ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আম্ফান : অবরুদ্ধ কলকাতা, এখনও আসছে মৃত্যুর খবর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০১, ২১ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আম্ফান : অবরুদ্ধ কলকাতা, এখনও আসছে মৃত্যুর খবর

বিভিন্ন জেলায় নিরাশ্রয় হয়েছেন বহু মানুষ

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পশ্চিমবঙ্গে কতোটা ভয়ানকভাবে আঘাত হেনেছে তা বুধবার রাতেই টের পাওয়া গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দিনের আলো ফুটতেই দেখা মিললো রাজ্যজুড়ে দানবীয় সাইক্লোনের রেখে যাওয়া দগদগে ক্ষতের! বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে থাকে একের পর এক মৃত্যুর খবর, ক্ষয়ক্ষতির খবর। কিন্তু সবটাই খণ্ডচিত্র।

নবান্ন সূত্রে খবর, গোটা রাজ্যের খুব অল্প অংশের ক্ষয়ক্ষতির ছবিই সামনে এসেছে এখনও পর্যন্ত। কারণ, বহু এলাকাই এখনও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ নেই। টেলিযোগাযোগ ব্যাবস্থাও সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত। সেই টুকরো টুকরো ছবিগুলো জোড়া লাগালে সামনে আসছে এক ভয়ঙ্কর ছবি। এর বীভৎসতা হার মানাচ্ছে আয়লার ধ্বংসলীলাকেও। খবর আনন্দবাজার অনলাইন।

আম্ফান ১০০ কিলোমিটারের বেশি বেগে কলকাতার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল আক্রোশে উপড়ে দিয়ে যায় অসংখ্য গাছ। কলকাতার উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম সমস্ত প্রান্তেই বড় রাস্তা হোক বা গলি— অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে উপড়ে যাওয়া গাছে। শহরের মধ্যেই দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিভিন্ন এলাকা। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপর কেসি দাস মোড় থেকে শ্যামবাজারের দিকে এগোলে, কয়েকশো মিটার অন্তর অন্তর পড়ে রয়েছে উপড়ে যাওয়া গাছ। রামমন্দিরের কাছে গাছের মতোই উপড়ে গিয়েছে রাস্তার পাশে ফুটপাথের একটি মন্দির।

প্রকৃতি নিজেই অবরুদ্ধ করেছে পার্ক স্ট্রিট

প্রায় সাড়ে ৯টা নাগাদ একের পর এক জায়গায় ইলেকট্রিক করাত দিয়ে বিশাল বিশাল গাছের গুঁড়ি কেটে পরিষ্কার করতে শুরু করেন দমকল, কলকাতা পুলিশ ও পৌরসভার কর্মীরা।

একই ছবি কলকাতা সংলগ্ন হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার শহরাঞ্চলে। গাছ পড়ে অবরুদ্ধ বিটি রোডের একটা বড় অংশ ও  যশোর রো়ড। সেই সঙ্গে এ দিন সকালেও জলমগ্ন রয়েছে এজেসি বসু রোড, ভিআইপি রোড, যশোহর রোডের বিভিন্ন অংশ।

রাজ্য পুলিশের এক কর্মকর্তা কলকাতা শহরের ছবি দেখিয়েই বলেন, ‘এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামাঞ্চলের অবস্থা কতটা ভয়ঙ্কর!’

জলমগ্ন কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বুধবার আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছিল সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে দমদম বিমানবন্দর এলাকার উপর দিয়ে আম্ফান বয়ে গিয়েছে ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে। সকাল হতেই দেখা যায়, বিমানবন্দরের টার্মিনালের অনেক কাচ ভেঙে গিয়েছে ঝড়ের দাপটে। কিন্তু আসল ক্ষতি হয়েছে রানওয়ে এবং বিমান রাখার হ্যাঙারে। রানওয়েতে পানি জমে আধডোবা হয়ে রয়েছে হ্যাঙারে থাকা বিমানগুলি। সেই ক্ষতির পরিমাপ করা এখনও সম্ভব হয়নি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।

রাজ্যজুড়ে এই লন্ডভন্ড দশার মধ্যেই সকাল থেকে আসতে থাকে একের পর এক মৃত্যুর খবর। বুধবার রাতে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, খুব প্রাথমিক পর্যায়ে গোটা রাজ্যে অন্তত ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সকাল হতেই খবর আসতে থাকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু হয় চার জনের। হুগলিতে এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী মৃত্যু হয়েছে চার জনের। শ্রীরামপুরে ও বাঁশবেড়িয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে তিন জন। চুঁচুড়াতে গাছ চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন এক নারী। বুধবার রাতেই হাওড়াতে মৃত্যু হয়েছিল এক কিশোরীর। বৃহস্পতিবার সকালে হাওড়ার ব্যাটরা এলাকায় জলমগ্ন রাস্তায় পড়ে ছিল বিদ্যুৎবাহী তার। সেই রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দুই বাইক আরোহী যুবক। নদিয়ার চাকদহে বাড়িতে গাছ পড়ে মারা গিয়েছেন দু জন। এ রকম মৃত্যুর খবর আসছে বিভিন্ন জেলা থেকে।


ঢাকা/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়