ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে জগৎখ্যাত

ইকবাল মাহমুদ ইকু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৪, ২৭ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে জগৎখ্যাত

শূন্যে দড়ির ওপর দিয়ে ভয়-ডরহীন হেঁটে যাওয়া, এক চাকার সাইকেল চালানো, একজনের কাঁধে আরেকজন দাঁড়িয়ে উঁচু পিরামিড সৃষ্টি, আগুনের গোলা খেয়ে ফেলা, চোখ বন্ধ করে ছুড়ি চালানো অথবা বাঘ, সিংহসহ বিভিন্ন ভয়ঙ্কর প্রাণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে রুদ্ধশ্বাস সব খেলা দেখিয়ে দর্শকের চোখ ধাঁধিয়ে দেন সার্কাসের শিল্পীরা। পেশাটাই এমন- প্রতিটি খেলায় তাদের বিপজ্জনক কসরত দেখাতে হয়। নিতে হয় হাতের মুঠোয় প্রাণ! এ ধরনের বিপজ্জনক খেলা দেখিয়ে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন যারা শতাব্দীর সেইসব কিংবদন্তী সার্কাস শিল্পীকে নিয়ে এই ফিচার।  

লিলিয়ান লেটজেল
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিককে ধরা হয় সার্কাসের স্বর্ণ যুগ। এই সময়ে লিলিয়ানকে সার্কাসের সম্রাজ্ঞী মনে করা হতো। তিনি মাটি থেকে প্রায় পঞ্চাশ ফুট উঁচুতে দড়ির মধ্যে রিং বেঁধে বিভিন্ন ধরনের কসরত প্রদর্শন করতেন। বিস্ময়কর বিষয় হলো—তিনি একটি সার্কাসের চূড়ান্ত আসরে দুই পাশে দুই রিং ধরে এমনভাবে দেহটি চরকির মতো ঘুড়াচ্ছিলেন যে, এ সময় তার বাহু বারবার জয়েন্ট থেকে ছুটে যাচ্ছিল এবং পুনরায় জয়েন্টের মধ্যে এসে বসছিল। বিষয়টি সার্কাসের ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।

দি ওয়ালেন্ডাস
১৯২২ সালের দিকে দি ওয়ালেন্ডাস নামে সার্কাসের একটি দল বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাইসাইকেল, হিউম্যান পিরামিড, শূন্যে দড়ির ওপর হাঁটাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা তারা দেখাত। একদিন শূন্যে একটি দড়ি থেকে আরেকটি দড়িতে লাফিয়ে যাওয়ার সময় একজন মাটিতে পড়ে যান। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। সেই দৃশ্যের বর্ণনায় একজন সাংবাদিক বিস্ময়ে লিখেছিলেন: ‘এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেন তারা উড়ে যাচ্ছিলেন!’ সেই থেকে স্থানীয়রা তাদের ‘উড়ন্ত ওয়ালেন্ডাস’ নামে ডাকতে শুরু করে।

দ্য শুম্যানস
ডেনমার্কে শুম্যানস নামে একটি পরিবার ১৯১৪ সালে সার্কাসে যোগ দেয়। তারা পারিবারিকভাবে চমৎকার অশ্বারোহী ছিলেন। ঘোড়া নিয়ে তারা এতো চমৎকার খেলা দেখাতো যে, বিষয়টি ভীষণ প্রশংসিত হয়।  তারা এতোটাই খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন যে, ডেনমার্ক এবং সুইডেনের রাজ পরিবারের সদস্যরা তাদের খেলা দেখতেন। এমনকি ইংল্যান্ডের রানী কুইন এলিজাবেথ-টু তাদের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।  
অশ্বারোহীদের যত ধরনের পারফরম্যান্স ছিলো, তার মধ্যে পাউলিনা শুম্যানের নাম আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য। কেননা তিনি ঘোড়া দিয়ে সার্কাস প্রদর্শনীকে লাইট, মিউজিক এবং কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে আধুনিক রূপ দিয়েছিলেন।

কন কলেয়ানো
মাটি থেকে উঁচুতে বাঁধা দড়ির ওপর হাঁটা এবং সেই দড়ির ওপর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কসরত দেখানোর বিষয়টিকে  অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন কন কলেয়ানো। অস্ট্রেলিয়ার এই পারফর্মার এতোটাই চমৎকার খেলা দেখাতে পারতেন যে, তাকে সবচেয়ে বেশি বেতন দিতে হতো। ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত টানা চৌত্রিশ বছর একটানা দর্শককে আনন্দ দিয়েছেন তিনি। 

ওলেগ পপভ
ওলেগ পপভ রাশিয়ান ক্লাউন। তিনি ইউরোপ এবং আমেরিকাতে নিজস্ব স্টাইলের পারফরম্যান্সের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। কমেডি অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের সবসময় প্রফুল্ল রাখতেন। এছাড়া তৎকালীন বিভিন্ন অভিনেতাদের তিনি হুবহু নকল করতে পারতেন।

ম্যাবেল স্টার্ক
বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘসহ বিভিন্ন ভযঙ্কর  প্রাণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সার্কাসে খেলা দেখানোই ছিলো ম্যাবেল স্টার্কের কাজ। অতি সাহসী এই মহিলা কখনও কোনো ধরনের দুর্ঘটনার ভয়ে এই কাজে পিছপা হননি। এমনকি ১৯২৮ সালে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় তিনি পা ফসকে বাঘের নাগালে চলে যান। এ সময় তিনি বাঘের আক্রমণের শিকার হন। শরীরে তখন ৪০০টিরও বেশি সেলাই দিতে হয়েছিল। তারপরও তাকে দমানো যায়নি। কয়েক সপ্তাহ পর সেই বাঘ নিয়েই তিনি মঞ্চে খেলা দেখিয়েছেন।  

ক্লায়েড বেট্টি
প্রায় ৪৫ বছর একটানা বাঘ, সিংহকে তিনি খেলা শেখানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ কাজে তার ওস্তাদী ছিলো চোখে পড়ার মতো। তার হাতের ইশারায় প্রাণীগুলো বিভিন্ন খেলা দেখাতো। বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং আফ্রিকান হিংস্র প্রাণী প্রশিক্ষণে তার জুড়ি ছিলো না।

ডেভিড ল্যারিবল
বংশগতভাবেই ইতালিয় সার্কাসের সঙ্গে জড়িত এই ব্যক্তি আধুনিক ক্লাউনদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন। অন্যান্য ক্লাউনদের থেকে তিনি ছিলেন আলাদা। কেননা তিনি তার পারফরম্যান্স শুধু স্টেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতেন না। বরং গ্যালারি থেকে বিভিন্ন দর্শককে ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মজার পারফরম্যান্স করতেন। এবং  অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

দ্য ফ্লাইং ক্রেন্স
ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে সার্কাসে বিশেষ ধরনের এক শারীরিক কসরতের বেশ কদর ছিলো। এই খেলায় শূন্যে দুই পাশে দুজন মানুষ ঝুলে থাকতো। একপাশ থেকে একজন তৃতীয়জনকে অপরদিকে ছুঁড়ে দিতো। শূন্যে ডিগবাজি খাওয়া অবস্থাতেই অপরপ্রান্তের সেই ব্যক্তি তাকে ধরে ফেলতো। মূলত এটাই ছিলো খেলা। তবে এর মধ্যেও ভিন্নতা এনে দর্শকের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করা হতো। ফ্লাইং ক্রেন্স নামক এই রোমহর্ষক পারফরম্যান্সটি দর্শক সারি থেকে দেখতে মজার হলেও, পারফর্মারদের জন্য এটা ছিলো খুবই বিপজ্জনক।



ঢাকা/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়