আইলার মতো ভয়ঙ্কর হবে আম্ফান: শাহ আলম
আজ সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এর ভয়াবহতা নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, এটি সিডরের চেয়েও শক্তিশালী। আবার কেউ বলছেন এটি ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিড়ের মতো।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান কতোটা শক্তিশালী এবং ভয়ঙ্কর—এ বিষয়ে কথা হয় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আলমের সঙ্গে।
তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়টি সিডর, কিংবা ১৯৭০ বা ৯১ সালের বন্যার মতো ভয়ঙ্কর নয়। এর ভয়াবহতা আইলার মতো বা তার থেকে সামান্য বেশি হতে পারে।
শাহ আলম বলেন, খুব বেশি হলে আইলার থেকে হয়তো ২০ কিলোমিটার বেশি গতি হতে পারে। সিডরে সঙ্গে এর কোনও তুলনা নেই। সিডর ২২৩ কিলোমিটার উপকূলে আঘাত হেনেছিলো।
আম্ফানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সাগরে বাতাসের ২২০ কিলোমিটার গতিবেগ আছে। এটা বলা হয় সাগরের লোকদের জন্য। নেভি আছে, অনেক জাহাজ আছে, এটা তাদের জন্য। উপকূলের জনগণের জন্য যেটা, যে বেগে উপকূলে আঘাত হানবে। জনগণের জন্য এটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ।
৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কিভাবে মানুষ মারা গেছেন, তা যারা দেখেছেন তারাই বোঝেন। পানি এসে এক ধাপে মাটি উঠিয়ে নিয়ে গেছে। খেপু বরাতে বাধ ভেঙে রাঙ্গাবালী হয়ে পানি ভোলা হয়ে মেঘনা নদী দিয়ে পুরো দেশে ছড়িয়ে গেছে।’
‘৯১ সালের বন্যায় একইভাবে পানি এসেছে, বাতাস এসেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেরিবাধ উঠিয়ে নিয়ে ২০-৩০ ফুট পর্যন্ত গাছের মাথার ওপর মানুষ উঠিয়ে নিয়ে গেছে। সেখানে বড় বড় তেলের ট্যাংকার, হামজার মতো বড় জাহাজ ভেঙে ফেলেছে। কর্ণফুলী নদীর ব্রিজ ভেঙে ফেলেছে।’
শাহ আলম বলেন, সাগরে যতই গতি থাকুক না কেন, উপকূলে যখন আসবে ১৪০ কিলোমিটার গতির আম্ফানের সঙ্গে ৭০-৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের তুলনা করার কিছু নেই। কোনোভাবেই চিন্তা করা যায় না। সাইক্লোনগুলো একটানা ৬ ঘণ্টা একই গতিতে বাতাস ছিল। চারদিক থেকে বাতাস এসেছে।
৯১ সালের বন্যায় নদী পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একদিক থেকে পানি আরেকদিকে চলে গেছে। ৭০ সালেও একই অবস্থা। পানি শুকিয়ে গেছে। প্রথমে পানি ল্যান্ডের অংশে খালি হয়ে গেছে। সাগর দিয়ে পূর্বদিকে গিয়ে রাঙ্গাবালী হয়ে আবার পানি উপরে চলে এসেছে। তখন জোয়ার থাকায় অনেক পানি নিয়ে আসছে, যে কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে’।
সুন্দরবনের ওপর আঘাত হানলে ব্যাপকতা আরও কমে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইলার মতো অবস্থা হবে। আইলায় যেমন ১২০-১৩০ কিলোমিটার গতি ছিল। এতে ১৩০-১৪০ কিলোমিটার গতি হতে পারে। তবে রাতে বাড়তেও পারে। এটা ৮টার দিকে বুঝা যাবে। তাহলে হয়তো ১৬০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানবে।
স্থলভাগের যতো কাছাকাছি আসতে থাকবে গতিও ততো কমতে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, সব সাইক্লোনের উপকূলের কাছাকাছি আসলে গতি কমে না। কিন্তু এটার গতি কমে যাবে। আপার ল্যান্ড ওই ধরনের সাপোর্ট দিচ্ছে না যে গতি বাড়তে পারে। ঘূর্ণন গতিও কম আছে। আরো কিছু বিষয় আছে। সবমিলিয়ে বলা যায় গতি কিছুটা কমে যাবে।
১০ থেকে ১৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেটা বলা হচ্ছে তা নাও হতে পারে। তবে এটা নির্ভর করবে জোয়ার-ভাটার ওপর। আঘাতের সময় যদি জোয়ার থাকে, তাহলে পানি বেশি হবে আর ভাটা থাকলে বেশি পানি হবে না।
সাওন/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন