ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘আসামিদের কাজ ভিন্ন ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য ছিল এক’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আসামিদের কাজ ভিন্ন ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য ছিল এক’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা পর্যালোচনায় জানা যায় আসামিরা যার যার স্থান থেকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করেছিল। কিছু আসামি পরিকল্পনায়, কিছু আসামি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে, কিছু আসামি নির্দেশনায় এবং কিছু আসামি জজ মিয়া নাটক সৃষ্টিতে ছিলেন। কিন্তু তাদের সকলের উদ্দেশ্য ছিল এক ও অভিন্ন। ওই এক ও অভিন্ন উদ্দেশ্য হলো শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হবে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল প্রায় ৩ ঘণ্টা যুক্তি উপস্থাপনের মধ্যে এ কথা বলেন।

দেশের প্রচলিত আইন ও দেশ-বিদেশের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত এবং ফ্যাক্টের আলোকে এদিন বেলা পৌনে ১২টায় পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের এ মামলার অস্থায়ী ট্রাইব্যুনালে তিনি যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।

ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন পৌনে ৩টা পর্যন্ত যুক্তি গ্রহণের পর বুধবার পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি করেন।

মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, মোবাইল কাদের মামলা, ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যাচেষ্টা মামলা, ভারতের আফসান গুরু, রাজিব গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী হত্যা মামলার নজির তুলে ধরে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামিরা একটি চেন অব কমান্ডের মধ্যে কাজ করেছে। আসামিরা যার যার স্থান থেকে কাজ করলেও তাদের সকলের উদ্দেশ্য ছিল এক ও অভিন্ন। ওই এক ও অভিন্ন উদ্দেশ্য হলো শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হবে। ষড়যন্ত্রের শুরুটা ছিল মোহাম্মদপুরের আলী নূর রিয়েল স্টেট থেকে, সেখান থেকে পিন্টুর বাসা। অবশেষে হাওয়া ভবন। হাওয়া ভবনই প্রধান। কারণ, হাওয়া ভবনই ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। সেখানের ইশারা ছাড়া সমরাস্ত্র দিয়ে হামলা সম্ভব নয়। তাই কোন আসামির কাজই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সবাই আইনের দৃষ্টিতে সমান অপরাধী। সবাই সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়া যোগ্য।’

তিনি বলেন, ‘আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে যে সকল ধারায় চার্জ গঠন করেছেন তা সঠিক আছে। তবে সংশ্লিষ্ট ধারা থেকে বেরিয়ে আদালত অন্য ধারায় সাজা দিতে পারবেন না-  আইনে এমন বারণ নেই।

তিনি আরো বলেন, ‘আসামি পক্ষ মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু এখানে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই। দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি হলো প্রথম স্বীকারোক্তির ধারাবাহিকতা। যা মুফতি হান্নান বিবেকের তাড়নায় মূল রহস্য উন্মোচন করে গেছেন। প্রথম স্বীকারোক্তিতেই ওই রহস্যের ইঙ্গিত ছিল। যা রাষ্ট্রপক্ষ বুঝতে পেরে অধিকতর তদন্তে নিয়েছিল মামলাটি।’

তিনি বলেন, ‘আসামি পক্ষ আসামিদের স্বীকারোক্তি এবং সাক্ষীদের মধ্যে মিল খুঁজে পান না বলে প্রশ্ন তোলেন। রাষ্ট্রীয় মদদে একটি হামলার ঘটনার সাক্ষী ও স্বীকারোক্তিকারীদের মধ্যে কতটা মিল দেখানো প্রয়োজন? আমরা রাষ্ট্রপক্ষ ২২৫ জনের সাক্ষী দিয়ে ১৭ জন আসামির স্বীকারোক্তি দিয়ে সকল আসামির বিরুদ্ধে সন্দেহের উর্ধ্বে অপরাধ প্রমান করতে পেরেছি। অন্য দেশে এ ধারণের অপরাধ করলে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচার হলে আসামিদের প্রকাশ্যে ফাঁসি হতো।’

সর্বশেষ এ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমরা মনে করি সন্দেহের উর্ধ্বে থেকে সকল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমান করতে সক্ষম হয়েছি। দেশবাসী এ মামলার ন্যায় বিচার চেয়ে তাকিয়ে আছে। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রর্থণা করছি।’

এছাড়া তিনি মামলায় জামিনে থাকা আসামিদের রায়ের পূর্বে জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের আবেদন করেন। 

উল্লেখ্য, মামলাটিতে ল’ পয়েন্টে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলেই ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়