ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৯০ টাকায় সারবে করোনা: ডা. তারেক আলম

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ১৬ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
৯০ টাকায় সারবে করোনা: ডা. তারেক আলম

‘‘উকুন এবং খোস পাঁচড়ার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ প্রয়োগে প্রাথমিকভাবে করোনার রোগী সুস্থ হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। অষ্ট্রেলিয়ায় ইঁদুরের লিভিং টিস্যুতে প্রয়োগে সুফল পাওয়ার পর দেশের একজন চিকিৎসক কয়েকজন করোনা রোগীর চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার করেছেন। তাতে সফলতাও পেয়েছেন।

‘তবে আইসিইউতে ভর্তি জটিল রোগীদের উপর এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়নি। অন্যদের বেলায় তিন-চার দিনের মধ্যে সফলতা এসেছে। যদি এই ওষুধে জটিল রোগীও সুস্থ হন তাহলে হয়তো ৮০ থেকে ৯০ টাকার ওষুধে সেরে উঠবেন করোনার রোগী।”

এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপে এমনটাই বলছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তারেক আলম। এছাড়া এ সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কথা বলেন এই বিশেষজ্ঞ।

কীভাবে এই ওষুধ প্রয়োগের পরিকল্পনা মাথায় আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘গত ২ এপ্রিল অস্টেলিয়ার মোনাস ইউনির্ভারসিটির ফার্মেসি বিভাগ একটি গবেষণা প্রকাশ করে। আমরা যে ওষুধ উকুন বা খোস পাঁচড়ার জন্য ব্যবহার করি, সেই ওষুধ তারা ইঁদুরের টিস্যুতে পরীক্ষা করেন। তাতে দেখা যায়-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভাইরাসটি চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার গুণ কমে যায়। এই ওষুধ ৪০ বছর ধরে এফডি এপ্রুভ।

‘এটা দেখার পর ভাবছিলাম বাংলাদেশ আমরা এটা ব্যবহার করতে পারি কি পারি না। যেহেতু বাংলাদেশ মেডিক্যাল নন কোভিড হাসপাতাল। সেকারণে আমাদের এখানে কোভিড রোগী আসার সুযোগ নেই। কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের দুই তিনজন চিকিৎসকের কোভিড পজেটিভ হয়ে যায়। হয়তো রোগী তথ্য গোপন করে ভর্তি হয়েছিলো।

‘তখন এই চিকিৎসকদের আমরা দুটি পরামর্শ দেই। এক হলো- হাইডোঅক্সিন ও অ‌্যাজিথ্রোমাইসিন খাওয়া বা কোভিডের যে চলমান চিকিৎসা সেটা গ্রহণ করা। যেহেতু কোভিডে নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই, সেক্ষেত্রে তাদের বলি- আপনারা এই ওষুধটি খেয়ে দেখতে চান কি না। খেলে হয়তো তিন-চার দিনে ভাইরাস মুক্ত হয়ে যেতে পারেন। তারা রাজি হওয়ায় তাদের ডক্সিসাইক্লিন ও আইভারমেকটিন দেওয়া হয়। চার দিন পর তাদের পরীক্ষা করা হলে করোনা নেগেটিভ আসে। কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও ছিল না। এদের কোভিড পজিটিভ হলেও কোনো প্রকার লক্ষণ বা উপসর্গ ছিল না।’’

তিনি বলেন, ‘‘এরপর আমাদের কয়েকজন নার্সের কোভিড পজিটিভ হয়। চিকিৎসকদের উপসর্গ না থাকলেও নার্সদের মধ্যে ডায়রিয়া-শ্বাসকষ্ট-কাশিসহ কোভিডের একাধিক উপসর্গ ছিল। আমরা তাদের কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেই। কিন্তু তারা কোভিড হাসপাতালে যেতে রাজি হয়নি। তারাও এই ওষুধে আগ্রহ প্রকাশ করে।

‘ডায়রিয়া-জ্বর-কাশির জন্য ওষুধের সাথে ডক্সিসাইক্লিন ও আইভারমেকটিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয় তাদের। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের উপসর্গ ৫০ শতাংশ কমে যায়। পাতলা পায়খানা, কাশি, জ্বর কমে যায় তাদের। তাদেরকে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছি। সামনেও আবার পরীক্ষা করব।”

ডা. তারেক আলম বলেন, ‘‘এছাড়া লালবাগ, মোহাম্মদপুরসহ হটস্পটগুলো থেকে আমাদের কিছু শিক্ষার্থী ফোন করে কয়েকজন করোনা পজিটিভ রোগীর খবর জানায়। একজনের শ্বশুরের পজিটিভ ছিল। মারা যাওয়ার পরে সে (শিক্ষার্থী) এবং তার শাশুড়ি দুই জনেরই পজিটিভ হয়ে যায়। ভয়ে তারা কেউই কোভিড হাসপাতালে যেতে চায়নি। পরে তাদের এই ওষুধ দেওয়া হয়। এভাবে ৬০ থেকে ৬৫ জনকে আমরা এই ওষুধ দিয়েছি।

‘জানেনইতো পরীক্ষা করানো এখন কতোটা কঠিন। আমরা অনেক অনুরোধ করিয়ে সাত থেকে ১০ দিনে মধ্যে ৪০ জনকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করাই। তাতে তাদের নেগেটিভ আসে। সবাই ভালো আছেন।”

ওষুধের ডোজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্যারাসিটামল, কাশির সিরাপ-ওষুধ এগুলো তো লেগেছেই। সাথে এই দুটি ওষুধ। আইভারমেকটিনের একটাই ডোজ প্রথমেই দিতে হয়। আর ডক্সিসাইক্লিন ১০ দিন।’

এই ওষুধের খুব ভালো এন্টিভাইরাল পোপার্টি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সার্স মহামারীর সময় এটা ব্যবহার করা হয়েছিলো। এটা ডেঙ্গুতেও কাজে লাগে। কিন্তু আমরা ইউজ করিনি।’

বাংলাদেশ মেডিক্যাল কোভিড হাসপাতাল না হওয়ায় আইসিইউতে ভর্তি রোগীকে এই ওষুধ দিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জটিল রোগী বা আইসিইউতি ভর্তি হওয়া রোগীদের উপর আমরা এটা পরীক্ষা করতে পারিনি। তবে সরকারি হাসপাতালেও আইভারমেকটিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ঢামেকে আজকে আমার এক সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ হলো। তারাও আইভারমেকটিন শুরু করেছেন। অ্যাপোলো, ইউনাইটেড হাসপাতালেও শুরু করেছে। আমারা আগে শুরু করেছি। তারা পরে শুরু করেছে।’

এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৫ কেজি ওজনের বেশি যে কাউকেই এই ওষুধ দেওয়া যায়। তবে গর্ভকালীন অবস্থায় এবং ১৫ কেজির নিচের শিশুদের দেওয়া যাবে না। এ ওষুধের খরচও একেবারেই কম। যদি এই ওষুধ সবার ক্ষেত্রে কাজ করে তাহলে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে চিকিৎসা শেষ হবে।’

অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘যারা যুক্তি তর্কে আসবেন তারা বলবেন, ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জনই তো ভালো হয়ে যায়। আর ২০ জনের সমস্যা হয়। অর্থাৎ ৮০ জনকেই কিন্তু হোম আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেয়। কিন্ত তারা কি বাসায় থাকছে? তারা কিন্তু বাইরে বের হচ্ছে। এই যে কমন স্প্রেড হচ্ছে, এটা যদি বন্ধ করতে না পারেন তাহলে কেমন করে ঠিক করবেন।

‘জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান মারা গেলেন। তিনি তো বাসায় থাকতেন। প্রফেসর মোকাররিম মারা গেলেন, তিনিও তো বাসায় ছিলেন। আমার মনে হয় একটু চিন্তা ভাবনা করে স্টাডিটা করতে হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হতে পারে সেদিক থেকে বড় জায়গা। এরপর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলায় এটা নিয়ে তাদের স্টাডি করতে হবে। আমি স্টাডি করিনি। আমি শুধু আমার ফাইন্ডিং বলছি।’’

তিনি বলেন, ‘আমি যাদেরই দিয়েছি, মানবতার খাতিরে দিয়েছি। তাদের প্রতি আমার উপদেশ ছিল- আপনারা সমস্যা বুঝলে হাসপাতালে চলে যাবেন। কিন্তু আল্লাহর রহমতে কাউকেই হাসপাতালে যেতে হয়নি। সবাই এই ওষুধে সুস্থ হয়েছেন। যাদের এই ওষুধ দেওয়া হয়েছে তাদের বয়স ২০ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে।’

খুব বেশি অসুস্থ কেউ ছিলো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপসর্গ দেখা দেওয়ার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে এই ওষুধ দিয়েও আমরা ফল পেয়েছি। দুজন রোগী আসছিলেন উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাতদিনের মাথায়। তারাও আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে গেছেন । খুব কাশি ও ১০৫ ডিগ্রি জ্বর ছিল। ওষুধ দেওয়ার পরের দিনই জ্বর কমে যায়, কাশিও কমতে শুরু করে। পরে তাদের দুটি টেস্টেই নেগেটিভ আসে।’

এ ব্যাপারে আপনার কোনো সুপারিশ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ট্রায়াল হবে সরকারিভাবে। আমার পক্ষে তো এতো কিছু করা সম্ভব না। আমার সুপারিশ হবে- যেহেতু এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই- ঠিক মতো কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে না, কোভিড টেস্ট করে পজিটিভ আসলে যাদের হাসপাতালে রাখছেন তাদের এবং যাদের বাসায় থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন, উভয়কেই এই ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অন্তত এটা দিয়ে এক হাজার বা ৫০০ রোগীকে তিন দিন পর পর পরীক্ষা করেন। দেখেন কি ফল আসে। যদি দেখেন ফল ভালো, তাহলে তো আমরা জেনেই গেলাম।’



ঢাকা/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়