ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সিটিটিসির জালে ৫০ জঙ্গি

মাকসুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিটিটিসির জালে ৫০ জঙ্গি

মাকসুদুর রহমান : জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট গঠন করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এ ইউনিটটি প্রথমে শুধু ঢাকা মহানগরীতে কাজ করলেও এখন একে দেশব্যাপী অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

 

সিটিটিসি গঠনের পর গত আট মাসে এ ইউনিটটি বেশকিছু সফল অভিযান চালিয়েছে। এ সময় জঙ্গিনেতা মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানীসহ ৫০ সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাবাদে অর্থায়ন, সন্ত্রাসবাদে সহায়ক অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা এ ইউনিটের মূল উদ্দেশ্য। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, অভিযান পরিচালনা, মামলা রুজু, তদন্ত এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের পর্যবেক্ষণে রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জঙ্গিরা যেভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, এ কারণে ইউনিটের কাজের পরিধি বাড়ানো ও ধরন কিছুটা পাল্টানো হয়েছে। সিটিটিসির তৎপরতায় জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে।

 

ডিএমপির এ শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এ ইউনিটকে আরো শক্তিশালী করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে জঙ্গি দমনে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখা যাবে। 

 

সিটিটিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি জঙ্গিরা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় জঙ্গিরা আস্তানা গড়ছে কিংবা আত্মগোপন করছে। গুলশান, শোলাকিয়া, কল্যাণপুর, আজিমপুরসহ আরো কয়েকটি স্থানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর এসব তথ্য বেড়িয়ে আসে। ফলে জেলায় জেলায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এক অফিস আদেশে কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে সারা দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়।

 

অফিস আদেশে বলা হয়েছে, আইজিপির পূর্বানুমতিতে দেশের যেকোনো জায়গায় তিনটি শর্তসাপেক্ষে অভিযান চালাতে পারবে সিটিটিসি। এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর এলাকার বাইরে জঙ্গি ও উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি ও তল্লাশি অভিযান, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণ, জিম্মি উদ্ধারসহ বিশেষায়িত অভিযান ও আইনসংগত কাজ করতে পারবে সিটিটিসি। ঢাকার বাইরে অভিযান পরিচালনার সময় সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) বা মেট্রোপলিটনের কমিশনারকে অভিযানের বিষয়ে জানাতে হবে এবং অভিযান পরিচালনাসহ সিটিটিসি ইউনিটের অন্যান্য কাজের সময় দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিগুলো অনুসরণ করতে হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয়) ঢাকা মহানগরের বাইরে সিটিটিসি মোতায়েনের বিষয়টি সমন্বিত করবেন এবং তিনিই আইজিপিকে এসব বিষয়ে জানাবেন।

 

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় ইউনিটের সদস্যরা রাজধানীর বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও টঙ্গীতে একই রাতে একযোগে অভিযান চালায়। এর মধ্যে বাড্ডার সাতারকুল এলাকার জিএম বাড়ির একটি বাসায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের এক পুলিশ পরিদর্শক গুলিবিদ্ধ হন। ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান সংলগ্ন নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। গুলশান, কল্যাণপুর, আজিমপুরেও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন এ ইউনিটের সদস্যরা। এ ছাড়া জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন সিটিটিসির সদস্যরা। এক জায়গায় তারা একাধিকবারও অভিযান চালিয়েছেন জঙ্গিদের ধরতে।

 

সিটিটিসির চারটি বিভাগ আছে- কাউন্টার টেররিজম বিভাগ, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ। চারটি বিভাগই এখন জঙ্গিদের নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছে।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ইউনিটটি গঠনের পর থেকে ২১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্লগার হত্যা এবং জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করার পর এসব মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত এখনো চলছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সন্দেহভাজন ৫০ জঙ্গিকে। রাজধানীর গাবতলীর চেকপোস্টে পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা হত্যাকাণ্ডের তদন্তের মধ্যে দিয়ে এ ইউনিট মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।

 

সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার ছানোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘যেসব মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, সেগুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সবগুলো জঙ্গি সংশ্লিষ্ট। এ কারণে অনেক বিষয় ভাবা হচ্ছে। অনেক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। মূলত এসব কারণে বাকি মামলাগুলোর তদন্ত শেষ হয়নি।’ তবে শিগগিরই মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করা যাবে বলে তিনি আশা করেন।

 

২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬১১ জনবল নিয়ে সিটিটিসির যাত্রা শুরু হয়। এদের মধ্যে একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত ডিআইজি, চারজন ডিসি, ১০ জন এডিসি, ২০ জন এএসপি, ৪০ জন ইন্সপেক্টর আছেন। এ ইউনিটে ২০ থেকে ২২টি দল আছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/মাকসুদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়