ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘ঘুষের টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিলেন এনামুল বাছির’

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৪, ১৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 ‘ঘুষের টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিলেন এনামুল বাছির’

এম এ রহমান মাসুম: ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে তা আবার ফেরত দিতে চেয়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিলেছে এমন তথ্যের প্রমাণ। বরখাস্ত হওয়া উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের সঙ্গে এনামুল বাছিরের বেশ কিছু অডিও রেকর্ড পর্যালোচনায় এরূপ তথ্য বেরিয়ে আসে। দুদকের উর্ধ্বতন একটি সূত্রও বিষয়টি রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।

অডিও পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ফোনের কথোপকথনে ডিআইজি মিজানের লেনদেনের বিষয়ে কথোপকথনের এক পর্যায়ে এনামুল বাছির তাকে (মিজান) বলেন, ‘আপনি যদি চান তাহলে ওসব টাকা ফেরত নিতে পারেন।’অর্থ্যাৎ দুদকের অনুসন্ধানে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি পূর্বে ঘুষ হিসেবে টাকা নিয়েছিলেন, যা পরে তিনি ফেরত দিতে চেয়েছিলেন।

এদিকে ডিআইজি মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে মঙ্গলবার মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি। দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের নেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘খন্দকার এনামুল বাছির সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনের দায়িত্ব হতে অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুযোগ প্রদানের বিনিময়ে ৪০ লাখ টাকা উৎকোচ বা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।’

অন্যদিকে ডিআইজি মিজান সরকারি কর্মকর্তা হয়েও নিজের বিরুদ্ধে আনীত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় অর্থাৎ অনুসন্ধানের ফলাফল নিজের পক্ষে নেয়ার উদ্দেশ্যে খন্দকার এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ প্রদান করেন।

অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য গ্রহণ, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) বিশেষজ্ঞ মতামত ও পারিপার্শ্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে। যেখানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ডিআইজি মিজান বাজারের ব্যাগে করে কিছু বইসহ ২৫ লাখ টাকা এনামুল বাছিরকে দেওয়ার জন্য রাজধানীর রমনা পার্কে আসেন। সেখানে কথাবার্তা শেষে একসঙ্গে বেরিয়ে শাহজাহানপুর এলাকা হয়ে খন্দকার এনামুল বাছির ২৫ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি নিয়ে তাঁর বাসার দিকে চলে যান। একইভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি শপিং ব্যাগে করে আনা ১৫ লাখ টাকা নিয়ে রমনা পার্ক থেকে  আলাপ আলোচনা শেষে দুজন শান্তিনগর এলাকায় চলে যান। এ ঘটনার প্রযুক্তিগত প্রমাণের পাশাপাশি চাক্ষুষ সাক্ষীও রয়েছে।

এছাড়া বাছির তার ছেলেকে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে আনা-নেয়ার জন্য ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছে একটি গাড়িও দাবি করেন। এটা তিনি দুদকের বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন। তারা দুজনেই বেআইনিভাবে দুটি পৃথক সিম ব্যবহার করে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ওই সিম দুটি ডিআইজি মিজানের দেহরক্ষী মো. হৃদয় হাসান ও আরদালি মো. সাদ্দাম হোসেনের নামে কেনা।

অনুসন্ধান পর্যায়ে ডিআইজি মিজান, তার দেহরক্ষী হৃদয় হাসান, আডার্ল সাদ্দাম হোসেনকে, গাড়ি চালক সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অন্যদিকে এনামুল বাছিরকে তলব করা হলেও তিনি হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য জমা দেন।

ঘুষের বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য দুদকের তিন সদস্যের একটি টিম দায়িত্ব পালন করে। অন্যদিকে তিন কোটি সাত লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং তিন কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদের অভিযোগে স্ত্রী, ভাই, ভাগ্নে এবং ডিআইজি মিজানসহ পরিবারের চার জনের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুন মামলা করে দুদক। 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুলাই ২০১৯/এম এ রহমান/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়