ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘ব্যবসায়ীদের লোভ মানুষকে বিপদে ঠেলে দিচ্ছে’

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১৬ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ব্যবসায়ীদের লোভ মানুষকে বিপদে ঠেলে দিচ্ছে’

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার-এর সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। কর্মরত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে। সম্প্রতি দুই দফায় গরুর দুধ নিয়ে গবেষণা করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। গত ২৫ জুন এক প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বাজার থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের ১০টি নমুনার সবকটিতেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। ওই গবেষণা সম্পর্কে সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী ও অতিরিক্ত সচিবের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ জুলাই আবারও একটি গবেষণায় একই সংখ্যক দুধের নমুনায় চারটি অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার কথা জানানো হয়। গবেষণা, সরকারি মহলের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাত প্রভৃতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন রাইজিংবিডি’র সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খালেদ সাইফুল্লাহ

রাইজিংবিডি: সম্প্রতি দুধ এবং আরো কিছু খাদ্যপণ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। কোন প্রেক্ষাপটে গবেষণা শুরু করলেন?

আ ব ম ফারুক: প্রেক্ষাপটটা তো নতুন নয়। আমাদের ডিপার্টমেন্টে কিন্তু আমরা ওষুধের পাশাপাশি খাদ্য, প্রসাধন এগুলোর মান নিয়েও কাজ করি। আমাদের ডিপার্টমেন্টে তিনটি বিষয় পড়ানো হয়- ওষুধ, খাদ্য ও প্রসাধন। আমাদের এখানে ওষুধ নিয়ে অনেকেই গবেষণা করেন, অনেকে খাদ্য নিয়ে করেন, অনেকে প্রসাধন নিয়ে করেন, আবার অনেকেই বিভিন্ন সময় সুবিধামত সবগুলো নিয়েই কাজ করেন। আমরা খাদ্যে ভেজাল নিয়ে কিন্তু অনেক দিন থেকেই কাজ করছি। ফরমালিনের বিষয়টা কিন্তু আমরাই প্রথমে শুরু করি। ৮০’র দশকের শেষ দিকে জেনারেল এরশাদ সাহেবের আমলে আমরাই প্রথম খাদ্যে ফরমালিনের অস্তিত্ব টের পাই। আমরা প্রথমে দুধের মধ্যে ফরমালিনের অস্তিত্ব খুঁজে পাই, এরপর পাই মাছে। রোকনউদ্দীন নামে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন যিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কাছে পরীক্ষা করার জন্য মাছ পাঠাতেন। আমাদের ফলাফলের ভিত্তিতে অনেকের বিচারও হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ফরমালিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, দেশে ফরমালিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়। ২০১৫ সালে ফরমালিন নিয়ন্ত্রন আইন হওয়ার পর থেকে আমরা আর এটা নিয়ে গবেষণা করি না। আমরা মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করে দেখি যে, দুধে-মাছে এখন ফরমালিন পাওয়া যায় কিনা। এখন অবশ্য ফরমালিনের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। ফরমালিন যে ক্ষতিকর বাঙালিকে এই মেসেজটুকু দিতে পেরে আমরা খুশি। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত এসব কাজ আমরা সবসময়ই করি। এগুলো কখনো প্রকাশ করি, কখনো প্রকাশ করি না। যখন জনস্বার্থে খুব জরুরি মনে হয় তখন আমরা এগুলো প্রকাশ করি।

রাইজিংবিডি: মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গবেষণার স্যাম্পল সঠিক ছিলো না, গবেষণাতে ত্রুটি ছিলো এবং গবেষণা প্রতিবেদন ‘পিআর রিভিউস’ জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার আগেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্য কী?

আ ব ম ফারুক: ‘পিআর রিভিউস’ জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিষয়ক একটি জার্নাল। এখানে প্রকাশের জন্য এখনো আমাদের বেশ কয়েকটি আইটেম অপেক্ষমান রয়েছে। আমরা যখন জরুরি মনে করি তখন পিআর রিভিউস জার্নালে প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করি না। ঘরে আগুন লাগলে আগে হাতের কাছে যে পানি থাকে সেটাই কিন্তু ঢালতে হবে, আপনি যদি ফায়ার ব্রিগেডে ফোন করে বসে থাকেন তবে তার মধ্যেই তো পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। তাই এগুলো হলো মতলবি কথাবার্তা। ‘পিআর রিভিউস’ জার্নালের কথা যারা বলেন তারা কি সেটা পড়েন? এটা তো বিজ্ঞানীদের পড়ার কথা। সাধারণ মানুষ জানবে না, সাংবাদিক জানবে না, কোম্পানি জানবে না, আমলারা জানবে না, পলিসি মেকাররা জানবে না, তাহলে জানবেটা কে? যারা গবেষণা করে তারাই জানবে। ধরুন, পেট্রোলে কেরোসিন পাওয়া গেছে, এটা তো তাদেরকে জানানো কিংবা পিআর রিভিউস জার্নালে ছাপা হওয়ার জিনিস না! দুধের মধ্যে জীবাণু পাওয়া গেছে এগুলো তো সায়েন্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না। আমাদের গবেষণা ফলাফল জনগুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটা তো বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো মৌলিক আবিষ্কার না। আমার ধারণা, এগুলো হলো না জেনে কথাবার্তা বলা এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করা। নিজের পক্ষে কিছু সাফাই গাওয়ার জন্য এ কথাগুলো ছড়ানো হয়েছে। কথায় বলে না- অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স! অনেকটা সেই রকমই বলা হয়েছে- ‘ওনার গবেষণায় ভুল আছে।’ গবেষণায় ভুল আছে তো আপনি একটা গবেষণা করেন না কেনো? গবেষণায় ভুল থাকতেই পারে। কেউ যদি ভুল ধরিয়ে দেয় তবে তা অবশ্যই স্বীকার করবো। তার আগে আপনি গবেষণা করেন, তারপর বলেন। আপনি ‘পিআর রিভিউস’ জার্নালের কথা বলে মানি না বলে হাঁটা দিবেন, এটা তো আমি মানব না। আমি দুধ খাচ্ছি ক্ষতিকর দুধ, পাস্তুরাইজড লেখা দেখে বিশ্বাস করে আমি কিনছি। কিন্তু আমি ভোক্তা, আমি তো টেকনিক্যাল টার্মস জানি না। পাস্তুরাইজড লেখা দেখে সরল বিশ্বাসে আমি দুধ কিনছি এবং না জ্বালিয়েই স্ট্র লাগিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলছি। আমরা জনগণকে এই কথাটাই বলার চেষ্টা করছি যে, আপনারা দুধ জ্বাল দিয়ে খান। আমরা তো বলছি না যে, আপনারা এটা বাদ দিয়ে বিদেশি দুধ খান। আমাকে ‘বিদেশের এজেন্ট’ তারা কেন বলবে? এত বড় ধৃষ্টতা তারা কোত্থেকে পায়? নিজেরা করবে অন্যায়; জনস্বাস্থ্যগত একটা অন্যায় তারা করছে, আবার ধৃষ্টতার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ‘বিদেশি কোম্পানির দালাল’, ‘এজেন্ট’- এ ধরনের অসৌজন্যমূলক, অভদ্র ভাষা ব্যবহার করছে! আমি খুবই ক্ষুব্ধ! বিদেশে হলে কোম্পানিগুলো ওই গবেষক দলের প্রশংসা করত, ধন্যবাদ দিয়ে একটা চিঠি পাঠাত। কিন্তু তারা এটা না করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই কথা বললো! আপনার প্রোডাক্ট-এর মধ্যে ক্ষতিকর জিনিস আছে, আপনি কারেকশন করলেই তো হয়।

রাইজিংবিডি: কোম্পানিগুলো কীভাবে কারেকশন করতে পারে?

আ ব ম ফারুক: বেশি কিছু করতে হবে না। আপনি দুধটা নেয়ার সময় পরীক্ষা করে নেন কিংবা জেনেশুনে নেন। যারা দুধ সংগ্রহ করে তারা তো জানে যে, কোন গরুকে কী খাওয়ানো হয়। দুধ সংগ্রাহক কিন্তু আকাশ থেকে আসেনি। সে জানে যে, গরুকে কে কী খাওয়ায়। যে খামারি গরুকে অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত ফিড খাওয়ায় তার দুধ না নিলেই হলো। কোম্পানির বাধ্যবাধকতা থাকলে এটা করা খুবই সহজ। কিন্তু তা না করে লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। সেই টাকা খরচ করে আপনার সংগ্রাহককে একটু প্রশিক্ষণ দেন! এলাকায় এলাকায় দুধ সংগ্রাহকদের এগুলো শেখান। আপনার ফ্যাক্টরির মেশিনপত্রগুলো পরিষ্কার রাখেন। তাহলেই তো সমস্যা মিটে যায়। আর দুধে ডিটারজেন্ট কীভাবে আসে সেটা এখনই বলতে পারছি না।

রাইজিংবিডি: গরুর ফিডের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক কেনো দেওয়া হয়?

আ ব ম ফারুক: এটি ভোক্তাকে ঠকানোর জন্য দেয়া হয় না, কিন্তু সে অজ্ঞাতসারে দিচ্ছে। সে মনে করে যে, অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে গরুর অসুখ হবে না। আমরা এটা খোঁজ নিয়ে জেনেছি। গবেষণার পর প্রায় দুই সপ্তাহ আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করেছি, তারপর আমরা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক দিলে গরু মোটাতাজা হবে- এটি একটি অবৈজ্ঞানিক বিষয়, এটি তারা ধারণা করে দিচ্ছে এবং খামারিরাও এটি কিনে খাওয়াচ্ছে। আমার বক্তব্য হলো, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের যারা কর্মকর্তা আছেন তারা বললেই হয় যে, তোমরা এটা দিও না। দ্বিতীয়ত, তারা আবার অ্যান্টিবায়োটিকসহ ফিডের পারমিশন দেন। কিন্তু যদি তারা বলেন যে, পশুর শরীর তো মানুষের শরীরের মত না এবং একান্তই অ্যান্টিবায়োটিক দিতে চান তাহলে পশুর শরীরে ব্যবহার করার জন্য নির্দিষ্ট যেসব অ্যান্টিবায়োটিক আছে সেগুলো ব্যবহারের পারমিশন দিক। যদিও আমি কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেরই পক্ষে না। তা না করে মানবশরীরের অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে টানিাটানি করেন কেন?

রাইজিংবিডি: সর্বশেষ গবেষণায় ৪টি অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে বলে আপনি জানিয়েছেন। এগুলো মানবশরীরের কী ক্ষতি করে?

আ ব ম ফারুক: মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে প্রবেশ করলে আমার শরীরের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো তো আর কাজ করবে না। কারণ, ওই অ্যান্টিবায়োটিক গরুর শরীরে যাওয়ার পরে তা সারা শরীরের মাংস এবং দুধে ট্রেস এমাউন্টে ছড়িয়ে পড়ছে। সেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে আমি মারা যাবো না, কিন্তু আমার শরীরের অ্যান্টিবায়োটিকটা প্রতিরোধী হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে আমি অসুস্থ হলে যদি ডাক্তার আমাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয় তবে তা আমার শরীরে কাজ করবে না। একটার পর একটা অ্যান্টিবায়োটিক যদি আমার শরীর থেকে অকার্যকর হয়ে যায় তবে তো অসুখ হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আমার কোনো কাজ হবে না। ইতোমধ্যেই ৭৩ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরে কাজ করছে না বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আমরা কি বাঁচতে চাই না? কিছু ব্যবসায়ীর লোভের কারণে তারা আমাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই অধিকার কে দিলো তাকে?

রাইজিংবিডি: সর্বশেষ পরীক্ষায় পাওয়া অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর মধ্যে মানুষের এবং গবাদিপশুর অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। গবাদিপশুর অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের কোনো ক্ষতি করবে কিনা...

আ ব ম ফারুক: না। কারণ আমি তো কখনো কোনো রোগের জন্য প্রাণীদেহের অ্যান্টিবায়োটিক খাবো না। যেহেতু গবাদিপশুর অ্যান্টিবায়োটিক এবং মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক আলাদা, তাই কোনো ডাক্তার আমাকে ভেটেরিনারি অ্যান্টিবায়োটিক দেবে না। শুধু মানবদেহের কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ওই একই এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারবে, কিন্তু গবাদিপশুর অ্যান্টিবায়োটিক তো মানুষের এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারবে না। কিন্তু আমি গরুর অ্যান্টিবায়োটিকও গরুর খাদ্যে মেশানোর বিপক্ষে।

 

রাইজিংবিডি: আগুনে ফুটালে কি অ্যান্টিবায়োটিক এবং ডিটারজেন্ট দূর হবে?

আ ব ম ফারুক: ফুটালে কোনো কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নষ্ট হয়। তবে সব অ্যান্টিবায়োটিক নষ্ট হয় না। ডিটারজেন্টও ফুটালে নষ্ট হয় না।

রাইজিংবিডি: তাহলে ভোক্তার তরফ থেকে সতর্কতামূলক কী করার আছে?

আ ব ম ফারুক: ভোক্তার তরফ থেকে কিছু করার নেই। এটার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারি সংস্থাকে। আমাদের সরকারি সংস্থাগুলো ঠিকমত কাজ করছে না, এটাই আমাদের বড় সমস্যা। গুটিকয়েক বাজে, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে আমাদের ভুগতে হচ্ছে। তারা কোম্পানির সঙ্গে আতাত করে এ কাজ করলে আমাদের মুশকিল।

রাইজিংবিডি: প্রতিমন্ত্রী এবং অতিরিক্ত সচিবের বক্তব্যের পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান গবেষণার দায় অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন। এ ব্যপারে কী বলবেন?

আ ব ম ফারুক: এর পেছনে কোনো একটা রহস্য আছে! এই রহস্যের ব্যপারে আমি কিছু বলতে চাই না। ওরা আমার ছাত্র ছিলো, এখন সহকর্মী। আমি এসব বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। ওরা বলেছে, ওদেরকে জিজ্ঞেস করেন তারা কেনো করেছে। আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেনো? এটা তো তারা বলবে।

রাইজিংবিডি: বর্তমানে গবেষণাকাজে বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের কতটুকু সহযোগিতা করছে?

আ ব ম ফারুক: আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার ব্যবহার করছি, কেমিক্যালস, ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করছি এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে একপ্রকার সহায়তা। আমাদের এই গবেষণাটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে করেছি, এখানে কোনো কোম্পানি কিংবা ব্যক্তির একটি টাকাও নেই।

রাইজিংবিডি: সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার অবস্থা কেমন দেখছেন?

আ ব ম ফারুক: আমাদের গবেষণায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো তো আমরা অত উন্নত গবেষণা করতে পারবো না!

রাইজিংবিডি: আপনারা করতে চান কিনা....

আ ব ম ফারুক: নিশ্চয়ই চাই। ২০ বছর আগে গবেষণার যে সুযোগ-সুবিধা ছিলো এখন তার থেকে অনেক উন্নত হয়েছে, আগামীতে আরো উন্নত হবে। কিন্তু এখন যেসব ফ্যাসিলিটিজ আছে তা একেবারে কম না। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট।

রাইজিংবিডি: গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বরাদ্দ তা কি পর্যাপ্ত?

আ ব ম ফারুক: সেটা তো পলিসি মেকারদের বিষয়। গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ুক, কিন্তু সেটার যেনো অপচয় না হয়। অনেক অপচয় হচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে প্রচুর। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য যে টাকা-পয়সা আসে সেগুলো ঠিকমত ব্যবহার হয় না। অনেকে গবেষণার নামে টাকা নিজের পকেটে ঢুকান। ইতোপূর্বে এ ধরনের ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

রাইজিংবিডি: তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় পিছিয়ে থাকার পেছনে শিক্ষকদের দায় থেকে যাচ্ছে?

আ ব ম ফারুক: অবশ্যই। একাউন্ট্যাবিলিটি জিনিসটা যদি চালু না করা যায় তবে গবেষণায় শুধু বরাদ্দ বাড়িয়েই লাভ হবে না। যিনি গবেষণা করবেন তারও একটা দায়বদ্ধতার ব্যাপার থাকতে হবে। এবং সেটা মনিটর করতে হবে। নয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গবেষণা খাতে অবশ্যই বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কিন্তু আর যেন তদন্ত কমিটি গঠন করতে না হয় সেজন্য সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আর তদন্ত কমিটিরও উচিত এ ধরনের ঘটনার রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা। গবেষণার টাকা আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কিন্তু কমিটির একটি মিটিংও হয়নি এমন ঘটনাও বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে।

রাইজিংবিডি: আপনার এই গবেষণার পর দেশের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আপনি কী বলতে চান?

আ ব ম ফারুক: আমি গবেষণায় যেটা পেয়েছি সেটাই সকলের সামনে তুলে ধরেছি। আমি চেষ্টা করবো আগামীতেও এভাবে তুলে ধরতে। এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত নেই। আমি একেবারেই একজন সাধারণ ছাপোষা শিক্ষক। জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই আমি এই গবেষণা করেছি। দেশের মানুষের এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। তবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য সকলকে সরব হতে হবে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুলাই ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়