ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘পশ্চিমা ক্রেতাদের মুনাফার কারণে চাকরি হারাচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘পশ্চিমা ক্রেতাদের মুনাফার কারণে চাকরি হারাচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা’

ঢাকার পোশাক শ্রমিক ২৬ বছরের নাজমিন নাহারের দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে খাবার কেনার বা বাড়িভাড়া দেওয়ার মতো টাকা নেই। তাকে চলতে হচ্ছে ধার করা চালের ওপর দিয়ে।

দীর্ঘ কর্মঘণ্টা সত্ত্বেও ম্যাগপাই নিটওয়্যারে কাজ করে সন্তুষ্ট ছিলেন দুই সন্তানের জননী নাজমিন। মাসে ১৫০ পাউন্ড (১৫ হাজার ৭২৮ টাকা) আয় করতেন তিনি। এই ম্যাগপাই নিটওয়্যার ব্রিটিশ পোশাক ব্র্যান্ড বার্টন ও এইচএন্ডএমের  জন্য পোশাক তৈরি করে। মার্চের শেষ দিকে বাংলাদেশে লকডাউন শুরু হয় এবং কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। গত ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে কারখানায় যাওয়ার পর নাজমিন জানতে পারেন তার চাকরি নেই।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে নাজমিন বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছে, বিদেশি ক্রেতারা সব অর্ডার বাতিল করে দিচ্ছে। ফলে কোনও নতুন কাজ নেই। দুই মাস ধরে আমাদের বেতন নেই।’

তিনি  বলেন, ‘আমাদের বাসা ভাড়া বকেয়া পড়ে আছে। সব মুদিপণ্য আমরা বাকিতে কিনছি। বকেয়া টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত তারা আমাদের আর পণ্য দেবে না। বাড়িওয়ালা আমাদের জন্য এক বস্তা চালের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন এবং তাতেই আমরা বেঁচে আছি।’

অবশ্য এক বিবৃতিতে তৈরি পোশাক ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এম জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের ম্যাগপাই নিটওয়্যারকে দেওয়া কোনো কার্যাদেশ বাতিল করেনি।

এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘আমাদের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।’

মাতালানসহ অন্যান্য পশ্চিমা ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করে আল্টিমেট ফ্যাশন লিমিটেড। ঢাকা থেকে এক ঘণ্টা দূরের এ প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় কাজ করতেন রোজিনা বেগম।

তিনি জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কারখানার আরও ৩০০ কর্মীসহ তিনি চাকরিচ্যুত হন। সেখানে তার মাসিক বেতন ছিল আট হাজার টাকা।

ট্রেড ইউনিয়ন রোজিনাকে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাদের বলেছে, বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে কার্যাদেশ বাতিলের ফলে তাদেকে ছাঁটাই করতে হয়েছে।

রোজিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয় না থাকলে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাতে পারতাম। তবে এ করোনার কারণে আমরা শ্রমিকদের জড়ো করে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে পারিনি। যখনই চার-পাঁচজন শ্রমিক কারখানার সামনে জড়ো হয়েছে, তখনই তারা আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। আপনি তো একাই তীব্র প্রতিবাদ জানাতে পারবেন না।’

মাতালান বলেছে, ‘আমরা সেই পণ্যগুলো বিক্রি করতে না পারও সত্ত্বেও পথে থাকা কার্যাদেশগুলোর প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। কার্যাদেশ বাতিল এড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, তৈরি পোশাক ব্র্যান্ডগুলো ইতোমধ্যে ৩০০ কোটি পাউন্ডের কার্যাদেশ বাতিল করেছে।

সংগঠনটির সভাপতি রুবানা হক জানিয়েছেন, গত মাসে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছে। বিদেশের কার্যাদেশ না বাড়লে এই সংখ্যা আগামী ছয় মাসে বেড়ে পাঁচ লাখে পৌঁছবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় ইউরোপের দেশগুলোতে গত সপ্তাহে লকডাউন শিথিল হতে শুরু করেছে। পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছে। তবে এই বড় বড় পোশাক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময়ে বাংলাদেশর মতো দেশের পোশাক শ্রমিকদের পরিত্যাগ করেছিল। সম্প্রতি  বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলেছে। তবে এখনও বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া আদেশ ৮০ শতাংশ কম।

ওয়ার্কার্স রাইটস কনসোর্টিয়ামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরকাদিয়া, প্রিমার্ক ও এডিনবার্গ উলেন মিলের মতো যুক্তরাজ্যের তৈরি পোশাক ব্র্যান্ডগুলো এখনও বিদেশি সরবরাহকারীদের তাদের বকেয়া অর্থ সম্পূর্ণ পরিশোধ করেনি।

ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের কর্মী মেগ লিউস বলেন, ‘ব্র্যান্ডগুলোকে মহামারির সময় তাদের আচরণের জন্য জবাবদিহিতার মুখে দাঁড় করানো হয়নি। যে কার্যাদেশের বদলে কারখানাকে অর্থ দেওয়াটা দাতব্যমূলক আচরণ নয়। তারা কোটি কোটি মানুষের জীবনের বিনিময়ে তাদের মুনাফাকে রক্ষা করেছে।’

 

ঢাকা/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়