ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

গবাদিপশুর এলএসডির লক্ষণ ও প্রতিরোধ

মুস্তাফিজুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গবাদিপশুর এলএসডির লক্ষণ ও প্রতিরোধ

সম্প্রতি গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) প্রথম দেখা দেয় চট্টগ্রামে। চলতি বছরের জুলাইয়ে কর্ণফুলী উপজেলার একটি খামারে ধরা পড়ে রোগটি। পরবর্তী সময়ে ছড়ায় অন্যান্য জেলায়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এরই মধ্যে ৪০টি জেলায় ছড়িয়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ৷ নারায়ণগঞ্জ, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, খুলনা, নওগাঁ, রাজশাহী ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। এলএসডি গরুর জন্য একটা ভয়ংকর ভাইরাসবাহিত চর্মরোগ। এই রোগের গড় মৃত্যুহার আফ্রিকাতে ৪০ শতাংশ।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের এনিমেল প্রডাকশন বিভাগের প্রধান ডা. মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘মূলত মশা ও মাছির মাধ্যমে ভাইরাসজনিত রোগটি সারা দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এছাড়াও লালা, দুধ, সিরিঞ্জ, রক্ষণাবেক্ষণকারী, আক্রান্ত গরুর সিমেন ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। রোগটিকে প্রতিরোধ করার জন্য গোট পক্স ভ্যাক্সিন প্রাণীর ওজনভেদে ৩ গুণ বেশি হারে দেয়া হলে রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া খামার ও বসতবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, আক্রান্ত গবাদিপশুকে সুস্থ গবাদিপশু থেকে আলাদা করা, সম্ভব হলে আক্রান্ত গবাদিপশুকে  মশারির ভেতর রাখা। এছাড়া গবাদিপশুর আক্রান্ত স্থানে টিংচার আয়োডিন, পভিসেপ অথবা ০.১ শতাংশ পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্বারা সকাল-বিকেল ধুইয়ে রোগটিকে প্রতিরোধ করা যায়।

গবাদিপশু পালনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গায় ৩ হাজার, সিরাজগঞ্জে ৮০ হাজার, বগুড়ায় প্রায় ৬ হাজার, যশোর জেলায় ৩৫ হাজার ৪৯৫, পাবনা জেলায় ৫ শতাধিক পশু, ঝিনাইদহ জেলায় ১ লাখ গরু, যশোর জেলায় ৩৫ হাজার ৪৯৫টি গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে।

চট্রগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজির শিক্ষক মো. রিদুয়ান পাশা বলেন, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ পশু চামড়ার গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়। এছাড়া দুধ উৎপাদন কমে যায়। গবাদিপশু দুর্বল হয়ে পড়ে৷ সর্বোপরি মৃত্যুর হার ১০-১৫ শতাংশ।

মূলত আফ্রিকায় একাধিকবার মহামারী আকারে দেখা গেলেও আমাদের দেশে গরুতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কখনো মহামারী আকারে দেখা যায়নি। একটা খামারকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দেয়ার জন্য এফএমডি বা খুরারোগের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর রোগ হিসেবে ধরা হয়। ১৯২৯ সালে আফ্রিকার ‘জাম্বিয়া’ প্রথম অফিসিয়ালি শনাক্ত হওয়া এই রোগ ১৯৪৩ সাল থেকে ৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

হাটহাজারী উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আবদুল্লাহ আল মাসুদ রোগটির লক্ষণ সম্পর্কে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর হয়, পরবর্তীতে আক্রান্ত প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুটি বা ফোসকা দেখা দেয়। শেষ পর্যায়ে কিছু গুটি বা ফোসকা ফেটে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। যেহেতু এটি ভাইরাসবাহিত রোগ, কাজেই এন্টিবায়োটিক এ রোগে কোনো কাজ করে না। এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে প্রাণী দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে, এন্টি পাইরেটিক, এন্টি হিস্টামিনিক, টপিকেল এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যায়।

তাছাড়া প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য প্যারাসিটেমল ট্যাবলেট ২টি, গুড় ও খাবার সোডা ৫০ গ্রাম, নিমপাতা বাটা ও লবণ ২৫ গ্রাম করে প্রতি লিটার পানিতে সকাল-বিকেল একত্রে মিশিয়ে ৭ দিন সেবন করলে লাম্পি স্কিন ডিজিজ থেকে উপশম পাওয়া যায়। রোগের প্রকোপ বেশি হলে রোগ উপশমের ব্যাপারে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সস বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার।


গবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়