ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ওসামাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন তার মা

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৩, ৪ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ওসামাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন তার মা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম বলেছেন, ওসামা ছিল 'ভালো ছেলে'। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার‘মগজধোলাই’ করা হয়েছিল। প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি।

ছেলের বিষয়ে এই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলেছেন আলিয়া ঘানেম। ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পরও সংবাদমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের চারটি ছিনতাই করা বিমান দিয়ে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার এবং ওয়াশিংটনে পেন্টাগন ভবন হামলা চালায় আল-কায়েদা। এ ঘটনায় দু হাজারের বেশি লোক নিহত হয়। ধারণা করা হয় ওসামা বিন লাদেনই এই আদেশ দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর এক অভিযানে ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন।



গার্ডিয়ানের সাংবাদিক মার্টিন চুলোভের নেওয়া সাক্ষাৎকারে ওসামার মা আলিয়া ঘানেম বলেন, শৈশব ও কৈশোরে ওসামা ছিলেন মুখচোরা স্বভাবের। বেড়ে ওঠার সময়টাতে তিনি ছিলেন ‘ভালো ছেলে’। জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়ার সময় ওসামা কিছু লোকের সংস্পর্শে আসেন এবং তারাই তার ছেলের মগজ ধোলাই করে। ওই সময় ওসামার বয়স ছিল ২০-এর কোঠায়।

ঘানেম বলেন, ‘ওসামা স্কুলে ভালো ছাত্র ছিল, পড়াশোনা ভালোবাসতো। সে তার সব টাকাপয়সা আফগানিস্তানের পেছনে খরচ করেছে। পারিবারিক ব্যবসার অজুহাত দেখিয়ে সে সন্তর্পণে কোথায় কোথায় চলে যেতো।’

আশির দশকে ওসামা রাশিয়ার দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আফগানিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। সেই ইতিহাসের রেশ টেনে ওসামার ভাই হাসান - যিনি এই সাক্ষাতকারের সময় উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলেন, - ‘প্রথম দিকে যারই তার সাথে দেখা হয়েছে সে-ই তাকে সম্মান করেছে। শুরুর দিকে আমরাও তাকে নিয়ে গর্বিত ছিলাম। এমনকি সৌদি সরকারও তাকে মর্যাদার চোখে দেখতো। তার পরই সে হয়ে উঠলো মুজাহিদ ওসামা।’

হাসান বলেন,‘আমার বড় ভাই হিসেবে তাকে নিয়ে আমি গর্ব করি। তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে আমি মনে করি না তাকে নিয়ে আমি গর্ব করি।’



ওসামা বিন লাদেনের বাবা হলেন মোহাম্মদ বিন আওয়াদ বিন লাদেন। ওসামার জন্মের তিন বছর পরই আলিয়া ঘানেমকে তিনি তালাক দিয়েছিলেন। আলিয়া পরে আবার বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্বামী মোহাম্মদ আল-আত্তাস লালন-পালন করেছিলেন ওসামাকে। আলিয়া জানান, তার দ্বিতীয় স্বামী ওসামাকে ভালোভাবেই গড়ে তুলেছিলেন।

ওসামার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের সর্বশেষ দেখা হয়েছে ১৯৯৯ সালে, আফগানিস্তানে। কান্দাহার শহরের বাইরে তাদের ঘাঁটিতে দুবার তারা দেখা করতে গিয়েছিলেন।

ঘানেম বলেন, ‘জায়গাটা ছিল বিমানবন্দরের কাছে, যেটি রুশদের হাত থেকে তারা দখল করেছিল। আমাদের পেয়ে সে খুব খুশি হয়েছিল। আমাদের প্রতিদিন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাতো। একটা পশু জবাই করে একদিন ভোজ দেওয়া হলো। তাতে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হলো।’

সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় উপস্থিত ওসামার সৎ ভাইরা তাদের মায়ের নীরবতা প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘৯/১১ এর পর ১৭ বছর হয়ে গেছে এবং তিনি পুরোটা সময় ওসামার ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিলেন। তিনি তাকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন এবং তাকে দোষী ভাবতে রাজী ছিলেন। যদিও তিনি তার আশেপাশের লোকদের এর জন্য দোষ দিতেন। তিনি কেবল তার ভালো ছেলের দিকগুলো জানতেন, যে দিকগুলো আমরা সবাই দেখেছি।’





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ আগস্ট ২০১৮/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়