ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সিলেটে অসহায়দের জন্য ‘মানবতার ঘর’

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২০, ১ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিলেটে অসহায়দের জন্য ‘মানবতার ঘর’

খাদ্যদ্রব্য, পোশাক ও মাস্ক রাখা হয়েছে মানবতার ঘরে। ঘরের সামনেও কিছু খাদ্যদ্রব্যে প্যাকেট রাখা হয়েছে (ছবি : ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

ছবিটি পৃথিবীর উন্নত কোনো দেশের নয়, বাংলাদেশের সিলেট শহরের। সেখানে পাশ্চাত্যের আদলে চালু করা হয়েছে ‘মানবতার ঘর’। সেখান থেকে অসহায়- দুস্থ মানুষরা নিতে পারবেন প্রয়োজনীয় উপকরণ।

বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যখন সবাই একপ্রকার গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন, সে সময়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষজন। আমাদের দেশেও করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গত ২৬ মার্চ থেকে অনানুষ্ঠানিক লকডাউন চলছে। ফলে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে অনেকটা অসহায় জীবনযাপন করছেন। শ্রমজীবী মানুষ না পারছেন বাইরে যেতে, না পাচ্ছেন কাজ। মূলত, অসহায় ও দুস্থ মানুষদের জন্যই এ আয়োজন।

যদিও ‘মানবতার ঘর’ এর ধারণাটি বাংলাদেশে নতুন নয়। আমাদের দেশে এরকম শুরু হয়েছিল পোশাক নিয়ে, ‘মানবতার দেয়াল’ নামে। যেখানে মানুষ নিজেদের অপ্রয়োজনীয় পোশাক ঝুলিয়ে রেখে যান। যাদের প্রয়োজন তারা সেখান থেকে নিয়ে যায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীর উন্নত দেশে অনেক জায়গায় খাদ্যদ্রব্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাইরে রেখে দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে যে যার চাহিদামতো নিয়ে যাচ্ছে।

ঠিক এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সিলেট শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। উদ্যোগটি নিয়েছে ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি (গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা) সিলেট বিভাগীয় শাখা। সংগঠনটি নগরের হাজী হালু মাঝি জামে মসজিদের সামনে ‘মানবতার ঘর’ নামে একটি ব্যতিক্রমী ঘর তৈরি করেছে। মানবতার ঘরের ছোট ছোট তাকে খাবারের প্যাকেট রাখা হয়েছে। ঘরের সামনে নিচেও রাখা হয়েছে কিছু প্যাকেট। ঘরে আছে পোশাক ও মাস্ক। এই মানবতার ঘর থেকে যার খাদ্য ও বস্ত্রের প্রয়োজন তিনি প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পোশাক নিয়ে যেতে পারবেন।

মানবতার ঘরের দেয়ালে দেখা যায় ইংরেজিতে লেখা, ‘The House of Humanity’ এবং বাংলায় লেখা ‘মানবতার ঘর’। ঘরের চালে লেখা ‘অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দিবেন না। দরিদ্রকে ভালোবাসুন, ক্ষুধার্তদের খাদ্য দিন।’

প্রতি প্যাকেটে আছে- ১ কেজি চাল, ১ কেজি আলু, লবণ ৫০০ গ্রাম, তেল ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ ২৫০ গ্রাম ও মশুর ডাল ২৫০ গ্রাম।

বুধবার সন্ধ্যায় সংগঠনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ জুম্মান বলেন, প্রাথমিকভাবে নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডেই মানবতার ঘর চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নগরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে চালু করা হবে। যে কেউ এখানে খাবার ও কাপড় রাখতে পারবেন। আমরা হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এটা তৈরি করেছি। সমাজের বিত্তবান মানুষজন আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে প্রত্যাশা করি।

তিনি আরো বলেন, কেউ খাদ্য ও কাপড় (নতুন কিংবা পুরাতন) দিতে চাইলে বাসা থেকে সংগ্রহ করব। এজন্য মোবাইল ফোনে মানবতার ঘরের দেয়ালে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

মোহাম্মদ জুম্মান বলেন, যেহেতু করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে সেজন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। আর ত্রাণ বিতরণে বর্তমানে লোকসমাগম করা ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছোঁয়াচে এই রোগের আতঙ্কে অনেকেই বাসায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করতেও ভরসা পান না। সব মিলিয়ে কঠিন সময় যাচ্ছে। এই সময়ে এমন উদ্যোগ অসহায় মানুষের কাজে আসবে। ফেসবুকে সবাই  বিষয়টি একটি মহৎ উদ্যোৎ হিসেবে দেখছেন। অনেকেই ছবিগুলো শেয়ার করেছেন।

দুটি ছবি শেয়ার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত লিখেছেন, ‘এভাবে যদি সবাই এগিয়ে আসেন, তাহলে অনেক অসহায় মানুষ এখান থেকে খাবার প্যাকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। অনেকেই আছেন, যারা অন্যের কাছে হাত পেতে নিতে পারেন না। তাদের জন্য এ ব্যবস্থাটি খুবই বাস্তবসম্মত। মানবতা এগিয়ে যাক।’

 

ঢাকা/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়