ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গৃহিণী থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৮, ৮ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গৃহিণী থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জোসনা পারভীন (ছবি: শাহীন ভূঁইয়া)

অ্যাডভোকেট জোসনা পারভীন। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী। ১৯৮৪ সালে চার বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হন। এইচএসসি পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়। তখন বয়স ছিল ১৭ বছর। এইচএসসির পর বরিশাল মেডিক‌্যাল কলেজে চান্স পেয়েও পড়তে পারেননি। বিয়ে, সন্তান ও সংসারের কারণে থমকে যায় পড়াশোনা। সন্তান বড় হওয়ার পর সংসার সামলিয়ে আবারও পড়া শুরু করেন। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ২০০৯ সালে জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১৫ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে বিভিন্ন মামলায় আইনি লড়াই করে যাচ্ছেন গৃহবধূ থেকে নিজ পরিশ্রমে ওঠে আসা জোসনা পারভীন। নারী দিবস উপলক্ষে তার জীবনের গল্প শুনিয়েছেন রাইজিংবিডিকে। কথোপকথনে ছিলেন রাইজিংবিডির সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম।

পরিচয়

বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। জন্ম ১৯৬৯ সালে। জন্ম, পড়ালেখা,  বেড়ে ওঠা ঢাকায়। মগবাজার শাহনূরী মডেল হাইস্কুল থেকে ১৯৮৪ সালে চারটি লেটারসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করি। ৮৬ সালে এইচএসসিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়। বরিশাল মেডিক‌্যালে চান্স পেয়েছিলাম। বিয়ের কারণে মেডিক‌্যালে আর পড়া হয়নি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ে চান্স পেয়েছিলাম। সেখানেও পড়া হয়নি।

স্বামী এম এ হায়াত ইঞ্জিনিয়ার। আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে রাফায়েত রাকিব বিট্রিশ আমেরিকান টোবাকোতে কাজ করে। ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। 

আইন পড়ার গল্প

ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় খুব আগ্রহ ছিল। বিয়ের পর লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে একদিন আমার শশুর বললেন ‘তুমি ল পড়ো’। বাসার কাছেই কলেজ ছিল। বাংলা ল পড়তে গিয়ে আরেকজন পরামর্শ দিলেন ব্যারিস্টারি পড়ার। পরে ভুঁইয়া একাডেমিতে এলএলবি অনার্সে ভর্তি হই। দুই বছর পড়া শেষ করে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম। তখন আমার ছেলেরাও ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। একটা মজার কথা বলি, আমি যখন বিট্রিশ ল—তে অনার্স শেষ করি, আমার বড় ছেলেও প্রায় একই সময়ে অনার্স শেষ করে। তবে আমার ব্যারিস্টারি পড়া আর হয়নি।

সংসার সামলিয়ে যেভাবে পড়ালেখা

বিয়ের পর অনেকেই বলতেন পড়ালেখা করে কি করবে। আমার অতি আগ্রহ দেখে আমার শশুর-শাশুড়ি বললেন ‘ওর ঘর থেকে পড়ার টেবিল সরানোর দরকার নেই।’ কারণ আমি শাশুড়ির কাছে বলেছিলাম, শাড়ি-গহনার প্রতি আমার এতো আগ্রহ নেই। আমাকে শুধু পড়তে দিবেন। শশুর-শাশুড়ি আমার পড়ালেখায় সাপোর্ট করেছেন। তবে সম‌স‌্যা তো কিছু ফেস করতেই হয়েছে। কেউ বলতে পারবে না যে আমি কাজ বাদ রেখে বা ছেলের টেবিলে খাবার না দিয়ে ক্লাস করতে গেছি। এরকম হয়নি। আমি রাতে পড়তাম। যখন বিট্রিশ ল করি, তখন তো বিকেল বেলা ক্লাস ছিল। এজন্য সমস্যা হয়নি। তখন সন্তানরা স্কুলে পড়তো। স্কুলে সন্তানদের দিয়ে আসতাম, নিয়ে আসতাম। এর মধ্যে পড়ালেখা চলতো। আমি ম্যানেজ করেই পড়েছি।
 

জোসনা পারভীনের সঙ্গে কথা বলছেন রাইজিংবিডির সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক (ছবি: শাহীন ভূঁইয়া)

 

আইন পেশা শুরু

ল—শেষ করার পর ২০০৯ সালে আমি জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। এর মধ্যে বিট্রিশ ল পড়া চালিয়ে যেতে থাকি। ২০১৫ সালে হাইকোর্টে এনরোল লাভ করি। এদিকে আমি যখন ভুইয়া একাডেমিতে পড়তাম, তখন ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী স্যার আমাদের টিচার ছিল। একদিন স্যারের সাথে হাইকোর্টে দেখা করে বললাম, ‘আপনাদের চেম্বারে কাজ করতে চাই।’ স্যার চিন্তা করেছেন  বড় লোকের ছেলের বউ আসলে আমি নিজেকে শো করতে আসবো কি না। স্যারও বলছিলেন, সিনসিয়ার হতে হবে। ২০১৫ সালেই জয়েন করলাম শেখ অ‌্যান্ড চৌধুরী অ‌্যাসোসিয়েটসে। প্রথম থেকে সিনসিয়ার হয়ে কাজ করছি। সেই থেকে আছি এই চেম্বারে। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে বিভিন্ন মামলায় শুনানিতে অংশ নিচ্ছি। এ কথা না বললেই নয়, আমার সিনিয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস স্যার ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী স্যার অসাধারণ হেল্পফুল।

গৃহবধূ থেকে আইনজীবী

গৃহবধূ থেকে আইনজীবী বিষয়টি ভাবতেই ভালো লাগে। আমার দুই ছেলে যখন কোথাও মায়ের পেশা লিখতে হয়, তখন গৃহিণী না লিখে আইনজীবী লেখে। এটা নাকি তাদেরও ভালো লাগে।

আমার বড় ছেলে বিট্রিশ আমেরিকান ট্যোবাকোতে চাকরি করে। বিট্রিশ আমেরিকান টোবাকোর অনেক মামলা আমাদের চেম্বারে আছে। তারা যখন আমাদের ট্রিট দিল, ছেলের কলিগরা দেখে অবাক যে এটা রাফায়েতের আম্মু। এখন সন্তানরাও প্রাউড ফিল করে।

নিজের সম্পর্কে

আমি গান গাইতে পারি। আমি সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। আমার কাজ একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টে ব্যবহার হয়েছে। তারপরও আমি কিন্তু একজন রোটারিয়ান।

নারীদের জন্য পরামর্শ

কেউ যদি মনে করে বিয়ে হয়ে গেল শেষ। এটা ভাবা যাবে না। বিয়ে হয়ে গেলেই একটা মেয়ে শেষ হয়ে যায় না। আমি কিন্তু আইন পড়া শুরুই করলাম সংসার সামলিয়ে, সন্তানদের মানুষ করে। কিছুটা তো অ‌্যাডজাস্ট করতে হবে। সংসার সামলাতে গেলাম ওটার মধ্যেও সিনসিয়ারিটি থাকতে হবে। আমি এখন প্র্যাকটিস করছি তরুণদের সঙ্গে। জানার আগ্রহ, শেখার আগ্রহ থাকতে হবে।

** ‘যে হাতে রিকশার হ্যান্ডেল ধরেছি, সেই হাতে প্রাইভেট কার চালাব’

** ‘নারীর প্রতি সহিসংতা বন্ধে কাজ করছে সরকার’

**

** ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’

 

ঢাকা/মেহেদী/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়