একষট্টি বছরে তসলিমা নাসরিনের পা
ষাট পেরিয়ে একষট্টি পা দিলেন সাহিত্যিক ও চিকিৎসক তসলিমা নাসরিন। ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট তিনি ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
৬০তম জন্মদিনে তিনি ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিষয়ে ফেসবুকে তার স্ট্যাটাস থাকলেও এমন একটি দিনে তিনি নিজেকে নিয়ে কোনো কিছুই লেখেননি। তার ভেরিফায়েড পেজে নিজের কোনো স্ট্যাটাস না থাকলেও তাকে নিয়ে লেখা অন্যের স্ট্যাটাসগুলো শেয়ার করতে ভুল করেননি তিনি।
আজ জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ এবং ভারতের বহু ভক্ত ফেসবুকে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি এমন ৩১টি স্ট্যাটাস তার এই প্রিয় বুকে শেয়ার করেছেন।
লেখালেখির কারণে নব্বইয়ের দশকে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করে তসলিমা নারীবাদী ও ধর্মীয় সমালোচনামূলক রচনার কারণে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন।
তিনি তার রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ ও মানবাধিকারের প্রচার করায় বাংলাদেশের বহু মানুষের রোষানলে পড়েন। হত্যার হুমকি পেতে থাকেন। পরে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে বাধ্য হন। তিনি কিছুকাল যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন। বর্তমানে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়ে রয়েছেন।
তসলিমা সাহিত্য জীবন শুরু করেন তেরো বছর বয়স থেকে কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। কলেজে পড়ার সময় ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি ‘সেঁজুতি’ নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। ১৯৭৫ সালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তসলিমার কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ সালে ‘শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা’ নামক তার প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে ‘নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে’ ও ১৯৯০ সালে ‘আমার কিছু যায় আসে না’ কাব্যগ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়।
১৯৯৩ সালের মধ্যে ‘অতলে অন্তরীণ’, ‘বালিকার গোল্লাছুট’ ও ‘বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা’ নামক আরও তিনটি কাব্যগ্রন্থ; ‘যাবো না কেন? যাব’ ও ‘নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প’ নামক আরো দুইটি প্রবন্ধসঙ্কলন এবং ‘অপরপক্ষ’, ‘শোধ’, ‘নিমন্ত্রণ’ ও ‘ফেরা’ নামক চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়।
১৯৯৩ সালে ‘লজ্জা’ নামক তার পঞ্চম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে বাংলাদেশের মুসলিমদের দ্বারা একটি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা করা হয়। এই উপন্যাসটি প্রকাশের পর এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবী জানানো হয়।
‘আমার মেয়েবেলা’ নামক তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হলেও ২০০০ সালে এই বইয়ের জন্য তসলিমা দ্বিতীয়বার আনন্দ পুরস্কার জয় করেন। এর আগে ‘নির্বাচিত কলাম’ নামক তার একটি প্রবন্ধসঙ্কলনের জন্য ১৯৯২ সালে আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন।
২০০২ সালে তার দ্বিতীয় আত্মজীবনী ‘উতাল হাওয়া’ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। ২০০৩ সালে ‘ক’ নামক তার তৃতীয় আত্মজীবনী বাংলাদেশ উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই বইটি ‘দ্বিখন্ডিত’ নামে প্রকাশিত হলেও ভারতীয় মুসলিমদের চাপে পশ্চিমবঙ্গে বইটি নিষিদ্ধ হয়।
এই নিষেধাজ্ঞা ২০০৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল। ২০০৪ সালে ‘সেই সব অন্ধকার’ নামক তার চতুর্থ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
১৯৮২ সালে তসলিমা কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র প্রেমে পড়েন এবং গোপনে বিয়ে করেন। ১৯৮৬ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯০ সালে নাঈমুল ইসলাম খানের সাথে তার বিয়ে এবং ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ হয়। তিনি ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক বিচিন্তার সম্পাদক মিনার মাহমুদকে বিয়ে করেন এবং ১৯৯২ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। তসলিমার কোনো সন্তান নেই।
/টিপু/