে (ভিডিও)

জুয়েল মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দ্বিজেন্দ্রনাথের উপন্যাসের প্রতিটি শব্দের শুরু ‘প’ দিয়ে (ভিডিও)

জাদুকর একেক সময় একেক জিনিস নিয়ে খেলা দেখান। তিনি খেলা শুরু করেন খুব সাধারণ কিছু দিয়ে! ধীরে ধীরে তিনি দর্শককে মোহাবিষ্ট করে নিয়ে যান রহস্যময় জাদুর দুনিয়ায়।

দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীও প্রথমে শুরু করেছিলেন সাধারণভাবে। লিখতেন একটি-দুটি বাক্যে। সেখান থেকে ছোট ছোট গল্প। গল্পগুলো একত্র করে তিনি লিখেছেন উপন্যাস। নাম ‘পতিংবরা’। উপন্যাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি শব্দ ‘প’ বর্ণ দিয়ে শুরু হয়েছে। যা বাংলা সাহিত্যে একেবারে নতুন। শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, বিশ্ব সাহিত্যেও এ ধরনের সৃষ্টকর্ম বিরল।

তার এই সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘পতিংবরা’ উপন্যাসটি বাংলা একাডেমি ২০১১ সালে প্রকাশ করে। এরপর অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ সালে জনপ্রিয় প্রকাশনী উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে।

‘পরীক্ষায় প্রথম প্লেস পেলে পরীক্ষার্থীরা পায় পরমানন্দ, পায় প্রথম পুরস্কার। পিতা-মাতা পান পরম প্রশান্তি, পুলকে পরমানন্দে প্রতিবেশীরা পেতে পারেন পলান্ন, পরমান্ন, পায়েসান্ন প্রভৃতি। প্লেস পাওয়া পড়ুয়ারা প্রতিভার প্রভাবে পয়সা-কড়িও পেতে পারে। পাবলিক পরীক্ষায় প্লেস পাওয়াতে প্রতিষ্ঠানটিও প্রশংসা-পদমর্যাদা পেতে পারে প্রয়োজনানুরূপ।’

কথাগুলো দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর পতিংবরা উপন্যাসের। প্রাঞ্জল ভাষায় ফুটে উঠেছে প্রতিটি বাক্যের অর্থ। প্রতিটি শব্দের পূর্বে ‘প’ বর্ণের ব্যবহার লক্ষনীয়। পতিংবরা উপন্যাসটি বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এক বিস্ময়কর সৃষ্টি! লেখকের প্রায় পঁচিশ বছর গবেষণার ফসল এই উপন্যাস।

জাদুকরের জাদুর ছোঁয়াতে মুগ্ধ হয় না এমন মানুষ খুব কমই আছে। তবে সেই জাদু যদি হয় ভাষা সাহিত্যে তাহলে তো কথাই নেই। একজন দক্ষ কথাশিল্পী খুব সহজেই পাঠককে সুনিপুণ শব্দের মাধ্যমে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে রাখতে পারেন। তেমনি একজন শব্দ-জাদুকর সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী। তিনি আরো রচনা করেছেন নাটক ‘পাঠশালা পলায়ন’, কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয়বর্ণেষু’ এবং গল্পগ্রন্থ বর্ণবৈভব’। তার ‘বর্ণবৈভব’ রচনাটি বর্ণ ও শব্দ বৈচিত্রে অলংকৃত বাংলা ভাষায় প্রথম গল্পগ্রন্থ।

তার এই বই সম্পর্কে নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রহমান রাজু বলেন, বর্ণ-শব্দ ও বাক্য বন্ধনে কারিশমাটিক মানুষ দ্বিজেন বাবু। তিনি তার প্রতিটি গ্রন্থে তার সুনিপুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তার নাটকসূমহ প্রকৃতি পরম্পরায় খচিত-নীতি-আদর্শে জারিত আর ভাষার শৌকর্যে শাণিত। কাব্যতত্ত্বের বিচারে সে নাটক কতখানি শিল্পতুল্য সে মানদণ্ডে তাঁকে হাজির না করাই সঙ্গত।

‘বর্ণবৈভব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, এমন গ্রন্থ লেখাও কি মানুষের পক্ষে সম্ভব? সত্যিই দ্বিজেন বাবু বিস্ময়ের বিত্ত নিমার্ণ করেছেন। 

জানতে চাইলে লেখক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী বলেন, ‘আমি মূলত একজন শিক্ষক। শিক্ষকতার সময় বিভিন্ন শব্দ নিয়ে গবেষণা করতে করতে দেখি একই বর্ণ দিয়ে শুরু অক্ষর জোড়া লাগিয়ে একটি বাক্য তৈরি করা যায়। আমি একের পর এক এমন বাক্য দিয়ে ছড়া, কবিতা, চিঠি, গল্প ও উপন্যাসও লিখে ফেললাম। মানুষের কাছে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য পৌঁছে দিতেই এ আয়োজন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একটি মহাকাব্য নিয়ে কাজ করছি। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ যেমন ‘রামায়ণ’ অনুসরণে, আমার কাব্য হবে ‘মহাভারত’ অনুসরণে। যদিও লেখা শেষ হয়েছে তবে আরেকটু সময় লাগবে। প্রকাশকের সাড়া পাচ্ছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো কোন প্রকাশনার সাথে এ বিষয়ে কথা হয়নি।

দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর জন্ম বেড়ে ওঠা দিনাজপুরে। পড়াশোনা করতে তিনি রাজশাহী আসেন। রাজশাহীর শিরোইল সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। তিনি জাতীয় পযার্য়ে দুই বার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী কতৃক স্বর্ণপদকসহ সম্মাননা লাভ করেছেন। ‘বর্ণবৈভব’ লেখার জন্য তিনি বর্ণের জাদুকর এবং ‘প্রিয়বর্ণেষু’ লেখার জন্যে কবিরত্ন উপাধিতে ভূষিত হন।

লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়